শোকের মাস আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী চক্র। সকলের সাথে সেদিন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিহত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়া সংগঠক বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল।
আবার ১৯৪৯ সালের এই আগস্ট মাসের ৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধুর পুত্র হয়েও তিনি ছিলেন স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার যেমন পদচারণা ঠিক তেমনি তিনি ভূমিকা রেখেছেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ১৯৭২ সালে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আবাহনী ক্লাব।
১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে এদেশের নিয়মিত বাহিনীর সামরিক অফিসার্স কোর্স সম্পন্ন করেন এবং কমিশন লাভ করেন। যুদ্ধকালে তিনি প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সামরিক অফিসার হিসাবে নিশ্চিত জীবন না কাটিয়ে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমৃদ্ধ করতে কাজ করেন।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল "ছায়ানট"- সেতার বাদক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিখ্যাত ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। শুধু তাই নয়, তৎকালীন সাংস্কৃতিক সংগঠন "স্পন্দন"- এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
একটি সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতির সন্তান হয়েও তিনি আয়েশী জীবনযাপন করেননি। ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। স্বাধীন দেশের বাকি সকল নাগরিকের মতো সাধারণ হয়েই সকলের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিনি নিজে দেশের সকল ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সকল ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সাধারণের পাশে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য।
সেই সাহসী তরুণ শেখ কামালকে নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী বিরোধী শক্তি বিশেষ করে বাম সংগঠনগুলো ও তাদের কিছু পেইড পত্রিকা অনেক গল্পের ফাঁদ পেতেছিলেন। তাকে নিয়ে অনেক কল্পকাহিনী সাজিয়েছিলেন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু-কে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায়।
যে শেখ কামাল রাষ্ট্রপতির সন্তান হয়েও রাজনীতি করে হয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ একজন সদস্য। রাজনীতি করেছেন অন্য নেতাদের পেছনে। যিনি তার জীবদ্দশায় পিতার পরিচয়ের কোন অপব্যবহার করেননি। সেই শেখ কামালকে স্বাধীন দেশে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় যুক্ত ছিলো বিশেষ মহল। যাদের লক্ষ্য শুধুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করা। এবং তার কোন যোগ্য উত্তরসূরী যেন রাজনীতিতে থাকতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা।
বহুগুণে গুণান্বিত নির্লোভ শেখ কামাল মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ঘাতকের বুলেটের আঘাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হন। নিহত হবার অল্প কিছুদিন আগেই তিনি তার বৈবাহিক জীবন শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু-কে হত্যার পর তার পুত্র শেখ কামালের নামে অপপ্রচার ছিলো হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের মূল রসদ।
দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া, দেশের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া শেখ কামালের জীবনের অর্জন ও দেশের জন্য তার অবদানকে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়নি। উল্টো তাকে নিয়ে ছড়ানো হয়েছে কাল্পনিক গল্প। যা পরবর্তীতে মিথ্যা হিসাবে ও অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে সাজানো হয়েছিলো তা পরিষ্কার হয়েছে।
২৬ বছরের ছোট্ট কিন্তু ঐতিহ্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী আমাদের ট্র্যাজিক হিরো শেখ কামালের আজ ৭২তম জন্মবার্ষিকী। দেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি যে অবদান রেখেছেন দেশের মানুষ তা চিরকাল মনে রাখবে। এই মহান ব্যক্তির জন্মদিনে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এদেশকে নিয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার বোনের হাত ধরেই সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। আমরা সেজন্য কাজ করে যাবো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ।
বিবার্তা/এনকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]