নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে : আনু মুহাম্মদ
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৫
নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে : আনু মুহাম্মদ
‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো শিরোনামের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক জায়গায় নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে। হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম এখনো বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দাবি করেছেন তিনি।


২১ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো—এ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। গত ৫ অক্টোবর অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়েছিল, এ সংবাদ সম্মেলনে সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।


সংবাদ সম্মেলনে একে একে ১৩ দফা প্রস্তাব পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা। আনু মুহাম্মদ সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ব্যানারে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শিরোনামে আগামী শনিবার বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমাবেশ কর্মসূচি করা হবে বলে জানান আনু মুহাম্মদ।


আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শহীদ, নিখোঁজ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণ তালিকা এখনো কেন প্রকাশিত হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব এখনো গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ার ফলে এটা সম্পর্কে আমাদের সংশয় আছে যে কতটা হবে। ১৫ বছরে দায়ের হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি।...সংবিধান সংস্কার কমিশন অচিরেই একটা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থিত করবে। তার ভিত্তিতে জনমত যাচাই করে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা আমরা দেখতে পাব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। ইতিমধ্যে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’


আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এবারের দুর্গাপূজা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তবে দলগত সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজটা হয়নি। এটা না হওয়ার কারণে ভারতের মোদি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করছে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য প্রকাশ ও এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভারত কিংবা পতিত সরকারের পক্ষে এ সুযোগ নেওয়া সম্ভব হবে।


দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এ জায়গায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।


রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার দেশে বহু প্রাণবিনাশী প্রকল্প এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বহু ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সে আইন বাতিল হয়েছে। এ আইনের অধীন করা প্রকল্পগুলো বাতিলের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অগ্রসর হবে বলে আশা করি।’


‘গত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষা খাত সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে’ মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাজ দীর্ঘ মেয়াদে করতে হবে। কিন্তু এই সরকার এগুলো শুরু করতে পারে।’


জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুস্বাক্ষর করার পরামর্শ দেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এ কনভেনশন অনুযায়ী সরকার নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি আছে, বিশেষ করে সরকার পতনের কয়েক দিন আগে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার করা বিশেষ কিছু চুক্তি, সেগুলো এখনো প্রকাশিত হয়নি।


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশের নির্বাচনব্যবস্থার মধ্যে ধস নেমেছিল। ২০০৮ সালের পরে বাংলাদেশে কার্যত আর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে হাসিনা সরকার ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ অনির্বাচিত সরকার। নির্বাচনে যে ধস নেমেছিল, সেটাকে আবার মেরামত-সংস্কার করতে হবে। সেটা করে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা এ সরকারের দায়িত্ব। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সরকার উদ্যোগ নিতে পারবে বলে আমরা মনে করি।’


সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এবং সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বক্তব্য দেন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সীমা দত্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, গুম থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমাসহ অনেকে এতে উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com