
চলতি বছর দেশের ইতিহাসে গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলার বিষয়ে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষিখাতে ক্ষতি করছে, যেমন ২০২১ সালের তাপপ্রবাহে ২১০০০ হেক্টরের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে।
২ জুন, মঙ্গলবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) পরিচালিত ‘দ্য ইমপ্যাক্ট অফ হিটওয়েভস ইন বাংলাদেশ: হিস্টোরিক্যাল ট্রেন্ডস, প্রেজেন্ট চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ফিউচার প্রোজেকশন্স’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর উইমেন'স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫°০ অতিক্রম করতে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬°০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে চারটি প্রধান কারণ দায়ী: ১. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ২. জলবায়ুর পরিবর্তন, ৩. জীবাশ্ম জ্বালানি এবং শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি, যা গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, ৪. এল নিনো ইভেন্টের মতো মহাসাগরীয় প্রভাব। এই কারণগুলো সম্মিলিতভাবে সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
মানুষের পরিবেশবিরোধী কার্যকলাপের কারণে দ্রুত গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রতিদিন তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে পৃথিবী দ্রুত শীতল সময়কাল থেকে উষ্ণতর সময়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এই পরিবর্তনের ফলে প্রায়ই তীব্র তাপপ্রবাহ হচ্ছে, যেখানে দৈনিক সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে শীতকালে। যদি এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে উষ্ণ সময় মানবজাতির জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও আমরা এই প্রাকৃতিক অগ্রগতিকে থামাতে পারব না কিন্তু আমরা বিশ্ব উষ্ণনায়নে অবদান রাখে এমন কার্যকলাপগুলো কমিয়ে এবং কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধবভাবে কৃষি উৎপাদন ও নগর পরিকল্পনা করা এবং উচ্চ তাপমাত্রার হুমকি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য সেবা জোরদার করা। এই তীব্রতর অবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং তহবিল জরুরি।
গবেষণাটি বাংলাদেশে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরেছে। ২০০০ সালের শুরু থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ১০০০ ফারেনহাইট (৩৭.৮°০) তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। পূর্ববর্তী তথ্যানুসারে, ১৯৯৪, ২০০৪ এবং ২০২৪ সালে চরম তাপপ্রবাহ বাংলাদেশে আঘাত হানে। এই প্যাটার্নটি থেকে বোঝা যায় যে এই ধরনের তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা প্রায় প্রতি দশকে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, আমরা অনুমান করতে পারি যে ২০৩৪, সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে। যদিও এই অনুমানটি আমাদের প্রস্তুতির জন্য একটি প্রয়োজনীয় ধারনা প্রদান করে, যদিও জলবায়ু পরিবর্তন আগে থেকে অনুমান করা যায় না।
উক্ত গবেষণায় ১৯৭২ সাল থেকে তাপপ্রবাহের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে, যা সেই সময়ে প্রায় ২৭ ডিগ্রি ছিল। বর্তমানে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে, যার কারণে এই বছর ১৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০২৩ সালে তাপ্রবাহের কারণে প্রতিদিন ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে এই তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বয়স্কদের মধ্যে তাপজনিত কারণে ২০৮০ সালের মধ্যে প্রতি ১০০,০০০ জনে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইসর ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন "বাংলাদেশে বর্তমানে যে চরম তাপপ্রবাহ চলছে, যার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং ভবিষ্যতের তাপপ্রবাহের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]