'বাঙালির সংগ্রামে-সংকটে-সম্ভাবনায় জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে রবিঠাকুরের গান-কবিতা'
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ১৪:৫০
'বাঙালির সংগ্রামে-সংকটে-সম্ভাবনায় জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে রবিঠাকুরের গান-কবিতা'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কবি, বাংলার কবি। তাঁকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, তবে আমরা যেটা বলি বাঙালির জীবন ও মানব গঠনের অন্যতম কারিগর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি সত্তার বিকাশ ঘটাতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন, বাঙালি সমাজ গঠনেও ছিল তাঁর অশেষ অবদান, বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামে-সংকটে-সম্ভাবনায় তাঁর গান-কবিতা জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।


তিনি বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির যে কত ব‍্যাপ্তি ছিল তা তাঁর কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ কিন্তু তিনি তাঁর সারাটা জীবন আত্মনিবেদন করেছিলেন সাহিত্যচর্চায়। তিনি গান লিখেছে, সুর করেছেন, সুর দিয়েছেন, কবিতা লিখেছেন, নাটক লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে অনবদ্য প্রায় দুই হাজার গান, যা তিনি রচনা করেছেন। তাঁর মেধা, তাঁর সুরকৌশলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত।


২৫ মে, শনিবার সকাল ১১টায় আই ই বি রমনা মিলনায়তনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত "শ্রদ্ধার্ঘ সভা" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি এসব কথা বলেন।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত ছিলেন কবি, মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর কাব্যচর্চার শুরু। তাঁর মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছিল ৫২টি। বাঙালি সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীত স্রষ্টা হিসেবে। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি চারটি উপন্যাস, ১৫টি ছোটো গল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলি নামে ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এত বিশাল সাহিত্যকর্ম আরো কোনো কবি বা সাহিত্যিকের আমরা দেখি না। রবীন্দ্রনাথে ঠাকুরের গ্রন্থাবলি অনূদিত হয় ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, স্প্যানিশসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। চেক ভারততত্ত্ববিদ ভিনসেন্স লেনসি সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় তার গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ফরাসি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আন্দ্রে জিদ্, রাশিয়ান কবি আনা আখমাতোভা, প্রাক্তন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত একেভিত, মার্কিন ঔপন্যাসিক জোনা গেইল সহ অনেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করেন রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে।



তিনি বলেন, বিংশ শতাব্দীতে বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথে ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা দার্শনিক অমর্ত্য সেন রবীন্দ্রনাথকে এক "হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব" ও "গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিভিন্ন লেখনীর মধ্য দিয়ে সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে অন্যতম যেটি আমার মনে দাগ কেটেছিল, সেটা হলো 'তোতাকাহিনী', অনেকেই পড়ে থাকবেন।'তোতাকাহিনী'র মধ্য দিয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে শুধু মুখস্ত বিদ্যার দিকে না ঝুঁকে, জ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনার দিকে বেশি নজর দিয়েছিলেন।



হানিফ বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির একমাত্র কবি যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার 'নোবেল পুরস্কার' পেয়েছিলেন। আমাদের সমাজে এখন অনেক প্রচলিত আছে মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ, আমরা দেখি অনেকেই নিজেকে মাইক্রো ক্রেডিটের জনক হিসেবে দাবি করেন, কিন্তু মূলত এই মাইক্রোক্রেডিটের জনক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি যে নোবেল পুরস্কারের অর্থ পেয়েছিলেন তা দিয়েই কিন্তু তিনি প্রথম তাঁর এলাকার কৃষকদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছিলেন, তিনি এভাবেই কৃষকদের নিজ ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু তখনকার ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প আর এখনকার ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মধ্যে অনেক পার্থক্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু তাঁর ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে যেসব কৃষকরা ঋণ শোধ করতে পারেনি তিনি সেই কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘরের চালা খুলে আনেননি, গরু জোর করে নিয়ে আসেননি, মানসিক নির্যাতন করেননি। কিন্তু এখনকার সমাজে যে ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তক হিসেবে যিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। অনেকেই আসবাবপত্র বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে, কারো ঘরের টিনের চালা খুলে এনেছে, কারো গরু জোর করে নিয়ে এসেছে।




হানিফ আরো বলেন, ঢাকা শহরে এমন অনেক রিক্সাওয়ালা আছেন যারা এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন ঢাকায় এসে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পার্থক্য এখানেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন মহামান্যবর, তিনি শুধু কবি বা সাহিত্যিক ছিলেন না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে দেশপ্রেম ছিল, ছিল মানবপ্রেম। তাঁক সাহিত্যচর্চায় বারবার সেটা ফুটে উঠেছে। আমাদের জাতীয় সংগীত রচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। কী অপূর্ব এই সংগীত তিনি রচনা করেছিলেন। স্বাধীনতার এত বছর পর এসে ভাবি, এই যে আমরা গাই 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি', আসলেই কি আমরা এই বাংলাকে ভালোবাসি? দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না, ধর্মের দোহাই দিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে, বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এরকম করা হয়। কিন্তু জাতীয় সংগীতকে শুধু সংগীত হিসেবে ভাবার সুযোগ নেই, এর পেছনে রয়েছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই জাতীয় সংগীত। সেই জাতীয় সংগীত গাইতে আমাদের কুণ্ঠা! তাহলে কী করে আমরা এই দেশটাকে ভালোবাসবো? কী করে বলতে পারবো, এটা আমার দেশ, আমার মাতৃভূমি, আমি তোমায় ভালোবাসি? আমাদের ভালোবাসাটা কোথায়? স্বাধীনতার এত দিন পর এখনো অনেককে দেখি তাদের কাজে কথায় পাকিস্তানেপ্রেম, এই স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করে, এই স্বাধীন দেশে থেকে এখনো তাদের মধ্যে পাকিস্তান প্রেম! এত আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ, দেশের প্রতি আমাদের টানটা কোথায়?


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আজকে তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আমাদের এই দেশটাকে যেন আমরা ভালোবাসি, যে দেশটাকে আমরা মায়ের সাথে তুলনা করি সে দেশটাকে যেন আমরা ভালোবাসি। আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা সবকিছুই হোক দেশের জন্য। আজকে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।


অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।


এছাড়াও, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com