
জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান, প্রণোদনা সৃষ্টি, সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ছয় ক্যাটাগরির ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২১’ প্রদান করা হয়েছে।
২৩ মে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে শিল্প মালিকদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুস শহীদ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও নীতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে শিল্পখাতে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয় নিয়মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার’, ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’, ‘সিআইপি (শিল্প) কার্ড’, ‘প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রভৃতি পুরস্কার প্রদান করে আসছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের স্বীকৃতি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিজ নিজ কারখানায় উৎপাদিত পণ্যে উৎকর্ষ অর্জনে উদ্বুদ্ধ করবে। এই উদাহরণ অনুসরণ করে, নতুন শিল্প উদ্যোক্তারাও তাদের পণ্যের মান উন্নত করতে এবং বিশ্বমানের শিল্প স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে দেশে মানসম্পন্ন শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। গত ১৫ বছর ধরে এটি চালু থাকায়, দ্রুত শিল্পায়নের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজেই একটি বড় বাজার। অভ্যন্তরীণ বাজারসহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে আমাদের গুণগতমানের পণ্য উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। মন্ত্রী এ সময় বিশ্বমানের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের সততা ও আন্তরিকতার সহিত কাজ করার আহ্বান জানান।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় টাঙ্গাইল শাড়িসহ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ৩১টি পণ্যকে জিআই সনদ প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দশ বছর মেয়াদি ‘ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্প কারখানা স্থাপনসহ শিল্পায়নের ধারাকে বেগবান করতে ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২’ ও ‘এসএমই নীতিমালা-২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় শ্রমঘন শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে শিল্প খাতে গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, পুরানো কারখানার আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজ করছে। শিল্প খাতে উন্নয়নের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ শিল্পে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুস শহীদ বলেন, কৃষি উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য সত্ত্বেও আমরা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে। কম প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা এবং স্টোরেজের অভাবের কারণে আমাদের উৎপাদিত সবজি এবং ফলগুলির প্রায় 20-30% নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বছরে আমাদের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয় মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের মতো। অথচ এখানে সম্ভাবনা অনেক বেশি, কৃষিপণ্য রফতানি করে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। তিনি এ সময় দেশের কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ছয়টি, মাঝারিতে তিন, ক্ষুদ্র ক্যাটাগরিতে চার, মাইক্রো শিল্পে তিন, কুটির শিল্পে তিন এবং হাই-টেক ক্যাটাগরিতে একটিসহ মোট ২০টি প্রতিষ্ঠান।
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে ইকোটেক্স লিমিটেড, প্রাণ ডেইরী লিমিটেড ও মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড, ২য় হয়েছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, যৌথভাবে ৩য় হয়েছে স্লোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড।
মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, ২য় হয়েছে বসুমতী ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড ও ৩য় হয়েছে এপিএস এ্যাপারেলস লিমিটেড।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স ও কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, ২য় হয়েছে রংপুর ফাউন্ডী লিমিটেড এবং ৩য় হয়েছে গুনজে ইউনাইটেড লিমিটেড।
মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ফারিহা গ্রিণ মুড লেদারস্ লিমিটেড, ২য় হয়েছে এ বি এম ওয়াটার কোম্পানি ও ৩য় হয়েছে ডীপলেড ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।
কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ব্লু-স্টার অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ২য় হয়েছে প্রীতি বিউটি পার্লার এবং ৩য় হয়েছে লেহাজ সালমা যুব মহিলা কল্যাণ সংস্থা। হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে বিজ সলিউশনস লিমিটেড।
উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে ১ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর ৭ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২১’ দেয়া হয়।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]