বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই : দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা কাম্য
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৬
বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই : দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা কাম্য
প্রফেসর ড. মো. নাসিরউদ্দিন মিতুল
প্রিন্ট অ-অ+

জলদস্যুদের নেতা শীর্ষ জলদস্যু ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোকে চেনে না এমন সিনেমাপ্রেমী দর্শক বিরল। ডিজনির বদৌলতে জলপথের সেই দস্যুবৃত্তির উপাখ্যান জীবন্ত হয়েছে রূপালি পর্দায়, ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ নামে। তুখোড় অভিনেতা জনি ডেপ জলদস্যু ‘জ্যাক স্প্যারো’ নামেই এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত।


দিগন্তজোড়া আসমান, অথৈ জলরাশি, বিশাল বড় জাহাজ, ঘুটঘুটে অন্ধকারকে সাক্ষী রেখে ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে সমুদ্রের বুক চিড়ে এগিয়ে চলা, মুহুর্মুহু লুটতরাজ, বিশ্বাসঘাতকতা, জীর্ণশীর্ণ বস্ত্র, ময়লা দাঁত-এসকল বিশেষণ শুধু জলদস্যুদের সঙ্গেই খাপ খায়। কল্পনায় আমরা এখন সোমালিয়ার জলদস্যুদের সেই বীভৎস চেহারাই যেন দেখছি। যাদের হাতে ২৩ জন নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।


দশ বছর আগে আরেকবার সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই মালিকের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। এই রুটটি তাই বাংলাদেশি জাহাজ চলাচলের জন্য অভিশাপ হিসেবেই প্রতীয়মান। ঘটনা দুটো চোখের সামনে পরিচালক গোর ভারবিনস্কির ‘পাররেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের কথা মনে করিয়ে দেয়।


আমি আদার ব্যাপারী। জাহাজের খবরে কাজ কী? কিন্তু আজ ক’দিন ধরে জাহাজের খবর নিতেই বেশ আগ্রহ চেপেছে। তারাবিহ নামাজ শেষ করে টেলিভিশনে খবর দেখছিলাম। টকশো চলছে। প্রসঙ্গ জাহাজ ছিনতাই! চোখ আটকে গেল। সময় টিভির সিনিয়র সাংবাদিক কমল দে-কে এক হাত নিলেন মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মো. খুরশেদ আলম। ‘৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার না দিলে মুক্তি মিলবে না’, এমন তথ্যের উৎস নিয়ে সন্দিহান তিনি। এই অংকের টাকা কমল দে কোথায় শুনলেন?



কমল দে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। জানালেন, জিম্মি এক নাবিকের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী তাকে টাকার এই পরিমাণের কথা জানিয়েছেন। ঐ জিম্মি নাবিক মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীকে প্রথমে বিষয়টি অবহিত করেন। জিম্মি ঐ নাবিকের নাম মো. আতিক উল্লাহ খান। তিনি তার স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি জানান, মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।



উৎস বিচারে কমল দে এমন একটি তথ্যের আগ-পাছ বিবেচনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে তা মিডিয়ায় প্রচার করেন। জাহাজ মালিক কোম্পানি ও সরকারি মহলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। সরকারি সূত্র বলছে, এমন খবর মিডিয়ায় প্রচারের কারণে জিম্মি মুক্তিতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সরকার ও জাহাজ মালিক কোম্পানি বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে জলদস্যুদের সাথে নেগোশিয়েট করে যেকোনোভাবে তাদের উদ্ধার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু শুরুতেই যদি নির্দিষ্ট এমন অংকের টাকা কথা জানাজানি হয় তাহলে জলদস্যু (পাইরেট)রা তাদের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পাইরেটদের প্রথম যোগাযোগের কেন্দ্র হচ্ছে জাহাজ মালিক কোম্পানি। কিন্তু তারা সরকারের সংশ্লিষ্টতা টের পেলে টাকার চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিবে, এটি পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ জনাব খুরশেদ আলমের ধারণা। তাই অসমর্থিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো বাজারের না ছাড়ার পক্ষে তিনি।


অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন মালিক পক্ষ কিংবা সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থা যে কেউ ব্যাপারটি সুরাহা করতে যাক না কেন, পাইরেটদের কাছে টাকার অংকের সর্বনিম্ন হার হবে মিডিয়ায় প্রচার পাওয়া এই ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর নিচে তারা আর মানতে চাইবে না।


কমল দে অবশ্য আরও একটি তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করে সমস্যা তৈরি করেছেন বলে মনে করেন অনেকেই। তা হলো, তিনি বলেছেন, পাইরেটরা সব মোবাইল ফোন জব্দ করলেও ইঞ্জিন রুমে পাঁচজন নাবিক একটি মোবাইল ফোন লুকিয়ে রেখে তা দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে। এই বিষয়টিও তিনি গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন। এতে চরম নাখোশ জিম্মি উদ্ধারে সকল পক্ষ। কারণ শুধুমাত্র এমন একটি তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারনে ইঞ্জিন রুমের ঐ পাঁচজন নাবিকের জীবন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। মোবাইল ফোন লুকিয়ে পরিবার বা অন্যদের সাথে যোগাযোগের অপরাধে তাদের মারধর তো মামুলি ব্যাপার, এমনকি হত্যা করাও হতে পারে।


পাইরেটদের সাথে অনেক এজেন্সির যোগাযোগ আছে। যেকোনো মাধ্যমে তারা এমন তথ্য বাংলাদেশের মিডিয়া থেকে জেনে চড়াও হতে পারে। কেড়ে নিতে পারে তাদের জীবন। এটিকে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা নিছক অপরিপক্ক সাংবাদিকতা বলে চটেছেন। এসব তথ্য এমন উত্তেজনাকর মুহূর্তে কেন প্রচার করা হচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সরকারি অনেক মহল।


উল্লেখ্য, জলদস্যুর কবলে পড়া জাহাজটির বিমা করা আছে। তাই পাইরেটদের দর কষাকষির প্রথম টার্গেট হচ্ছে পিএনআই ক্লাব। অর্থাৎ প্রোটেকশন ইনডিমেনিটি ক্লাব। তারা এই ক্লাবের মাধ্যমেই প্রথম তাদের মুক্তিপণ দাবি করে। পিএনআই ক্লাব তা সরাসরি মালিক পক্ষকে জানিয়ে দেয়। তখন পর্যন্ত ডিমান্ড থাকে এক রকম। পরবর্তীতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা পেলে পাইরেটরা আরও বেশি সতর্ক হয় এবং মুক্তিপণের টাকার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।



টাকা পরিশোধের ব্যাপারটিও এখানে কমান্ডো স্টাইলে সম্পন্ন হয়। হেলিকপ্টার বা বিমান থেকে জাহাজ বরাবর ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ ভর্তি মুক্তিপণের অর্থ ছুঁড়ে ফেলতে হয়। পাইরেটরা সেই টাকা কড়ায়-গন্ডায় গুনে নিরাপদ স্থানে গিয়ে জাহাজটি মুক্তি দিয়ে তারা দ্রুত সটকে পড়ে



জাহাজটি উদ্ধারে তাই এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাই পিএনআই ক্লাবের বার্তার অপেক্ষায় আছে। এছাড়াও সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাছাকাছি বিভিন্ন দেশে জাহাজ উদ্ধারের যোগাযোগ করেই চলেছে। যেমন কুয়ালালামপুর পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার, রিক্যাব-সিঙ্গাপুর এমনকি সোমালিয়ান পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টারের সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। যোগাযোগটার সূত্রপাত ঘটাবে পাইরেটরা। এখানে সরকার বা মালিক পক্ষের আগ বাড়িয়ে করার কিছু নেই। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এখন পর্যন্ত এমন যোগাযোগ পাইরেটদের পক্ষ থেকে কেউ করেনি, এটি মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়।


জলদস্যুদের দরকার টাকা। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই পথে ৩০০-৪০০ জাহাজ পাইরেসি হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার জাহাজও এর মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশই শান্তিপূর্ণভাবে জাহাজ ছাড়িয়ে নিয়েছে। ক্রুদের অক্ষত উদ্ধার করেছে।


জলদস্যুদের একটি কৌশল হলো জাহাজ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে ‘সেফ জোন’ তৈরি করা। সেখান থেকে নিজেদের ডিমান্ড জানায়। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো ডিমান্ড কাউকে জানায়নি।


দশ বছর আগেও আরব সাগর থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই মালিকের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। নানা দর কষাকষি করে ১০০ দিন পর সেই জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের দেশে ফেরানো হয়েছিল। এবারও হয়তো সফলভাবে ২৩ জন নাবিক মুক্তি পাবে। আবার তারা ফিরে আসবে। সামনে ঈদ। পরিবারের সাথে ঈদ করবে। আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন।



কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সোমালিয় এত ঘটনা ঘটে কেন? অনেক বছর বছর পর এমন প্রশ্ন সামনে চলে আসে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালে দেশটির জন্ম। দীর্ঘদিন ইতালিয়ান ঔপনিবেশিকতার কবলে ছিল সোমালিয়া। চলে বছরের পর বছর সেনা শাসন। ১৯৯১ সালে সামরিক শাসন উৎখাতের পরে নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে দেশটি। পরের দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমলিয়ায় কার্যকর কোনো সরকার ছিল না। এখনো সেদেশে কোনো নির্ভরযোগ্য সরকার নেই। নেই কোনো সামরিক বাহিনী, কোস্টগার্ড কিংবা নৌবাহিনী। স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা না থাকায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কাজে আসছে না।



আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘতম উপকূল সমৃদ্ধ দেশ এই সোমালিয়া। মাছ ধরা তাদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল। অথচ এই দীর্ঘতম জলসীমার নিরাপত্তায় নিজেদের কোস্টগার্ড না থাকায় এ অঞ্চলে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি দিনে দিনে বাড়তে থাকে। স্থানীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাছাড়া সোমালিয়রা দেখল যে, মৎস্য শিকারের চেয়ে দস্যুতায় আয়ের পরিমাণ অনেকগুণ বেশি। এক পর্যায়ে তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ওই রুটে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়। ফলে ২০১২ সাল নাগাদ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে আসে দস্যুবৃত্তি।


দস্যুরা স্বভাবতই সাহসী ও সুযোগসন্ধানী। তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে নানাভাবে। সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী বেশ কিছু জাহাজে আক্রমণ করায় পশ্চিমা বাহিনীগুলোকে সেইদিকে বেশি নজর দিতে হয়েছে। টহলের কমতি ঘটায় এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে সোমালিয় পাইরেটরা। এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে জলদস্যুতা বেড়ে গিয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাহিনী ওই জলসীমায় টহল জোরদার করে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।


গত কয়েক মাসে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা আবার বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে সোমালিয় উপকূলে তারা অন্তত ১৪টি জাহাজ হাইজ্যাক করেছে। এর মধ্যে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকা, লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী সেন্ট্রাল পার্ক নামের একটি জাহাজ, এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ রয়েছে। এখনো জাহাজের নিয়ন্ত্রণ হামলাকারীদের হাতে। জিম্মি আছেন ১৭ জন ক্রু। এর সাথে নতুন করে যোগ হলো ১২ মার্চ হাইজ্যাক করা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এম ভি আবদুল্লাহ’ যেখানে ২৩ জন নাবিকের সকলে জিম্মি আছে। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ১৪ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ, গ্যারাকাদ নোঙর এলাকা থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটিকে দস্যুরা নোঙর করে রেখেছে।


এখন পর্যন্ত জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুরা দুর্ব্যবহার করছেন না। তাঁরা অক্ষত আছেন। তাঁদের সাহ্‌রি ও ইফতারের সময় খাবার দেওয়া হচ্ছে। এমন তথ্য পাঠিয়েছেন জিম্মি নাবিক আসিফুর রহমান। তার বাড়ি চট্রগ্রামে।


ধৈর্য ধারণ করি। জিম্মিদের মুক্তির প্রার্থনা করি। এই পবিত্র রমজান মাসে তারা নিজ পরিবারের কাছে সুস্থভাবে ফিরে আসুক। অবসান হোক জিম্মি নাটকের। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ, এমন বিপদে তারা আরও কৌশলী হবেন। প্রচার প্রচারণা যেন জিম্মিদের জীবননাশের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মালিক পক্ষ, সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা সকল মহলের প্রচেষ্টায় এ মিশন যেন সফল হয়, সেই কামনা রইল।


লেখক : প্রফেসর ড. মো. নাসিরউদ্দিন মিতুল, ডিন, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুল, জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com