তিস্তা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙন-প্লাবনে আতঙ্কিত মানুষ
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৪৪
তিস্তা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙন-প্লাবনে আতঙ্কিত মানুষ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা ও যমুনায়। গত কয়েক দিনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙন ও প্লাবন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্ধি মানুষ।


খবর নিয়ে জানাযায়, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এবং গত ৪ দিনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৪৫ সেন্টিমিটার ও কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে পানি। এতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।


ইতিমধ্যেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বসতভিটা ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তবে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।


সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার হাসান মামুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ সেন্টিমিটার নিচে ও কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত (২৫ আগস্ট) শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুরে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই ৪ দিনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার-১৭ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বসতভিটা ছেড়ে অন্য স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে বন্যা কবলিতরা। এ সকল এলাকার তিল, আখ, বীজতলাসহ সবজি বাগান তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা।


সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার জানান, পাহাড়ি ঢল ও উজানে ভারী বর্ষণে গত ৪ দিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী দুই-তিন দিন আরও পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ভারী বন্যার আশঙ্কা নেই।


অপর দিকে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুড়িগ্রামের তিস্তার পানি। এতে করে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের স্রোতে তিস্তার বাম তীরজুড়ে অন্তত ১৬টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।


সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে ভাঙনের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। গত এক সপ্তাহে এ দুই উপজেলায় ঘর-বাড়ি হারিয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। হুমকিতে রয়েছে বুড়িরহাটের দেবে যাওয়া পরের বাকি অংশটুকুও।


রাজারহাট উপজেলার ঘড়িযালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখা এলাকার সামছুল আলম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার ভাঙন আমার ঘরের কাছে চলে এসেছে। রক্ষা পাওয়ার উপায় নাই। দুটি ঘর সরিয়েছি। বাকি ঘরও সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ করছে না।


একই এলাকার নুরল মিয়া জানান, ভাঙনে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। ঘর-বাড়ি সরিয়ে যে কোথায় নিয়ে যাবো তার কোনো উপায় নেই৷ কেউ জায়গা দিতে চায় না। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।


অন্যদিকে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি রবিবার (২৭ আগস্ট) থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত।


কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের মজিবর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে আমাদের ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করছে। আমরা খুব দুর্ভোগে রয়েছি।


স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তার পানি কমে গেলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আগামী দু'একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে বলে জানান তিনি।


এছাড়াও ভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, নদ-নদীর পানি বাড়া-কমার সঙ্গে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের প্রায় ৪০টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com