শিরোনাম
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:২৪
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীদের স্থান সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। সে অনুপাতে রোগী সুস্থ হবার হার কমছে। ফলে ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলোতে দেখা গেছে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা।


মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ঘুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এবং চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।


ইতোমধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালসহ রাজধানীর আরো ৫টি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে বিশেষ এই হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অন্য যে কোনো মাস বা বছরের তুলনায় এবছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও ভয়াবহতা অনেক বেশি। অতিরিক্ত রোগীর কারণে স্থান সংকুলান করতে এর মধ্যেই অতিরিক্ত ৩টি ওয়ার্ড ব্লক বাড়িয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। প্লাটিলেটের দ্রুত কমে যাবার কারণে জীবন শঙ্কায় এসব রোগীর।


হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মিটফোর্ডে এই বছরের জুলাইতে ২২৮৬ জন, আগস্টে ৭৬৯৮ জন এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই (১-১২ সেপ্টেম্বর) রোগী ভর্তি হয় ৩৫১৯ জন। আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রতিদিন ৩০০ এর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে এই হাসপাতালে। গত দুই সপ্তাহে মারা গেছেন ৮ জন রোগী। মাসের শেষের দিকে এই সংখ্যা আরো বাড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। সেপ্টেম্বরকে ডেঙ্গুর সবচেয়ে পিক সময় হিসেবেও গণ্য করছেন তারা।


ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগী গেণ্ডারিয়ার মুদি দোকানি রফিকুল বিবার্তাকে জানান, শরীরে অসম্ভব ব্যাথা। এত কষ্ট কোনো দিন করিনাই। বিছানায় শুয়ে আছি ৫ দিন ধরে। এবারের ডেঙ্গু একদম জীবন নিয়ে টান দিছে। প্রতিদিন শতশত রোগী ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গুর সেরকম কোনো চিকিৎসা নাই।


তবে ভর্তি থাকা বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগীর চোখেমুখে ছিল মশক নিধন নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশার ছাপ। রাশেদুল নামের এক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২ ঘণ্টা বৃষ্টি হলে আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় পানি জমে। সেই পানি ২ দিনেও নামে না। মশার উৎপাতে দিন-রাতে কখনোই শান্তি নাই।


পোস্তগোলার লিমনও অভিযোগের সুরে বিবার্তাকে বলেন, ৬ মাসের মধ্যে আমার বাসার আশেপাশে কোনো দিন মশার ওষুধ দেয়া হয় নাই। এলাকার সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে একবার ছিটানো হয়েছিল। তবে সেসবে কোনো কাজ হয় না। বৃষ্টি হলে পানি নিস্কাশনের অবস্থাও ভালো না। নিয়মিত মশক নিধন হলে আজকে আর জীবন নিয়ে টানাটানি লাগত না।


ডেঙ্গুর এমন উর্ধগতি নিয়ে দিশেহারা খোদ চিকিৎসকরা। মিটফোর্ডের ডেঙ্গু ফোকাল পারসন ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তবে দেখবো রোগীর সংখ্যা ও জটিলতা কিন্তু ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। মাঝে কিছু দিন কম থাকলেও এই মাসের শুরু থেকে দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে চলেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের স্থান সংকুলান নিয়েই বেশি সমস্যা হচ্ছে।


রোগীর এই অতিরিক্ত চাপ ও ডেঙ্গুর জটিলতার কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক বিবার্তাকে জানান, এবারের বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ দিনের কমপ্লিকেশন নিয়ে আমাদের কাছে আসছে। এদের কেউ কেউ আবার আগেও ডেঙ্গুর অন্যান্য ভ্যারিয়েশনে আক্রান্ত হ্যয়েছিলেন। এদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। গত বছর আমাদের বেশিরভাগ রোগী ৭ দিনেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এবছর সেটা ১২-১৩ দিন, বা কারো কারো ক্ষেত্রে ৩ সপ্তাহ সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালে একই সাথে পুরানো রোগী যেমন অবস্থান করছে, তেমনি প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে।


কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, বৃষ্টিপাত, আদ্রতা, তাপমাত্রা ও এডিস মশার ঘনত্ব অনুসারে আমরা আগেই বলেছিলাম সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকবে। সেটাই আমরা সরেজমিনে লক্ষ্য করছি। এখনো পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না যে এই মাস শেষে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আদৌ কমে আসবে কিনা।


গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩২ জন ও ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৫৬ জন।


বিবার্তা/আদনান/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com