শিরোনাম
রাজধানীতে ট্রিপল মার্ডার, ৩ দিনের রিমান্ডে মুনের স্বামী শফিকুল
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২১, ১৭:০৪
রাজধানীতে ট্রিপল মার্ডার, ৩ দিনের রিমান্ডে মুনের স্বামী শফিকুল
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর কদমতলীতে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মেহজাবিন ইসলাম মুনের স্বামী শফিকুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


এর আগে রোববার (২০ জুন) মেহজাবিন ইসলাম মুনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন কদমতলী থানার পরিদর্শক জাকির হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


জানা গেছে, সম্প্রতি স্বামী শফিকুল ইসলাম ও সন্তান মার্জান তাবাসসুমকে নিয়ে রাজধানীর কদমতলীতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী মেহজাবিন মুন। গিয়েই তার ছোট বোন ২০ বছর বয়সী জান্নাতুলের সঙ্গে নিজ স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে বাবা-মায়ের কাছে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মেহজাবিনের। তারই জের ধরে তিনি বাবা-মা, ছোট বোনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নারকীয়ভাবে হত্যা করেন। এরপর ৯৯৯-এ কল দিয়ে নিজেই হত্যার কথা জানান।


হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নিজেই ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বলেন, মা-বাবা ও ছোট বোনকে হত্যা করেছি। আপনারা আসেন। এসে আমাকে ধরে নিয়ে যান।


এ ঘটনায় নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই এবং আটক মেহজাবিন ইসলাম মুনের বড় চাচা সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী শফরকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।


এদিকে গ্রেফতার মেহজাবিন হত্যার দায় স্বীকার করলেও তার স্বামী শফিকুল নিজে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেহজাবিনের দুই খালা। তারা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে হয়তো মেহজাবিন ‘সহায়তা’ করে থাকতে পারেন।


মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ সালে মেহজাবিনকে দিয়ে তার মা ‘অনৈতিক কাজ’ করিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয় তাকে। ওই ঘটনার পর থেকেই মায়ের প্রতি ক্ষোভের জন্ম হয় তার। পরে বাবা মাসুদ রানাকে বিষয়টি অবহিত করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। সেই ক্ষোভ থেকেই এ ধরনের হত্যার পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


গ্রেফতার মেহজাবিনের খালা ইয়াসমিন বলেন, শফিকুলের সঙ্গে বিয়ের আগে মেহজাবিন আমিন নামে একজনের কাছে প্রাইভেট পড়ত। সে সময় মেহজাবিনের সঙ্গে প্রেমের পরে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমিনের। বিষয়টি জানাজানি হলে দ্রুত শফিকুলের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর শফিকুল সন্দেহ করত, আমিনের সঙ্গে মেহজাবিনের সম্পর্ক এখনও আছে। এরপর ২০১৬ সালে আমিনকে হত্যা করা হয়।


হত্যার ঘটনায় যে মামলা হয় তাতে শফিকুল ইসলাম, তার শাশুড়ি মৌসুমী, খালাশাশুড়ি শিউলি আক্তার ও স্ত্রী মেহজাবিনকে আসামি করে মামলা হয়। সে মামলায় তারা জেলও খেটেছেন। মেহজাবিনকে পরে আদালত খালাস দেন।


ইয়াসমিন বলেন, মেহজাবিনকে বিয়ের পর শফিকুল অনেক মারপিট করত। শফিকুলের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে একবার সে পালিয়েও যায়। পরে মীমাংসা করে তারা আবার সংসার শুরু করে। আমার বোনের কোনো ছেলে নেই। এ কারণে শফিকুল ভাবত, জান্নাতুল আর মেহজাবিনকে ‘একসঙ্গে পেলে’ তাদের বাবার সব সম্পত্তি তার হাতের মুঠোয় নেয়া যাবে।


তিনি আরো বলেন, ‘আমার আরেক ভাগনি জান্নাতুলের সঙ্গেও শফিকুল অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। শারীরিক সম্পর্কের পর শফিকুল জান্নাতুলকে বলত ‘তুমি যদি আমার কথা না শোনো তাহলে আমাদের ভিডিওগুলো ফেসবুকে ছেড়ে দেব।’ অন্যদিকে, মেহজাবিনকে বলত, ‘তুমি যদি এগুলো কাউকে বলো তাহলে তোমাকে মেরে ফেলব।’ যেহেতু শফিকুল আগে একটি ‘খুন করেছে’ এজন্য মেহজাবিন ভয় পেত। এছাড়া তাদের বাচ্চাটাকেও জিম্মি করে রাখত, হত্যার ভয় দেখাত।’


ইয়াসমিনের দাবি, ‘তিনজনকে হত্যা করেছে শফিকুল নিজেই। এরপর তাকে যাতে সন্দেহ না করা হয় সেজন্য সেও ওষুধ খেয়ে অসুস্থতার ভান করে। নিজে হত্যার পর সে (শফিকুল) মেহজাবিনকে দিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দেয়ায়।’


গ্রেফতার হওয়া মেহজাবিনের আরেক খালা শিউলি আক্তার বলেন, ‘মেহজাবিনের সঙ্গে বিয়ের পর জান্নাতুলকে ব্ল্যাকমেইল করে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল। এরপর আমরা জানার পর জান্নাতুলকে অনেক বুঝিয়েছি। বোঝানোর পর সে অবৈধ সম্পর্কের পথ থেকে সরে আসে। বিষয়টি মেহজাবিন জেনে গেলে শফিকুল নিজের মেয়েকে মেরে ফেলার ভয় দেখাত। মেহজাবিনকে মারপিটও করত শফিকুল। একপর্যায়ে সম্পত্তি দখলের জন্য শফিকুল জান্নাতুলকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করে। জান্নাতুলের বিয়ের কোনো প্রস্তাব এলে বিয়ে ভেঙে দিত শফিকুল।’


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com