শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন মঙ্গলবার, ট্রাম্পের পরীক্ষা
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২০
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন মঙ্গলবার, ট্রাম্পের পরীক্ষা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন আজ মঙ্গলবার। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পরবর্তী দুই বছরের অবস্থা স্পষ্ট করবে ভোটাররা। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেমন দেশ পরিচালনা করেছেন তার মূল্যায়ন জানা যাবে এই নির্বাচনে।


এই নির্বাচনে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের সব আসনে (৪৩৫) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান এতে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির ২৩৫ আসনে প্রতিনিধিত্ব আছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির আছে ১৯৩ টিতে। কংগ্রেসের এই নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে কোনো দলকে ২১৮টি আসনে জিততে হয়।


কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের আসন সংখ্যা ১০০টি। বর্তমান সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা ৫১টি। আর ডেমোক্র্যাটদের ৪৭টি। বাকি দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।


পাশাপাশি ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৬টির গভর্নর এবং যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অঞ্চলের গভর্নর নির্বাচিত হবেন। এছাড়াও অনেক নগরীর মেয়র এবং স্থানীয় কর্মকর্তা নির্বাচন করা হবে।


এদিকে নির্বাচনী প্রচারে বর্ণবাদী উস্কানির অভিযোগে কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছে, যা সাম্প্রতিক সময়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম নির্বাচনী প্রচারে পরিণত হয়েছে।


ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের একটি বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করেছে এনবিসি, ফক্স নিউজ ও ফেসবুক। সমালোচকরা এই বিজ্ঞাপনটিকে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টিকারী অভিহিত করে এর নিন্দা করেছেন।


গত সপ্তাহে অনলাইনে ছাড়া ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি ট্রাম্পের ২০২০ সালের পুনর্নির্বাচন প্রচার শিবির তৈরি করিয়েছে। এতে আদালত কক্ষে ২০১৪ সালে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এক অবৈধ অভিবাসীকে দেখানো হয়েছে যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছে। মেক্সিকো হয়ে লাতিন অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছে, বিজ্ঞাপনটিতে এমন দৃশ্যের পাশাপাশি ওই বিষয়টি দেখানো হয়েছে।


নির্বাচন নিয়ে ৩০ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে হওয়া বেশ কয়েকটি জনমত সমীক্ষা বলছে, ২২৫টি আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে সমীক্ষকরা এখনো ১৩টি আসন যে কারও পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন।


তাই ট্রাম্পকে চাপে ফেলার মতো ‘নীল ঝড়’ উঠবেই, নিশ্চিত করতে পারছেন না ডেমোক্র্যাট-সমর্থকও।


সিএনএনের সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি বেশ কিছুটা এগিয়ে আছে। জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে ৫৫ শতাংশ এবং রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে।


এ জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে ৩৯ শতাংশ ভোটার মত দিয়েছেন; বিপক্ষে ৫৫ শতাংশ। অক্টোবরের শুরুতে চালানো জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে ৪১ শতাংশ এবং বিপক্ষে ৫২ শতাংশ ভোটার মত দিয়েছিলেন।


প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আসতে পারে বলে দুই দলেরই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন আরো বাড়বে বলে তাদের ধারণা। কারণ ১০০ আসনের সিনেটের মাত্র ৩৫ টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। এর মধ্যে ২৪টি আসনই ডেমোক্র্যাটদের দখলে আছে। ফলে রিপাবলিকানদের দখলে থাকা মাত্র নয়টি আসনে ভোট হবে। সেক্ষেত্রে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের কিছু আসন এবার বাগিয়ে নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও মনে করছেন সিনেটে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলে সেটিকেই তিনি বিজয় হিসেবে ধরে নেবেন।


তবে কংগ্রেসের দুই কক্ষের মধ্যে ডেমোক্র্যাটরা যদি অন্তত একটির নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে পরবর্তী দুই বছরে ইচ্ছেমতো নীতি বাস্তবায়ন করতে ট্রাম্পকে বেগ পেতে হবে। ট্রাম্পের সমর্থক ও‘ওমেন ফর ট্রাম্প'-এর নেতা অ্যামি ক্রেমার মনে করছেন, একটি কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে যাওয়াটা সর্বনাশা হবে। যদি তারা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে ট্রাম্প অকার্যকর প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়বেন এবং তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না।


মার্কিন রাজনীতির ইতিহাস বলছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রায়শই শাসক দলের বিরুদ্ধে যায়। এবারও তেমন হলে চলতি মেয়াদের বাকি দু’বছর কিন্তু ট্রাম্পের পক্ষে কঠিন হতে চলেছে বলেই মত কূটনীতিকদের।


দেশটির বেসরকারি সংস্থা ‘দ্য অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্সি প্রজেক্ট'-এর তথ্য বলছে, গত ২১টি মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের দল প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র তিনবার আসন বাড়াতে পেরেছে। আর সিনেটে পেরেছে মাত্র পাঁচবার।


সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হওয়া দুই মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুইবারই ডেমোক্র্যাটিক দল প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে আসন হারিয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পরপর হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝামাঝিতে অর্থাৎ, দু’বছরের মাথায় হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ নির্বাচনে জনগণ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তাদের সন্তোষ বা অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ পায়। আর তাই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মানুষ কি ভাবছে এবং তার আবারো ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কতটুকু তা এ নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সূত্র: বিবিসি ও ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com