প্রায় ১৮ বছর পর জার্মানির ক্ষমতাসীন সিডিইউ দলের প্রধান পদ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তবে দলের পদ ছাড়লেও চ্যান্সেলর অর্থাৎ সরকারপ্রধান হিসেবে মেয়াদ শেষ করতে চান তিনি। চ্যান্সেলর হিসেবে তাঁর মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত এবং ওই সময় পর্যন্ত গদিতে থাকাই তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু ওই পর্যন্ত তাঁর মহাজোট সরকার টিকে থাকবে - এমন সম্ভাবনা দেখছেন না অনেকেই। কারণ, জোটের শরিক দল এসপিডি অদূর ভবিষ্যতে মহাজোট ত্যাগ করতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে না পারলে আগাম নির্বাচন ডাকতে হবে।
তবে সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। আপাতত সিডিইউ দলের আগামী নেতা কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে। দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ম্যার্কেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আনেগ্রেট ক্রাম্প কারেনবাউয়ার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান প্রার্থী হতে চান। সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো প্রাক্তন নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস-ও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেটের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন পাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যিনি পাবেন, রীতি অনুযায়ী সেই ব্যক্তিই আগামী নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হতে পারেন। ফলে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।
অবশ্য ম্যার্কেল নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে সোমবার বলেন, এই দুই পদে এক ব্যক্তি না থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে আমি সচেতন। কারণ, এই দুই ব্যক্তির মধ্যে মতের অমিল হলে সরকার ও দল - দুই পক্ষই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আর আমি নিজের উত্তরসুরী বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় কোনোরকম হস্তক্ষেপ করব না।
ম্যার্কেল আচমকা দলের শীর্ষ নেত্রী হিসেবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় জোটের বাকি দলগুলো বেশ বেকায়দায় পড়েছে, বিশেষ করে সরকারের শরিক বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার। সরকারের ভাবমূর্তিহানির জন্য সাম্প্রতিককালে তাঁর ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন' আচরণকে অনেকেই দায়ী করছেন। রাজ্য নির্বাচনে দলের ভরাডুবির দায় মেনে নিয়ে তাঁকেও শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের ফলে চাপের মুখে রয়েছেন এসপিডি দলের নেতা আন্দ্রেয়া নালেসও। বিরোধী সবুজ দল ম্যার্কেল-এর অর্জন ও তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে। তবে উদারপন্থি এফডিপি দল, বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' ও উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি চ্যান্সেলর হিসেবেও ম্যার্কেলের পদত্যাগের ডাক দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানি আন্তর্জাতিক আঙিনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কতটা পালন করতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে ব্রেক্সিট ও ইটালিকে ঘিরে বর্তমান সংকটের মুখে ইউরোপে জার্মানির নেতৃত্ব যখন বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে, এমন এক সময়ে সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ‘লেম ডাক' সরকারপ্রধান হিসেবে ম্যার্কেল দুর্বল হয়ে পড়লে কী হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে ম্যার্কেল নিজে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আঙিনায় এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমন নেতারাও ভালোভাবে দেশ শাসন করে চলেছেন।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]