কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি যাচ্ছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি যাচ্ছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় স্কুলে শিক্ষক এবং কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৬ সালে নিয়োগ হওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সব নিয়োগ অথাৎ পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।


প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শুনানি চলার পর সোমবার (২২ এপ্রিল) এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টে।


কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেছে। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রায় দেয় এ বেঞ্চ। শুধু একজনকে বিশেষ কারণে চাকরিচ্যুত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাইকোর্ট।


হাইকোর্টের দেয়া এ রায়ের ফলে সবমিলিয়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।


প্রতিবেদন বলছে, গত তিন বছরে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা বিষয় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলা। স্কুলে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে বহু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। টেট (প্রাথমিক স্কুল) এবং এসএসসির (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অভিযোগ। টেট মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সোমবার এসএসসির চাকরি বাতিলের মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।


এসএসসি’র নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক-শিক্ষিকা, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ফলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মোহাম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের ফলে, ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গেলো।


ওই শিক্ষকদের চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ বেতন ফেরত দিতে বলেছেন আদালত। সোমবার (২২ এপ্রিল) এ রায় ঘোষণা করা হয়।


এদিকে, সবার চাকরি বাতিল হলেও একজনের চাকরি বাতিল হয়নি। সোমা দাস নামের এক নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তার চাকরি বাতিল করেননি কলকাতা হাইকোর্ট।


বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মোহাম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন, এসএসসির প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের জনগণের টাকা থেকে বেতন দেওয়া হয়েছে। ৪ সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ সেই বেতন ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


অন্যদিকে, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে যে তদন্ত সিবিআই করছে, তা চলবে।


ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচনে পরেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টে। উত্তরপত্র যাতে জনগণ দেখতে পান সেই ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে। যে সব উত্তরপত্র এখনো ওয়েবসাইটে আপলোড হয়নি, সেগুলো দ্রুত আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।


লোকসভা ভোটের মাঝে এসএসসি মামলার এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।


স্কুল সার্ভিস কমিশন বলেছে, রায়ের কপি যতক্ষণ না আমাদের হাতে এসে পৌঁছাচ্ছে, ততক্ষণ আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাবো।


পশ্চিমবঙ্গের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যসহ শিক্ষা দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কারাদণ্ড পেয়েছেন।


গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলা। এই মামলায় প্রথমে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই নির্দেশ বহাল থাকে।


এর পর মামলা গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখান থেকে মামলাগুলি হাইকোর্টে আবার ফেরত পাঠানো হয়। মে মাসের মধ্যে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চকে শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করতে বলেছিলেন শীর্ষ আদালত।


সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে শুনানি শেষ হয়ে যায়। সোমবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত। ২৮১ পৃষ্ঠার রায় আদালতে পড়ে শোনান বিচারপতি বসাক।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com