হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ ভারতীয় গুঁড়া মশলা
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৪৫
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ ভারতীয় গুঁড়া মশলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জনপ্রিয় ভারতীয় মসলা পণ্যগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হংকং এবং সিঙ্গাপুর। হংকং এর সেন্টার ফর ফুড সেফটি (সিএফএস) ও সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরা রুটিন ফুড নজরদারি চালিয়ে দেখেছে ভারতের বিখ্যাত গুড়া মশলার জনপ্রিয় দুটি ব্র্যান্ড এমডিএইচ ও এভারেস্টের ৪টি মশলা পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান ইথিলিন অক্সাইড পেয়েছে, যা মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত। যার ফলে এসব মসলা পণ্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে ভারতের সরকার দেশের সকল মশলা উৎপাদন কারখানা থেকে নমুনা সংগ্রাহের জন্য খাদ্য কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে।


ভারত সরকারের একটি শীর্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। তবে এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ফুডস এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।


এই খবর প্রকাশ্যে আসায় এভারেস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ৫০ বছরের পুরনো নামী ব্র্যান্ড। কোম্পানির সব পণ্য কঠোর পরীক্ষার পরে তৈরি ও রপ্তানি করা হয়। এই পণ্য পাঠানোর আগে কঠোরভাবে পরিচ্ছন্নতা এবং খাদ্য নিরাপত্তার মান মেনে চলা হয়। এই পণ্যগুলোতে ভারতীয় মশলা বোর্ড এবং এফএসএসএ আইসহ সব সংস্থার অনুমোদনের সিল রয়েছে। প্রতিটি পণ্য রপ্তানির আগে পরীক্ষা করে ভারতের মশলা বোর্ড। মান নিয়ন্ত্রণ দল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে এই বিষয়টি। এরপরই পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারবে কোম্পানি।


ভারতীয় মসলা পণ্যগুলো আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে যাচাই-বাছাইয়ের সম্মুখীন হয়েছে। গত বছর, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এভারেস্ট ফুড কোম্পানির কিছু পণ্য প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছিল। সে সময় সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে।


এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কেরালা-ভিত্তিক লিভার বিশেষজ্ঞ ড. সাইরিয়াক অ্যাবি ফিলিপস ভারতের খাদ্য নিরাপত্তার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর প্রবিধান ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।


ভারতীয় মশলাগুলিতে ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত থাকায়, ভোক্তাদের এই পণ্যগুলো খাওয়া এড়াতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যে এই পণ্যগুলো খেয়েছেন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের অবিলম্বে চিকিৎেসকের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।


সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছে, দেশের সব খাদ্য কমিশনারকে সতর্ক করা হয়েছে। মশলার নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে দেশের সব মসলা উৎপাদনকারী ইউনিট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।


এসব কর্মকর্তারা আরো বলেন, এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ছাড়াও দেশের সব মসলা প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে নমুনা নেয়া হবে। প্রায় ২০ দিনের মধ্যে ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসবে।


হংকং ও সিঙ্গাপুর কী বলছে?


দেশ দুটির খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরা এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ব্র্যান্ডের চারটি পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান পেয়েছে। এসব পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গেছে। এরফলে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা এসব পণ্য ব্যবহার না করতে সতর্ক করেছে।


জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের মাধ্যমে ইথিলিন অক্সাইডকে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।


এমডিএইচ’র তিনটি মশলা পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান পাওয়া গেছে। পণ্য তিনটি হলো- মাদ্রাজ কারি পাউডার (মাদ্রাজ কারির জন্য মশলার মিশ্রণ), সম্ভার মসলা (মিশ্র মসলা পাউডার) এবং কারি পাউডার (মিশ্র মসলা পাউডার)। অন্যদিকে এভারেস্ট ব্র্যান্ডের ফিশ কারি মসলার সাথে কীটনাশক ও ইথিলিন অক্সাইডের উপদান পাওয়া গেছে।


গত ৫ এপ্রিল হংকংয়ের সেন্টার ফর ফুড সেফটি (সিএফএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দেশটির খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এসব পণ্য বিক্রি বন্ধ ও দোকানে থাকা পণ্যগুলো তাক থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।


হংকং প্রশাসনের সেন্টার ফর ফুড সেফটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে এমডিএইচের তিনটি মশলা মাদ্রাজ কারি পাউডার, সম্ভার মশলা পাউডার ও কারি পাউডারের মধ্যে এভারেস্টের ফিশ কারি মশলায় কীটনাশক ও ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এই রাসায়নিক দিনের পর দিন শরীরের গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। তিনটি দোকান থেকে মশলার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই নমুনার মধ্যে এই কীটনাশক ও ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তারপরেই সেন্টার ফর ফুড সেফটি সব দোকানে মশলা বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।


খাদ্য নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ধারণকারী খাদ্য শুধুমাত্র তখনই বিক্রি করা যেতে পারে যদি তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়।এই নিয়মগুলো মেনে চলতে ব্যর্থ হলে জরিমানা এবং কারাদণ্ড হতে পারে।


সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি জানিয়েছে, সেন্টার ফর ফুড সেফটি এভারেস্ট ফিস কারি মশলা ফেরত দেয়ার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে ইথিলিন অক্সাইড নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি রয়েছে। এই মশলা ব্র্যান্ডটির পণ্য সিঙ্গাপুরের এসপি মুথিয়া অ্যান্ড সন্স পিটিই লিমিটেড আমদানি করে। এসএফএ কোম্পানিকে এই পণ্য তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


ইথিলিন অক্সাইড কি?


ইথিলিন অক্সাইড একটি জীবাণুনাশক, ধোঁয়া, জীবাণুনাশক এজেন্ট এবং কীটনাশক হিসাবে কাজ করে। ভারতের মসলা বোর্ড ইথিলিন অক্সাইডকে ‘১০ দশমিক ৭ সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রায় দাহ্য, বর্ণহীন গ্যাস হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে৷


এটি প্রধানত চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে এবং মশলায় মাইক্রোবিয়াল দূষণ কমাতে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে উত্পাদিত হওয়ার পাশাপাশি, এটি জলাবদ্ধ মাটি, সার এবং নর্দমা স্লাজ থেকেও তৈরি করা যেতে পারে।


কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-


ভারতে খাদ্য সামগ্রীতে ইথিলিন অক্সাইড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির মশলায় ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফৌজদারি মামলারও ব্যবস্থা রয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


সরকার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন মসলা বোর্ডের কাছে পণ্যে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান যুক্ত না করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে।


মসলা বোর্ড বলছে, ভারতীয় ব্র্যান্ডের চারটি মশলা-মিশ্র পণ্য বিক্রির উপর হংকং এবং সিঙ্গাপুরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্পাইসেস বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর এবি রেমা শ্রী বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।


সূত্রগুলো বলছে, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের ঘটনার আগেও তারা নমুনা পরীক্ষা করে আসছিল। এখন পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মশলায় কোনও ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করছে তারা।


তারা আরও বলছে, এটি নমুনা নেওয়ার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। আমরা আগে যত নমুনা নিচ্ছিলাম তার থেকে এবার আমরা আরও দ্রুত এবং বেশি সংখ্যায় নমুনা নেব।


ইথিলিন অক্সাইডের স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলে?


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ইথিলিন অক্সাইডকে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এর ফলে এটি মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com