গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহত হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা প্রদান হ্রাস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন যে গাজায় নিহত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি তাকে বলতে চাই— যদি সত্যি আপনি (বাইডেন) এমনটা মনে করেন, তাহলে ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা পাঠানো হ্রাস করুন। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ কম থাকলে গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিহতের হারও হ্রাস পাবে।’
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা সহায়তা প্রদান হ্রাস করে, তাহলে ইইউও সেই পথে হাঁটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জোসেপ বরেল।
সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একই কথা আমাদের বেলায়ও প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি মনে করে যে গাজায় বেসামরিকদের গণনিধন যজ্ঞ চলছে, তাহলে আমাদেরও সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত আইন-বিধি পরিবর্তন করতে হবে।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। সেখানে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরেও নিয়ে যায় তারা। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৮ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ও মিসরের নিরলস চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ৭ দিনে নিজেদের কব্জায় থাকায় জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। পাল্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ’রও বেশি মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও।
হিসেব অনুযায়ী, হামাসের কব্জায় এখনও ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে। তাদের ফিরে পেতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছেন জিম্মিদের স্বজনরা। ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের একাংশও যোগ দিয়েছেন আন্দোলন কর্মসূচিতে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে দেশটির পাশে থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ অক্টোবরের হামলার পরও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়েছিল এবং গত চার মাসে ত সাড়ে ৩ মাস ধরে বার বার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছে হোয়াইট হাউস। এসব প্রচেষ্টার মধ্যে নির্বিচারে বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার, স্থল আক্রমণ নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি গাজা সংঘাত শেষে ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানের পথে আসার আহ্বান উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এসব আহ্বান-পরামর্শ কানে তোলার প্রয়োজন বোধ করছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টিও সামনে আনেন জোসেপ বরেল। তিনি বলেন, ‘সবাই তেল আভিভে যাচ্ছে, (নেতানিয়াহুর কাছে) হাতজোড় করে অনুরোধ করেছে- ‘দয়া করে এমন করবেন না, বেসামিরকদের রক্ষা করুন, এত মানুষ মারবেন না…কিন্তু তিনি কোনো কথাই কানে তুলছেন না। গাজায় আর কত মানুষ মারা গেলে তার টনক নড়বে? আর কত মৃত্যু চান তিনি?’
‘এর মধ্যে সম্প্রতি রাফায় অভিযান চালানোর জন্য সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের মানে কী? এই ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে কোথায় রাখা হবে? চাঁদে?’
সূত্র: রয়টার্স
বিবার্তা/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]