গত কয়েক বছর ধরে অর্থ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করছে চীন। এমনকি শ্রীলঙ্কার বহু প্রতীক্ষিত আইএমএফ ঋণের কিস্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও চীনের সক্রিয় ভূমিক আছে। তাই চীনের কোনো প্রস্তাবে ‘না’ বলা এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার জন্য অসম্ভব কঠিন। আর তাই এবার ডলারের মজুত কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে নাজেহাল শ্রীলঙ্কা চীনে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা বানর রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার কৃষি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আমলা গুনাদাসা সামারাসিংহে দেশটির সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বোয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামারাসিংহে জানান, চিড়িয়াখানায় পশু-পাখির যোগান দেওয়া এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রজনন বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি চীনা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ১ লাখ টোক ম্যাকাক প্রজাতির বানর কেনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার সরকারের তাতে সম্মতি আছে।
‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে, বিশেষ করে কৃষি অঞ্চলগুলোতে গত কয়েক বছর ধরেই বানরের উৎপাত শুরু হয়েছে। দেশের বেশ কিছু এলাকায় একরের পর একর জমির ফসল ও ফলমূল বানরের কারণে ধ্বংস হচ্ছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। এ কারণেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই শীর্ষ আমলা আরও বলেন, ‘আমরা কেবল কৃষিপ্রধান বিভিন্ন থেকেই বানর সংগ্রহ করব। সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোতে হাত দেওয়া হবে না। আর প্রথম চালানেই ১ লাখ বানর পাঠানো হবে— ব্যাপারটি এমন নয়। ধাপে ধাপে আমরা পাঠাব।’
শ্রীলঙ্কার কৃষি মন্ত্রী মাহিন্দা অমরাবীরা অবশ্য গত সপ্তাহেই চীনে বানর রপ্তানির আভাস দিয়েছিলেন। এক সভায় তিনি বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ১ লাখ টোক ম্যাকাক প্রজাতির বানর কিনতে চেয়েছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। চীনের ১ হাজারেরও বেশি চিড়িয়াখানায় প্রদর্শনের জন্য এই বানরগুলো রাখা হবে।
যে বিশেষ প্রজাতির বানর চীন কিনতে চায়, সেটির নাম টোক ম্যাকাক। এটি শ্রীলঙ্কার স্থানীয় প্রজাতির বানর। শ্রীলঙ্কার বাইরে অন্যান্য দেশে এই প্রজাতির বানর খুবই বিরল। এ কারণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনভারসেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এই বানরটিকে বিপন্ন প্রানীর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তবে শ্রীলঙ্কায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষি ফসল ধ্বংসের জন্যও দায়ী এই টোক ম্যাকাক। এমনকি মাঝে মাঝে মানুষকেও আক্রমণ করে এই বানর।
১৯৮৮ সালে বন্য প্রানী বিষয়ক আইন প্রণয়ন করে শ্রীলঙ্কা। সেই আইনে সব প্রকার বণ্যপ্রাণী হত্যা ও ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ডলারের মজুত তলানিতে নামার ফলে গত বছর তীব্র অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর সেই আইনে সংশোধন আনা হয়। নতুন সংশোধনীতে শ্রীলঙ্কার স্থানীয় ৩ প্রজাতির বানর, ময়ুর ও বন্যশুয়োর হত্যার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
বিবার্তা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]