জেরার মুখে পড়লেন টিকটক সিইও
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৮:০৭
জেরার মুখে পড়লেন টিকটক সিইও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মার্কিন কংগ্রেসে আইনপ্রণেতাদের কঠিন জেরার মুখে পড়েছিলেন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাও জি চিউ। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটির সামনে উপস্থিত হন তিনি।


এ সময় শাও জি চিউকে টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় জেরা করা হয়। মোটাদাগে দুটি বিষয় নিয়ে টিকটক সিইওকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। এগুলো হলো টিকটকের চীন সম্পৃক্ততা ও টিকটক ব্যবহারকারী কিশোর–কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা।


চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। অ্যাপটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য টিকটক কর্তৃপক্ষ চীনের হাতে তুলে দেয়। চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করে টিকটক। এ জন্য মার্কিন মুলুকে টিকটক নিষিদ্ধের দাবিও উঠেছে। এ দাবির পক্ষে রয়েছে অনেক আইনপ্রণেতাও।


২০২১ সালে টিকটকের সিইওর দায়িত্ব নেন শাও জি চিউ। এর আগে তিনি গোল্ডম্যান স্যাকসের ব্যাংকার ছিলেন। শাও জি চিউয়ের মতে, টিকটক এখন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত পার করছে। চলতি সপ্তাহে ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, টিকটক নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কিছু রাজনীতিক সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।


এমন উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যেও টিকটকের জনপ্রিয়তা কমেনি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। বিশেষত কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে অ্যাপটির তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরের নাগরিক শাও জি চিউ। এবারই প্রথম টিকটকের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিলেন।


শুরুতেই বাইটড্যান্সের নির্বাহীদের সঙ্গে শাও জি চিউয়ের সম্পর্ক ও যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলেন, বাইটড্যান্সের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জোরালো সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সময় কমিটির সামনে শাও জি চিউ সাফ জানিয়ে দেন, ‘বাইটড্যান্স চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের এজেন্ট নয়।’


রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা গুস বিরিরাকিস অভিযোগ করেন, কমবয়সী ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করছে টিকটক। এসব ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি ১৬ বছর বয়সী চেস নাসকার উদাহরণ দেন। মার্কিন এই কিশোর টিকটক করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছিল। পরে ওই কিশোরের মা–বাবা বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, টিকটকের কনটেন্ট কিশোর–কিশোরীদের নিজেদের ক্ষতি করতে উদ্বুদ্ধ করছে।


আইনপ্রণেতা নানেত্তে বারাগ জানান, তিনি তাঁর সন্তানদের টিকটক ব্যবহারের অনুমতি দেননি। তিনি টিকটক সিইওকে প্রশ্ন করেন, টিকটক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত বয়স কোনটি? চাইলেই কি শিশুরাও এটা ব্যবহার করতে পারে? জবাবে শাও জি চিউ জানান, তাঁর নিজের সন্তানও টিকটক ব্যবহার করে না।


এ জন্য অবশ্য তিনি সিঙ্গাপুরের আইনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। শাও জি চিউ জানান, তাঁর পরিবার সিঙ্গাপুরে বসবাস করে। সেখানে ১৩ বছরের নিচে কেউ টিকটক ব্যবহার করতে পারে না। আইন করে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সিঙ্গাপুর সরকার। তাই তাঁর সন্তানের টিকটক ব্যবহারের সুযোগ নেই।


মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে টিকটকের সিইও জানান, তারা ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় মার্কিন ব্যবহারকারীদের যাবতীয় তথ্য অভ্যন্তরীণ তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত করা হচ্ছে। এরপর দেশের বাইরের তথ্যভাণ্ডারে থাকা মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য ডিলিট করা হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এটির কাজ শেষ হতে পারে। তবে এই প্রকল্পের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনপ্রণেতারা।


ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট দলের আইনপ্রণেতা টনি কারদেনাসের প্রশ্ন ছিল, টিকটক কি একটি চীনা কোম্পানি? জবাবে শাও জি চিউ বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকটকের ধরন বৈশ্বিক। এর সদর দপ্তর সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস অবস্থিত।


অন্যদিকে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা নীল ডন টিকটক সিইওর কাছে সরাসরি জানতে চান, তাঁর প্রতিষ্ঠান মার্কিন নাগরিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত কি না। জবাবে শাও জি চিউ বলেন, গুপ্তরচরবৃত্তি শব্দের ব্যবহার সঠিক হবে না।


জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এমন অভিযোগ তুলে টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নির্বাহী আদেশ জারি করে টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের সঙ্গে মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ২০২১ সালে জো বাইডেন ওই আদেশ থেকে সরে আসেন। তবে বাইডেন প্রশাসন জানিয়ে দেয়, টিকটক যদি তার চীনা মালিকানায় থাকা শেয়ার বিক্রি করে না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।


২০২১ সালে টিকটকের সিইওর দায়িত্ব নেন শাও জি চিউ। এর আগে তিনি গোল্ডম্যান স্যাকসের ব্যাংকার ছিলেন। শাও জি চিউয়ের মতে, টিকটক এখন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত পার করছে। চলতি সপ্তাহে ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, টিকটক নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কিছু রাজনীতিক সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ব্যবহারকারীদের মধ্যে টিকটক দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ কোটির বেশি মানুষ এটি ব্যবহার করছেন।


পিউ রিসার্চের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় টিকটক। দেশটির ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৬৭ শতাংশের টিকটকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ শতাংশই নিয়মিত টিকটক ব্যবহার করে।


বিবার্তা/এমএ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com