শিরোনাম
অতিরিক্ত টিভি দেখাতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:০৩
অতিরিক্ত টিভি দেখাতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শহুরে মানুষের আবাসস্থলে প্রতিদিনের অন্যতম সঙ্গী হচ্ছে টেলিভিশন। সব বয়সী মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ এ যন্ত্র। তবে আজকাল অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় গ্রামের মানুষেরও টিভি দেখা বেড়ে গেছে। শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক না কেন, আপনি কী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে টেলিভিশন দেখছেন?


নিজের অধিকাংশ সময় ব্যয় করছেন টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে? তাহলে আপনার জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। আপনার এ অভ্যাসের কারণে অবধারিতভাবে ধেয়ে আসছে মৃত্যু। আপনার সুন্দর এই জীবনকে আপনিই অজান্তে মৃত্যুকূপের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।


অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা স্বাস্থ্য-গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেকার আইডিআই হার্ট এন্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তারা টিভি দেখার স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানার জন্যে পরিণত বয়সের আট হাজার আটশ’ মানুষকে বেছে নেন-যারা নিয়মিত দীর্ঘ সময় ধরে টেলিভিশন দেখেন। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এদের মধ্যে ৮৭ জন হৃদরোগে ও ১২৫ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।


গবেষণায় বলা হয়, টিভি সেটের সামনে যারা দৈনিক চার ঘন্টা বা তারও বেশি সময় কাটান, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে ৮০ ভাগ পর্যন্ত। শুধু তা-ই নয়, টিভি দেখা ছাড়াও শারীরিক পরিশ্রমহীন অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও এটি একইরকম সত্য। যারা সারাদিন অফিসে চেয়ারে বসে কাজ করেই কাটিয়ে দেন, আবার বাসায় এসেও টিভির সামনে সময় কাটান ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তারা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে।


আইডিআই হার্ট এন্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড ডানস্ট্যান বলেন, শরীরের ওজন ঠিক থাকলেও যারা এভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে সময় কাটান তাদের রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। তার মতে, টেলিভিশন নিজে কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু বিষয়টি মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন দৈহিক শ্রম না করে কিংবা কম পরিশ্রম করে অধিক সময় বসে থাকা হয়। আর এভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে একাধারে বসে থাকা আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে সবদিক থেকেই ভীষণ ক্ষতির। কারণ এ থেকে সূত্রপাত ঘটতে পারে মেদস্থুলতা, মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণসংহারী রোগব্যাধি ও মনোদৈহিক জটিলতা।


শিশুরাও আছে সমান ঝুঁকিতে: শিশুদের বেলায়ও এ ঝুঁকি কোনো অংশে কম নয়। অস্ট্রেলিয়ার একই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপরও টিভি আসক্তির প্রভাব নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা পরিচালনা করেন। গড়ে ছয় বছর বয়সী প্রায় নয় হাজার শিশুর ওপর তারা দীর্ঘদিন ধরে জরিপ চালিয়ে এর ফলাফলে বলেন, দিনে যারা দু-ঘণ্টার কম সময় টিভি দেখে, তাদের তুলনায় যারা দিনে চার ঘণ্টারও বেশি সময় বিভিন্ন চ্যানেলে ঘুরে বেড়ায় তাদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ৪৬ ভাগ বেশি। এক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত ওজন ছিলো কি না, সে বিষয়টি মূখ্য নয়। মূল বিষয় হলো, টেলিভিশন আসক্তি রোগ ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে।


কেবল পাশ্চাত্যে নয়, গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়েই বেড়ে চলেছে শিশু-মেদস্থূলতার হার। এর সাথেও মাত্রাতিরিক্ত টিভি দেখার একটি যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করছেন শিশু-বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস-এর পরামর্শ হলো, দু-বছরের কম বয়সের শিশুদের টিভি দেখা একেবারেই উচিত নয়। বয়স বাড়লে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান দেখা যেতে পারে, তবে তা-ও বড়জোর দিনে দুই থেকে এক ঘণ্টা, এর বেশি নয়।


সবার উদ্দেশে গবেষকদের পরামর্শ- জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে কর্মমুখী হোন। যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অযথা টেলিভিশনের সামনে বসে সময় কাটানোর পরিমাণ কমিয়ে দিন। কারণ এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।


এদিকে শুধু বড়রাই নন শিশুরাই আছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। সময় খুব মূল্যবান বিষয় যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে। আর শিশুর জন্য বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঠিক ব্যবহার না হলে একদিকে শিশুর যেমন শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি হবে না, তেমনি অসুস্থ শিশু পারিবারিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কোনো উন্নয়ন করতে পারবে না। এখনকার অনেক শিশুকেই দেখা যায়, টেলিভিশনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হতে। এ অভ্যাস শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।


অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা শিশুর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি কী করে :


১. অতিরিক্ত টেলিভিশন শিশুকে আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক করে।


২. শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাধা দিয়ে সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করে দেয়।


৩. শিশুর শারীরিক খেলাধুলার সময় কেড়ে নেয়। এতে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।


৪. শিশুর শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেয়। এতে ওজন বাড়ে।


৫. পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন কমিয়ে দেয়।


৬. সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।


৭. শিশুর স্বাভাবিক আচার-ব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলে।


৮. শিশুর মাথাব্যথা, চোখব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে।


৯. শিশুকে ধূমপান, মদ্যপানসহ মাদকে আসক্ত করে।


১০. অতিরিক্ত টেলিভিশন শিশুর ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা বাড়ায়।


প্রতিকার


১. শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাই আপনাকে আগে টিভি দেখা কমাতে হবে এবং অতিরিক্ত টিভি দেখার কুফল শিশুকে বোঝাতে হবে।


২. শিশুকে প্রতিদিন আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি টিভি দেখতে দেবেন না।


৩. শিশুর ঘুমানোর ঘরে টিভি রাখবেন না।


৪. শিশুর খাওয়ার সময় টিভি দেখাতে দেখাতে শিশুকে খাবার খাওয়াবেন না।


৫. টিভির বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। শিশুর জন্য যাতে টিভির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কমে।


৬. সপ্তাহে একদিন শিশুকে টিভি দেখা থেকে বিরত রাখুন।


৭. বাসার পড়াশোনা বা হাতের কাজ করার সময় শিশুকে টিভি দেখতে দেবেন না।


৮. মা-বাবা সবাই ব্যস্ত, শিশুটি তাদের কাজে বিঘ্ন বা জ্বালাতন করছে, এ অবস্থায়ও শিশুদের টিভি দেখাতে বসিয়ে এ বিষয়ে আসক্ত করবেন না।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com