শিরোনাম
শিশু হাসপাতালে রোগী কমলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৫
শিশু হাসপাতালে রোগী কমলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি মাসের শুরুর দিকে যেখানে ডেঙ্গু রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ঢাকা শিশু হাসাপাতালের চিকিৎসকরা, তবে মাসের শেষ দিকে সেই রোগীর চাপ কমতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু লক্ষন নিয়ে অর্ধশত শিশু হাসপাতালে আসলেও তাদের খুব কম শিশুর শরীরেই পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গুর উপস্থিতিতি। মাসের শেষের দিকে এই অবস্থার আরো উন্নতি হবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা।


সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে ও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে উঠে এসেছে এমন চিত্র ।


শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ তলার ১৫নং ওয়ার্ডের ডেঙ্গু সেলে গত সপ্তাহে যেখানে ৭৮ জন রোগী ভর্তি ছিলো, এই সপ্তাহে সেটা ৬৬ জনে নেমে এসেছে। কিছুদিন আগেও যেখানে দিনে ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হতো, রোগীর চাপে ফ্লোরে পর্যন্ত ঠাই হতো না, সেখানে এখন ৩ টি খালি সিট নজরে আসে। তবে এই হাসপাতালে এখনো প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু আসে ডেঙ্গু লক্ষন নিয়ে। তাদের মধ্যে হাতে গোনা ৫/৭ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে।



তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলেও যারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন তাদের অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে খুব কমই। তাই ডেঙ্গু নিয়ে খুব দ্রুতই আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই বলেও জানাচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ।


মিরপুরের বাসিন্দা নাজমা আক্তার। ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬ বছরের শিশু ইকরামকে নিয়ে গত ৮ দিন ধরে ভর্তি আছেন শিশু হাসপাতালে। তিনি বিবার্তাকে জানান, এখন আমার বাচ্চার জ্বর একটু কমই আছে। ডাক্তার বলেছেন অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও কেটে গেছে। আর ৩/৪ দিন পর হয়ত আমাদের ছারপত্র দিয়ে দিবে। বাকী যা চিকিৎসা আছে সেসব বাসায় থেকেই নেয়া যাবে।


৫ বছর বয়সী ছোট শিশু সৈকত। গত ৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি সে। সৈকতের মা মরিয়ম বিবার্তাকে বলেন, বাচ্চার জ্বর ছিলো ৪/৫ দিন ধরে। ডেঙ্গু হবে এমন কোন আশংকা শুরুতে করিনি। এলাকার ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ানোর পরে জ্বর তো কমেইনি, বরং বেড়ে যায়। রাতেই হাসপাতালে এনে ভর্তি করাতে হয়েছে ।


ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ বছরের ছেলে আরমান কে নিয়ে ৫ দিন ধরে হাসপাতালে আছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন। ছেলের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, শুরুর দিকে ওর অবস্থা বেশ নাজুক ছিলো। ৪ ব্যাগের উপরে রক্ত দিতে হয়েছে। প্লাটিলেটও সকাল বিকাল উঠানামা করছিলো। তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ্‌ বেশ ভাল অবস্থায় আছে। তবে প্লাটিলেট নরমাল না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।


তবে ডেঙ্গু নিয়ে এখনো তেমন খুশি হবার কিছু নেই বলে জানান ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার। তিনি বিবার্তাকে বলেন, রোগীর সংখ্যা কমছে মানে এই না যে রোগ টা চলে গেছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তারা কিন্তু আগের মতই খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করছে। অভিভাবকরা যদি আরেকটু সচেতন হন তবে অবস্থার উন্নতি হবে। অভিবাভকরা একটি ভুল করে থাকেন। জ্বর হলেই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক এনে খাইয়ে দেন। এতে সমস্যা তো সমাধান হয়ই না, বরং আরো জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এধরনের কেস প্রতিদিনই বাড়ছে।



অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এই চিকিৎসক আরো বলেন, যেহেতু একজন চিকিৎসক সবসময় শিশুর পাশে থাকতে পারছে না, তাই অভিভাবকের অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। জ্বর কমার পরেও বাচ্চাকে নজরে রাখতে হবে । খেয়াল রাখবেন, বাচ্চার হাত পা কখনো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে কিনা, সে নেতিয়ে পড়ছে কিনা, বা তার মাথা ঘুরছে কিনা। এসব কোন লক্ষন দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


আগামীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কি হবে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমাদের যে প্রেডিকশন মডেল আছে, সেটার তথ্য বলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এডিস মশার প্রকোপ খুব বেশি কমে আসবে না । সিটি কর্পোরেশন ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগে যদি মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত না রাখা হয় তবে ডেঙ্গু তো কমবেই না । বরং বেড়েও যেতে পারে ।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/শাহিন/এমও

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com