শিরোনাম
বৃষ্টি বাড়লে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার আশংকা
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০৩
বৃষ্টি বাড়লে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার আশংকা
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি মাসে রাজধানী ঢাকায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব। ডেডিকেটেড ৫টি বিশেষ হাসপাতালসহ প্রায় সকল হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর চাপ ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। দিনে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। তবে চিকিৎসকদের আশংকা , বৃষ্টি ও আদ্রতা বাড়লে এডিস মশার বিস্তার বাড়তে পারে। সেই সাথে বাড়বে ডেঙ্গু রোগী।


শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ঘুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এবং চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।



সরেজমিনে দেখা যায় , গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর প্রায় সবার অবস্থাই ছিল বেশ জটিল। ডেডিকেটেড ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বেশ কিছু খালি সিটও নজরে আসে। এর কারন হিসেবে জানা যায়, প্রাপ্ত বয়স্ক তুলনামূলক কম শারীরিক জটিলতার ডেঙ্গু রোগীদের সুস্থ হবার সম্ভাবনা বেশি। ফলে তাদের কে হাসপাতাল থেকে বাসায় বিশ্রাম নিতে উপদেশ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা ।


হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে এই বছরের জুলাইতে ২২৮৬ জন, আগস্টে ৭৬৯৮ জন এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই রোগী ভর্তি হয় চার হাজারের বেশি। আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রতিদিন ৩০০ এর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে এই হাসপাতালে। গত দুই সপ্তাহে মারা গেছেন ১০ জন রোগী। মাসের শেষের দিকে এই সংখ্যা আরো বাড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। সেই সাথে অতি বৃষ্টি ও আদ্র আবহাওয়ার ফলে ডেঙ্গুর এই বিস্তার বেড়ে যাবার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা ।


বরগুনার বাসিন্দা পারভিন আক্তার গত পাঁচদিন থেকে বরিশালের শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এক মাসের মধ্যে পারভিন আক্তারের পরিবারের অন্তত দশজন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। তিনি নিজেও প্লাটিলেট জটিলতায় ভুগছেন।


পারভিন বিবার্তাকে জানান, আমার এক ভাই ডেঙ্গুতে মারা গেছে, তাকে দেখতে ঢাকা থেকে তার শ্যালক আর তার স্ত্রী এসেছিল। তার পর থেকেই আমাদের বাড়ির আট-নয়জনের ডেঙ্গু হয়েছে। আমি নিজেও শরীরের সাথে যুদ্ধ করছি। এখন আল্লাহ্‌ শেষ ভরসা।


ঢাকার পাশের জেলা গাজিপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা গার্মেন্টস কর্মী সোহেল জানান, আমার অন্য কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করে জ্বর, মাথা ব্যাথা। ৭ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। ডাক্তার বলল আরো ৩ দিন দেখে তারপর ছুটি দিয়ে দিবে। আমি যে কারখানায় কাজ করি তার পাশে ছোট ছোট ডোবা বৃষ্টির পানিতে ভরে যায়। আমার মনে হচ্ছে সেখান থেকেই ডেঙ্গু হয়েছে আমার। মশার ওষুধ কখনো ছিটানো হয়, কে ছিটায় আমরা কিছুই জানি না।



ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার মাহফুজা সুলতানা বিবার্তাকে বলেন, যেহেতু বৃষ্টি একটু কমে আসছে, তাই গত সপ্তাহের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। যদি আবার বৃষ্টি বাড়ে তবে মশার ব্যাপক বংশবিস্তার হবে। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে মৃত্যু হার তুলনামুলকভাবে কম। তবে নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে যারা আসছেন তাদের সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের ক্ষেত্রে রক্ত বা প্লাটিলেটের ডোনার পেতে কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া আমরা আমদের সাধ্যমত ডেঙ্গুর সকল সাপোর্টিভ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনো নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই আছে সবকিছু ।


ডেঙ্গুর পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ চন্দ্রিমা ইমতিয়া জানান, বৃষ্টির পানি জমা স্থানগুলো এডিস মশার লার্ভার বিস্তার ও প্রজননের সবচেয়ে অনুকূল স্থান। যেখানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় জন্মায়। ফলে বৃষ্টি যত বাড়বে, তত খোলা জায়গায় পানি জমবে। আর সেখানে ৩-৭ দিনের মধ্যে এডিস মশা প্রজনন শুরু করবে।


উল্লেখ্য , গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন ১৬৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪০ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন।


বিবার্তা/আদনান/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com