শিরোনাম
ক্রান্তিলগ্নে বিজিএমইএ হতে পারতো মানবিক সংগঠন
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ২০:৪৩
ক্রান্তিলগ্নে বিজিএমইএ হতে পারতো মানবিক সংগঠন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাসহ দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-কারখানা কঠিন সঙ্কটে নিমজ্জিত হতে শুরু করলে সরকার তৈরি পোশাক শিল্প খাতে ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেন।


করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আগত করলে শ্রমিকদের নামে গত বছরের মতো এবারও ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রণোদনা চেয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।


এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন বোনাসের জন্য নতুন প্রণোদনার দরকার হবে। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস একসঙ্গে দেয়া গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে পুরনো প্রণোদনার টাকা ফেরতের জন্য সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। নতুন করে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা লাগবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।


কিন্তু প্রশ্ন হলো শ্রমিকরা যদি কাজই করে থাকেন, তাহলে তাদের শ্রমশক্তির দাম সঙ্গে সঙ্গে মিটিয়ে দিচ্ছেন না কেন? ঢাকা শহরের সবচেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম হলো গার্মেন্টস শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে আবার অধিকাংশই হলো নারী শ্রমিক। প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই এসব গার্মেন্টস শ্রমিকরা হেঁটে তাদের কর্মক্ষেত্রে যান। সারাদিন তারা একটানা কাজ করে রাতে ঘরে ফেরেন।


জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার যদি পোশাক শিল্প খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে পারে; তাহলে পোশাক শিল্প খাত থেকে শিল্প মালিকরা তাদের দীর্ঘদিনের অর্জিত আয়/মুনাফা থেকে কি সরকারকে এই ক্রান্তিকালে কিছু দিতে পারতো না? সরকারকে না দিক অন্তত তাদের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা দিতে পারতেন। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ‘মহামারিকালে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।’ বাজারের ঝুঁকি নেন বলেই পুঁজিপতিরা মুনাফার ভাগ পান। সেই ঝুঁকির মুখে যদি তার ব্যবসার ক্ষতি হয় তাহলে তার দায় শ্রমিক কেন নেবেন?


অন্যদিকে অনেক কারখানাই করোনাকালীন সময়ে চালু ছিল। চাকরি বাঁচাতে অনেক শ্রমিক ঢাকায় ফিরতে থাকেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় সর্বত্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিগত ২০ বছর বিজিএমইএ গার্মেন্টস খাত থেকে ব্যবসা করেছে। প্রত্যেকটা ক্ষমতাসীন সরকারই তাদের ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে বা পাশে থেকেছে। এমনকি বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বড় অংকের প্রণোদনা দিয়েছে, লকডাউনেও কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। করোনাকালে সরকারের থেকে গার্মেন্টস মালিকরা বা রপ্তানিমুলক কারখানার মালিকরা যত সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন তা আর কোনো ব্যবসায়ীরা পাননি।


অথচ মহামারিতে তারা তাদের শ্রমিকদের (যাদের পরিশ্রম ও ঘামে আজকের বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা) বেতন-ভাতা ঠিকমতো দিতে পারছে না। বিজিএমইএ এর উচিৎ ছিল নিজেদের স্বার্থে ও মানবিকতার খাতিরে শ্রমিকদের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেদের অর্থায়নে টিকা আমদানি করে সে সমস্ত শ্রমিকদের চিকা কর্মসূচির আওতায় আনা। এতে শ্রমিকদের যেমন করোনা ঝুঁকি থেকে বাঁচানো যেতো, কারখানাগুলো পূর্ণ রূপে খোলাও রাখা যেত। তেমনি সরকারের করোনা ঝুঁকি নিরসন কার্যক্রমে সহায়তার পাশাপাশি সোশ্যাল রেসপনসেবলিটিও পালন করা হতো ! আর এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টিকা দেয়া সমাপ্ত হলে তারপরেই সরকারকে গার্মেন্টস খোলার ব্যাপারে প্রেশার দেয়া উচিৎ ছিল। করোনা কবে যাবে আমরা কেউই জানিনা, সরকার ঘোষিত লকডাউনের মাঝে গার্মেন্টস খোলা রেখে শ্রমিকদের চাকরিতে যোগ দিতে অনবরত বাধ্য করা হলে একসময় এই শ্রমিকরা বেঁকে বসতে পারে। কারো জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান আর কিছু নাই। তখন তৈরী পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।


শ্রমের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় শ্রমিক শেষতক উৎপাদনের উপর আগ্রহ হারিয়েছে বলেই এদেশ থেকে পৃথিবী বিখ্যাত মসলিন বিলুপ্ত হয়েছে। পাকিস্তান আমলের জুট, টেক্সটাইল, সুগারসহ রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানায় উৎপাদন মার খেয়েছে শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি না দেয়ার ফলেই। তৈরী পোশাক শিল্প বেঁচে থাকুক শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সহযোগিতায়।


(জিসান মাহমুদের ফেসবুক থেকে)


বিবার্তা/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com