কেজি ১০৪ টাকা দরে কেনা খেজুর বিক্রি ১৩’শ টাকায়
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ২২:১৮
কেজি ১০৪ টাকা দরে কেনা খেজুর বিক্রি ১৩’শ টাকায়
বিবার্তা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের পাইকারি ফলের বাজার ফলমণ্ডিতে অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন। বাড়তি দরে ফল বিক্রি করায় সেবার সাত ব্যবসায়ীকে জরিমানা গুনতে হয়েছিল। রাজস্ব ফাঁকি দিতে এখানকার ব্যবসায়ীরা উন্নতমানের খেঁজুরকে নিম্নমানের দেখিয়ে আমদানি করেন।


পরে আমদানিকারক, কমিশন এজেন্টদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে এসব কেনা দরের থেকে চারগুণ বেশি দরে বিক্রি করেন তারা। আর এসবের নেপথ্যে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন। শনিবার (২৫ মার্চ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।


অভিযানে আমদানি নথি যাচাই করে দেখা গেছে, ফলমণ্ডি বাজারে ১২ জন খেঁজুর আমদানিকারক রয়েছেন। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪০ হাজার ২৪ মেট্রিক টন খেঁজুর আমদানি হয়েছে। এগুলো কেজিপ্রতি গড়মূল্য ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা। এরমধ্যে আমদানিকারক ‘আল্লাহর রহমত স্টোর’ গত চার মাসে ৩৩টি এলসির মাধ্যমে ২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন খেঁজুর আমদানি করেন কেজিপ্রতি ৭০ টাকা ১৪ পয়সা দরে।


‘আলী জেনারেল ট্রেডিং’ ১৬৮ মেট্রিক টন খেঁজুর কেজিপ্রতি ১০৪ টাকা দরে আমদানি করেছে। অথচ ফলমণ্ডির ব্যবসায়ীরা জাহিদি, নাসার, আল মাদাফ, ফারাহ জাতের খেঁজুর আমদানি মূল্যের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ দামে খেঁজুর বিক্রি করছে।


অর্থাৎ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আজওয়া ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, মাবরুম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, মরিয়ম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, দাবাস: ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মেজডুল খেঁজুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও আলজেরিয়া খেঁজুর ২৫০ থেক ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


বাড়তি দরে খেঁজুর বিক্রি করায় ফলমণ্ডির পাইকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ‘আল্লাহর রহমত স্টোর’কে ৫০ হাজার টাকা, আলী জেনারেল ট্রেডিংকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তম খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং মদিনা ট্রেডিংয়ের হয়ে চট্টগ্রামে চড়া দামে খেঁজুর বিক্রি করায় ফ্রেশ ফ্রুট গ্যালারিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।


জানা গেছে, অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেড ৯ হাজার ২১১ মেট্রিক টন খেঁজুর কেজি প্রতি ৮৪ টাকা ৬৪ পয়সা দরে আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আজওয়া, মেজডুল, মাবরুক, সাফওয়া, মরিয়ম ইত্যাদি উন্নত জাতের খেঁজুর আমদানি করে সেগুলো কম দাম দেখিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে। এতে করে তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সে খেঁজুর চড়া দামে বিক্রি করছে। জাতভেদে খেজুরের দাম পাঁচশত থেকে হাজার টাকার উপরেও বিক্রি হচ্ছে। মদিনা ট্রেডিংও একই ভাবে খেঁজুর স্বল্পমূল্যে আমদানি এবং চড়া মূল্যে বিক্রি করছে।


ফল ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুর উদ্দিন চড়া দামে বিক্রি করতে পাইকারি খেঁজুর ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টদের বাধ্য করছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুর উদ্দিনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব ও শুল্ক ফাঁকি দিতে উন্নত জাতের খেঁজুরকে নিম্ন জাতের খেজুর দেখিয়ে আমদানি করেছে ব্যবসায়ীরা। সে খেঁজুর আবার ফলমণ্ডিতে তিন থেক চারগুণ চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত ফলমণ্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাভপতি, সাধারণ সম্পাদক, আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টরা সিন্ডিকেট করে বাড়তি দরে খেঁজুরসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করছেন।


বিবার্তা/জাহেদ/নয়ন


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com