নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৪
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাজারের তারল্য সংকট এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এই দুই চ্যালেঞ্জকে ঘিরে (২০২২-২০২৩) অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মাসিকের (জানুয়ারি-জুন) জন্য রোববার (১৫ জানুয়ারি) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আগামী ১৫ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নরসহ বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্র উপস্থিত থাকবেন।


১২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।


আগে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়।


তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির। নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয় আগের মতো আবারও প্রতি ছয় মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে। অবশ্য বছরে দুটি মুদ্রানীতি দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে।


মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।


নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখা মুদ্রানীতির মূল কাজ। তবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ এখনো চলছে। রোববারের আগেই চূড়ান্ত হবে। যেহেতু এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাই কিছু বলা যাবে না। ১৫ জানুয়ারি সবাইকে জানাতে পারব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ডলারের সংকট চলছে। আবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করায় প্রচুর টাকা চলে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কমেছে টাকার সরবরাহ। ফলে তারল্য সংকটে পড়েছে বেশ কিছু ব্যাংক। এ অবস্থায় বাজারে টাকার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুটির সমন্বয় করে কিছুটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির দিকে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাত বিশেষ করে কৃষি খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন নীতিতে।


চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু সবশেষ নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।


বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণে জোর দেবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এই অংক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) ব্যাংক থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। তবে অন্যদিকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ শোধ করেছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে যা ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন কিছুটা কমানো হয়েছিল।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ৫ম মাস নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং জুলাইয়ে মাসে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।


বিবার্তা/এমএ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com