শ্বাসনালীসহ শরীরের ৩৫% পুড়েছে, ভালো নেই অভিনেত্রী আঁখি!
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫৯
শ্বাসনালীসহ শরীরের ৩৫% পুড়েছে, ভালো নেই অভিনেত্রী আঁখি!
বিনোদন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অভিনেত্রী শারমিন আঁখির শারীরিক অবস্থা গত দুই দিনের মতো এখনও অপরিবর্তিত। মাঝে কিছুটা ভালো হলেও পরবর্তী সময়ে তার রক্তের প্লাজমা দ্রুত কমতে থাকে। তবে বর্তমানে তাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনও তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের এইচডিইউতে রেখেই চলছে তার চিকিৎসা।


শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে শ্যুটিং সেটে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বাংলাদেশি ছবি তথা নাটকের জনপ্রিয় মুখ শারমিন আঁখি।


শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, অগ্নিকাণ্ডে আঁখির শরীরের ৩৫ শতাংশ ফ্লেম বার্ন হয়েছে। বর্তমানে ফিমেল হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ভর্তি আছেন তিনি। কিন্তু এখনও তাকে আমরা শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না।


ঢাকার মিরপুরে একটি নাটকের সেটে অগ্নিদগ্ধ হন অভিনেত্রী। মেকআপ রুমে শর্ট সার্কিট থেকে ঘটা বিস্ফোরণে অভিনেত্রীর শরীরের হাত-পা সহ শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। 


মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেছেন, 'আঁখি গত দু'দিন মতোই আজ মঙ্গলবারও একই অবস্থায় রয়েছেন। অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি'। 


চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘শারমিন আঁখির শ্বাসনালীসহ শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর ইনহালেশন বার্ন রয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছে। আমরা নিয়মিত তাঁকে ফলোআপের উপরে রেখেছি। তাঁর সব ধরনের চিকিৎসা চলছে।’


মিরপুরের একটি নতুন শ্যুটিং সেটে ‘অমীমাংসিত প্রেম’ নাটকের কাজ চলছিল। আচমকাই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায় গোটা ইউনিট। হালকা করে কেঁপে ওঠে গোটা শ্যুটিং সেট। এরপর দেখা যায় মেকআপ রুমের দরজা, জানলা ভেঙে গিয়েছে। 


পরিচালক আশফাকুল আলম বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'আমরা প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আঁখি পরের দৃশ্যের জন্য একাই মেকআপ রুমে রেডি হচ্ছিল। গিয়ে দেখি তাঁর অবস্থা খারাপ—হাত, পায়ের চামড়া পুড়ে গেছে। তখনই আমরা মিরপুর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করি।’


শারমিন আঁখির স্বামী নাট্য পরিচালক রাহাত কবির ঘটনার সময় শ্যুটিং সেটের নীচে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘শব্দ শুনে সঙ্গে সঙ্গে ওপরে যাই। গিয়ে দেখি আঁখির হাত, পা, মুখ পুড়ে ঝলসে গিয়েছে।….পরে চিকিৎসকেরা হাতের কনুই পর্যন্ত চামড়া কেটে ফেলেছেন, ঊরুর চামড়াও কাটতে হয়েছে। মুখের কিছু অংশ পুড়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা গুরুতর।’


রাহাত আরও জানান, অভিনেত্রীকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটে। আঁখি জানিয়েছেন চুল স্ট্রেট করছিলেন তিনি। এরপর সকেট থেকে স্ট্রেটনারের প্লাগ খোলবার পরেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়, আর কিছু মনে নেই তাঁর। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা বাথরুমে কোনও কারণে গ্যাস জমে ছিল। এরপর স্ট্রেটনারের শট সার্কিট থেকে তৈরি বৈদ্যুতিক স্পার্কে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। ওই মেকআপ রুমের একদম লাগোয়া বাথরুমটি। ‘অমীমাংসিত প্রেম’ নাটকের শ্যুটিং আপতত বন্ধ। গোটা ইউনিট জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ।


এদিকে তার স্বামী নির্মাতা রাহাত কবির মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকের জন্য তা হুবহু প্রকাশ করা হলো।


‘কিছু লেখার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। আঁখিকে নিয়ে যেই যুদ্ধটা করে যাচ্ছি গত তিন ধরে, এর মধ্যে আমাকে কিছু লিখে ব্যাখ্যা দিতে হবে নিজেদের সহকর্মীদের কাছে এভাবে ভাবতেই এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমার এবং আমার পরিবারের প্রয়োজন একটা মোরাল সাপোর্ট। পারলে এইটুকু নিশ্চিত করেন। না পারলে সচেতন নাগরিক হওয়ার চেষ্টায় ফেসবুকে সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে মানসিকভাবে দুর্বল করেন না। সহকর্মী হিসেবে পারলে আমাদের পাশে থেকে সাহস দেন। ফেসবুকে ঝড় তোলার সময় অনেক পাবেন। যারা লিখছেন তারা এসব না লিখে পাশে থাকেন। আর সেটা না পারলে এসব লিখে আর মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেন না। আঁখি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ওর জন্য দোয়া করেন। আঁখির দুই হাত, দুই পা, মুখের একাংশ অগ্নিদগ্ধ। আপনাদের দোয়াই ওকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারবে। আখির সামনে একটা এক বছরের যুদ্ধ।


অনলাইন নিউজ পড়ে ধূমপান নিয়ে আমার সহকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন সবাইকে সাবধান করে, আপনারা চাইলেই আমাকে কল করে জেনে নিতে পারতেন কি হয়েছিল। এমন নয় আমার নম্বর আপনাদের কাছে নেই, বা আমাকে আপনারা কেউ চেনেন না। যারা লিখেছেন তাদের কাছেই প্রশ্ন - বাথরুমে সিগারেটের টুকরো পাওয়া গেছে এটা হাইলাইটস না করে বাথরুমে কেন মিথেন গ্যাস ছিল এটা প্রশ্ন করছেন না? সিগারেটটাই এখন বড় অপরাধ, মিথেন গ্যাস নয়। বাথরুমটা সাফোকেটেড ছিল কেন এই প্রশ্ন করছেন না কেউ? একটা এক্সস্টেড ফ্যান থাকা সত্বেও এয়ার পাসিং সিস্টেম প্রপার নয় কেন এই কথা মনে আসছে না কারও। সবচেয়ে সাধারণ বিষয় ধূমপান মেকাপ রুমেই সবাই করে। বাথরুমে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ করে না। এটা বোঝা সিম্পল কমনসেন্সর বিষয়। আমার জানামতে কোনো ফিমেল আর্টিস্ট কেমেল সিগারেটের মতো কম দামের সিগারেট খায় না। বাথরুমে পাওয়া কেমেল সিগারেটের একটা টুকরো দিয়ে প্রমাণ হয় না বিস্ফোরণের কারণ ধূমপান। কেমেল, ডারবি, স্টার সিগারেট আমি কোনো শিল্পীকে কখনও খেতে দেখিনি। নারী শিল্পীরা বাথরুমে গিয়ে স্প্রে করবে এটা কখনও দেখিনি বা শুনিনি। সবসময় মেকাপ রুমেই স্প্রে ব্যবহার করতে দেখেছি। পুলিশের এই ব্যাখ্যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।


অনলাইন পত্রিকার আমার যেই সাংবাদিক বন্ধুরা লিখছেন তারা কম বেশি প্রতিবেদন করার আগে আমাকে কল করেছেন, কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। কিন্তু লেখার সময় এই বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে অধিক ক্লিক বিটের জন্যে হেডলাইন করছেন ‘ধূমপান’ শব্দটিকে। যেখানে হেডলাইনে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল একটি প্রফেশনাল শুটিং হাউজের বাথরুমে মিথেন গ্যাস কীভাবে জমে থাকে। সিগারেটের আগুন দিয়ে কখনও একটা বাথরুমের দরজা ব্লাস্ট হয়ে ভেঙে পড়ার কথা না। বিষয়টা এমন হয়ে যাচ্ছে কোন কমার্শিয়াল স্পেস সাফোকেটেড হয়ে মিথেন গ্যাসে পরিপূর্ণ থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের ভাড়া দিচ্ছেন, তাদের সাবধানে ধূমপান করতে হবে। আমি তো দুর্ঘটনার সময় থেকেই আখির পাশেই ছিলাম। আখির কাছে যেটা জানতে পেরেছি, সেটা আবারও বলছি। মেকাপ রুপ থেকে হেয়ার মেশিনের কাজ সেরে বাথরুমে যাওয়ার পর লাইটের একটা ফ্লিক অনুভব করে চোখে দেখি সেকেন্ডের জন্যে। এরপর ওর কিছু মনে নেই ব্লাস্টের শব্দ ছাড়া। প্রপার ইনভেস্টিগেসন রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে মনগড়া লেখা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। এটা একটা দুর্ঘটনা।দয়া করে ঘটনা কীভাবে ঘটেছে এটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সবাই আখির জন্য দোয়া করেন। পাশে থাকেন। ও আপনাদেরই সহকর্মী। পোস্টটি ফ্রেন্ডস করা। এই ব্যাখ্যা শুধুমাত্র আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের জন্য।’


দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন শারমিন আঁখি। শুরুতে বেশ কিছু কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১০ সালে নার্গিস আক্তারের ‘ভালোবাসা কি করে ভালো হয়’ নাটকের অভিনয়। পরে নাটক, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও মডেলিং শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে নাম লেখান সিনেমায়। প্রথম সিনেমা ছিল ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’। এই সিনেমার ১১ জন নির্মাতার ১১টি গল্পের মধ্যে ‘জিন্নাহ ইজ ডেড’-এ অভিনয় করে প্রশংসা পান আঁখি। পরে তিনি নাম লেখান, ‘কোনো এক কালে’, ‘জাস্ট এ জোক ডার্লিং’সহ বেশ কিছু সিনেমায়। গত বছর শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘বলি’তে পতিতার চরিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেন।


জানা যায়, আঁখির বেড়ে ওঠা চট্রগ্রামে। সেখানে মঞ্চনাটকদের দল ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়’ অভিনয়ে হাতেখড়ি। এই দলের তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকের বসন্ত চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। তারপর থেকে তাঁর অভিনয়ের দিকে ঝোঁক বাড়ে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com