সহিংসতায় রাবিতে ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা: উপাচার্য
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ২০:২১
সহিংসতায় রাবিতে ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা: উপাচার্য
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন আবাসিক হল পরিদর্শন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।


২৮ জুলাই, রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল থেকে পরিদর্শন শুরু করেন তিনি। পরে নবাব আব্দুল লতিফ হল, মাদার বখশ হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য।


তিনি জানান, ১৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, এতে প্রশাসনিক ভবনসহ ৯টি হলের ১৫৮টি কক্ষে ভাংচুর করা হয়। এতে আনুমানিক ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি হল বসবাসের উপযোগী নয়। জানালা পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। আগুনের শিখায় ছাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করতে হবে। তারপর হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।


রাবি উপাচার্য বলেন, সহিংসতার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম একরাম উল্লাহকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুলকে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং কী করণীয় (সুপারিশ) সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এজন্য কমিটিকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।


উপাচার্য আরও বলেন, এরই মধ্যে আবাসিক হলগুলোর প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। তাতে দেখা গেছে ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার কোটি টাকা। এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও হলগুলোকেও বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বেশ কিছু হল এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কেউ দেখলে তার মনে আঘাত লাগবে। তাই আমরা চাই না যে শিক্ষার্থীরা এসে এসব দেখুক। আমরা এসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।


উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতা ঘটে গেছে তা খুবই দুঃখজনক। প্রথমে যে আন্দোলন হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিলো। কিন্ত গত ১৬ তারিখে একটা দুর্বৃত্তায়ন হয়ে গেল এখানে। বহিরাগতরা ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও করে এই ক্যাম্পাসে। ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছিলাম। কিন্তু আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা বাইরে গিয়ে জানালো তাদের থেকে মাইক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বহিরাগতরা ঢুকেছে এখানে, তাদের হাতে আন্দোলন নেই। তখনই বুঝতে পারলাম যে খারাপ দিকে যাচ্ছে বিষয়টা।


তিনি বলেন, ওইদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের অবরুদ্ধ করেনি। আমরা লক্ষ্য করলাম বাইরে থেকে প্রচুর বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুইসেল বাজিয়ে ঢুকতে শুরু করলো। তারা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে ইলেকট্রিসিটি লাইন কেটে, জেনারেটর বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। এতে আমার সঙ্গে থাকা প্রায় অর্ধশত শিক্ষক এবং প্রায় শতাধিক কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে তারা নাশকতা করবে। এরপর আমরা একরকম বাধ্য হয়েই খবর দিলে এখানে থাকা যৌথ বাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করে।


রাবি ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সেই সময় তারা লক্ষ্য করেছেন যে বিষয়টি এলে কোটা আন্দোলনকারীদের হাতে আর নাই, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।


তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তারা শুধু এতেই শান্ত হননি। ১৮ জুলাই প্রশাসনের জানাজা পড়িয়েছে। জানি না কোনো ধর্মীয় বিধানে তা আছে কি না। তারা তো ধর্মের কথা বলে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে।


শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. নাসিরুদ্দিন বলেন, ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আড়ালে একদল কুচক্রী হলে প্রবেশ করে প্রায় ১১টি কক্ষে ভাংচুর চালায়। এতে অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।


এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর, রেজিস্ট্রার ড. তরিকুল হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পান্ডে, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সরকার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিমা আক্তার, পরিবহন দফতরের প্রশাসক মোকছিদুল হক, লিগ্যাল সেলের প্রশাসক ড. সাদিকুল ইসলাম সাগর ও সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com