মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুই উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া ও রি-ডেলিভারি পর্যন্ত বিমান ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী ও জিএমসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

৬ ফেব্রুয়ারি, সোমবার দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানান।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও।

উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সেই কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারি কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমান। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের।

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরে গত বছরের ১ জুন দুদক ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রধান কার্যালয় হতে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব অভিযান চালানো হয়েছিল। মাঝে বদলিজনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয়।

দুদক সচিব জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে দুটি মিশরীয় এয়ারক্র্যাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব কমিটির প্রতিবেদন, বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

মামলাতে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন - আসামী ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ (৬২), সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্স, মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক (৬৩), সাবেক ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার, মো. আবদুর রহমান ফারুকী (৫৫), মহা-ব্যবস্থাপক, শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ (৫৫), সাবেক মূখ্য প্রকৌশলী, দেবেশ চৌধুরী (৬৩) সাবেক মূখ্য প্রকৌশলী, গোলাম সারওয়ার (৭৩), Airworthiness Consultant, CAAB, মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা (৫১) প্রকৌশলী, কামাল উদ্দিন আহমেদ (৫২), ডিজিএম, এ আর এম কায়সার জামান (৫৬), প্রধান প্রকৌশলী, শরীফ রুহুল কুদ্দুস (৫৩) প্রিন্সিপাল ইঞ্জি.(কাস্টমার সার্ভিস), মো: নজরুল ইসলাম শামিম(৬৫), সাবেক ক্যাপ্টেন, জিয়া আহমেদ (৪৯) উপমহাব্যবস্থাপক (এওসি, এসিপি) কাজী মোসাদ্দেক আলী (৬৫), সাবেক চিফ পার্সার, মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক (৫০), ফ্লাইট পার্সার, মো. আজাদ রহমান(৫৭), ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মো. আব্দুল কাদির(৫৭), সাবেক ব্যবস্থাপক, মো. শাহজাহান(৬৩), সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী, মো: জাহিদ হোসেন(৫৭), সাবেক ইঞ্জিনিয়ার অফিসার, মো. ফজলুল হক বসুনিয়া(৫৭), সহকারী ব্যবস্থাপক, মো. আতাউর রহমান(৫১), ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন) (৬৫), চীফ পার্সার, শাহনাজ বেগম ঝর্ণা(৫০), ফ্লাইট পার্সার গাজী মাহমুদ ইকবাল(৫৯)।

বিবার্তা/সানজিদা/জামাল