শিরোনাম
ওরা ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে: র‌্যাব
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৫৫
ওরা ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে: র‌্যাব
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে রাস্তা থেকে অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেছিলো একটি চক্র। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগের পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।


গ্রেফতারকৃতরা হলো- রিপন সরদার, আহমেদুল কবির খান কাজল, মোসলেম উদ্দিন বাপ্পি, মোহাম্মদ আসলাম ও রশিদ চাকলাদার। তাদের কাছ থেকে দুটি ডিবির জ্যাকেট, দুটি খেলনা পিস্তল, একটি হাতকড়া, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেটকার ও নগদ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।


বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।


সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমের উদ্ধৃতি দিয়ে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, ‘তোমার বাবা লুৎফর রহমানকে আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তিনি আমাদের জিম্মায় ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে আছে। আমাদের টাকা দিলে তোমার বাবাকে ছেড়ে দেবো।’ পরে লুৎফর নামে ওই ব্যবসায়ীকে রুমে আটকে মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেয়ার একটি ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না দেয়া হলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি।


র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশভূষা ধারণ করে এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা ও খুনসহ নানান অপরাধ করছিলো। নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে ডিবির জ্যাকেটের মতো জ্যাকেট ব্যবহার, ওয়াকিটকি ও অস্ত্রবহন করতো। এছাড়া তারা ‘ডিবির স্টিকার’ তৈরি করে মাইক্রোবাস বা বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করছিলো।


গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় পিস্তলসহ লুৎফর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে ছয়-সাতজন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে ওঠানোর পর লুৎফর রহমানের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে গাড়ির ভিতরে ওই ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে লুৎফরকে বলা হয়, ‘তোকে মুন্সিগঞ্জ বিলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছি, আমাদের ১০ লাখ টাকা না দিলে তোকে জানে মেরে ফেলবো।’


ভুক্তভাগী তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায়। পরদিন রাতে (২৬ নভেম্বর) অপহৃত ব্যবসায়ীকে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফোন করে তার ছেলেকে বলা হয়, ‘তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তোমার বাবা আমাদের ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে আছে। আমাদের টাকা দিলে আমরা তোমার বাবাকে ছেড়ে দেবো।’


লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ব্যবসায়ী লুৎফরকে তুলে নিয়ে মোসলেম উদ্দিন বাপ্পির বাসায় নেয়া হয়। এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভুক্তভোগীর ছেলে বিকাশ ও নগদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এক লাখ টাকা পাঠায়। পরে আরো টাকার জন্য পুনরায় চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারকে পাঠানো হয়। মুক্তিপণ দেয়া না হলে তাকে (লুৎফর) মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।


এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পাশাপাশি র‌্যাব-১কে বিষয়টি জানায়। পরে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাকৃতরা জানিয়েছে, তারা একটি অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতো। বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হত্যার হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করছিলো।


বিবার্তা/খলিল/জেএইচ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com