শিরোনাম
ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ ‘ঝাক্কি’
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২১, ২০:৪০
ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ ‘ঝাক্কি’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মাদকের নাম ‘ঝাক্কি’, ‘ঝাক্কি মিক্স’, ‘ককটেল মাদক’। আর এটা তৈরি করা হয় আইসের সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধের তরল মিশিয়ে। যা ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ।


নতুন এই মাদক উচ্চবিত্তদের সন্তানেরা সেবন করত। এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা তৌফিকসহ রাজধানীর উত্তরা থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।


বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত র‌্যাব-৩-এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকা থেকে চক্রের ছয়জন সহযোগীকে গ্রেফতার করে।


গ্রেফতাকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. তৌফিক হোসাইন (৩৫), মো. জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন (৩৭), মো. আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র ওরফে ঝাক্কি রুদ্র (৩৫), মো. রাকিব বাসার খান (৩০), মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ (২৭) ও মো. খালেদ ইকবাল (৩৫)।


অভিযানে আইস, ইয়াবা, বিদেশি মদ, গাঁজা, ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, রেপলিকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক যন্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।


শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মরা নতুন নতুন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণে এই চক্রটি ভয়ানক মাদক আইসের সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধের তরল মিশ্রণে ‘ঝাক্কি’ তৈরি করছিল। মাদক তৈরিতে তারা একটি বাসা ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া নেয়ার পর তারা ‘মেথ ল্যাব’ তৈরি করে।


তিনি বলেন, ‘মেথ ল্যাবটি’ মূলত গ্রেফতার আরাফাত রুদ্র ওরফে ঝাক্কি রুদ্র ও তার কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় পরিচালিত হতো। তারা ভেজাল ও পরিশুদ্ধ আইস সরবরাহ ও নিজেরাও সেবন করত। এছাড়া তারা উত্তরায় একটি বাইং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। যেখানে সেবনকারী সিন্ডিকেটের একই ‘রিং’বা পরিচিতরা আসা-যাওয়া করত।


কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, মাদক ব্যবসার মূলহোতা ও সমন্বয়কারী হলেন তৌফিক। অর্থ যোগানদাতা হলেন জুবেইন ও খালেদ। রুদ্র কেমিস্ট হিসেবে ‘মেথ ল্যাব’ পরিচালনা করত। সবুজ সংগ্রহ ও সরবরাহকারী এবং তৌফিকসহ বাকিরা সকলেই মাদক বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ চক্রে আরো ১০-১৫ জন রয়েছে।


তিনি বলেন, গ্রেফতার জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ শেষ করে দেশে আসে। তৌফিক দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছে। খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে। রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপ আউট এবং খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। রুদ্রের নামে ৩টি মাদক মামলা রয়েছে ও জুবেইনের নামে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে তারা চরম আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আসক্তির মাত্রা বাড়তে গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে তারা আইস গ্রহণ শুরু করে। গ্রেফতাকৃতরা বিভিন্ন সময়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বুদ্ধ করতো। ক্ষেত্র বিশেষে গোপন ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করত। এছাড়া তারা অস্ত্র দিয়ে ‘এমিং গেম’ জুয়া খেলত।


কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তৌফিককে আমরা চক্রের মূল সমন্বয়ক হিসেবে পেয়েছি। আগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই বছর ধরে নতুন মাদক আইস নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন ঝাক্কি প্রস্তুত করছিলেন।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি টেকনাফ ও রাজধানীর মিরপুর, গুলশান-বনানীর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করে সেগুলো তাদের সার্কেলে সরবরাহ করতেন। এই একটি গ্রুপের বাইরে আরো কয়েকটি ক্লোজ গ্রুপ রয়েছে বলে জানতে পেরেছিস। তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত হয়েছে।


অস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আটক জোবেইনের এইম গেমিংয়ের নেশা ছিল। মাদকাসক্তের পর তারা এই অস্ত্র দিয়ে ‘এইম গেমিংয়ের নামে জুয়াও খেলতো। এছাড়া যারা মাদক গ্রহণের জন্য আসতো তাদেরকে ভয়ভীতি পরিদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হতো।


মাদক সিন্ডিকেট ও আইস গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র‌্যা্বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সময়ের মাদকের ধরণ ও সরবরাহের গতিপথে পরিবর্তন এসেছে। এখন সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস। এই মাদকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।


র‌্যাব জানায়, আইস এক ধরনের মেথামফেটামিন মাদক যা মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়।


বিবার্তা/খলিল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com