শিরোনাম
সিমিলিয়াস কিচেন হবে দেশী খাবারের রেস্টুরেন্ট
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২১, ১৮:৪৮
সিমিলিয়াস কিচেন হবে দেশী খাবারের রেস্টুরেন্ট
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

দীর্ঘদিন থেকে মনের মধ্যে পুষে থাকা একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু কষ্ট থেকেই রান্নার শিল্পকে পুঁজি করে নতুন কিছু করার চিন্তা করেন তিনি। প্রচণ্ড গরমে চুলার তাপে এতো কষ্ট করে ঘেমে অত্যন্ত যত্ন করে শত শত মানুষের জন্য রান্না করে খাইয়েও কেউ কোনো দিন তার রান্নার মূল্য দেয়নি, কেউ তাকে একটু প্রশংসাও করেনি। মনের মধ্যে জমানো সেই রাগ, অভিমান থেকে রান্নার শিল্পকে নিয়েই নিজের একটা আলাদা পরিচিতি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। অক্লান্ত ও কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর সাধনার মাধ্যমে তিনি সেই কঠিন পরিক্ষায় পাস করেছেন। নিজের আলাদা একটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে। আজ তিনি উদ্যোক্তা, ‍উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে সবাই চিনেন ও জানেন।


বলছিলাম আত্মপ্রত্যয়ী উদ্যোক্তা সিমিলিয়াস কিচেন (#Cmelia’s Kitchen) এর স্বত্বাধিকারী নূরজাহান মঞ্জুরের (সেতু) কথা। প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম করে যারা বিভিন্ন দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন সেতু। তার উদ্যোগ ঘরের স্বাদের দেশী খাবারের আইটেম নিয়ে। শূন্য থেকে তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পটা একটু ভিন্ন ধরনের। নানান চড়াই-উৎরাই পেরোনোর। গল্পটা শুধুই মা-মেয়েদের লড়াইয়ের।


বই মেলায় সেতুর পরিবারের সাথে বিবার্তা২৪.নেটের সম্পাদক।


নূরজাহান মঞ্জুর (সেতু) জন্ম, বেড়ে ওঠা ছিমছাম মায়ায় ভরা ছবির মতো সুন্দর চাঁদপুর শহরে।শৈশবের দিনগুলো চাঁদপুর শহরে কাটলেও ভর্তি হন রাজধানীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখা পড়া শুরু করলেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে সেটা শেষ করতে পারেননি তিনি।


প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন বেসরকারি স্যাটেলাইট একুশে টেলিভিশনে। কাজ করেন বেশি কিছু। এরপরে রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন জনপ্রিয় রেডিও স্টেশন ‘রেডিও আমার’এ। সেখানে রিপোর্টিং করার পাশাপাশি তিনি নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।


নিজের ক্যারিয়ার জীবন গড়ে তোলার মাঝে সেতুকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। পুলিশ পাত্রের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের এক দিন পরেই কায়দা করে তাকে মিডিয়ার চাকরি থেকে ছাড়িয়ে আনা হলো। কারণ হিসেবে দেখানো হলো মিডিয়া ক্যারিয়ার শ্বশুর বাড়ির স্ট্যাটাসের সাথে যায় না। শুরু হলো তার জীবনের নতুন অধ্যায়, সংসার জীবন।


সিমিলিয়াস কিচেন-এর স্বত্বাধিকারী নূরজাহান মঞ্জুর (সেতু)।


বাবার বাড়িতে আদরে বড় হওয়ার কারণে কোনোদিন সেতুকে রান্না করে খেতে হয়নি। সে কিনা শ্বশুর বাড়িতে এসেই এতো মানুষের জন্য করবে রান্না। রান্না ঘরে গিয়ে মনে হচ্ছিল সব নতুন জগত। অনেক কষ্ট করে সব সামাল দিতে হয়েছিল। কোনো কাজ শিখে না আসার জন্য তাকে শুনতে হয়েছে নানান কটু কথা, মানসিক অত্যাচার। নিজের আন্তরিক চেষ্টা আর শেখার আগ্রহের ফলে আস্তে আস্তে সব রান্না শিখে ফেলেন সেতু।


সময়ের পালাবদলে বর্তমানে সেতুর সংসারে বিধাতার দেয়া শ্রেষ্ঠ ‍উপহার দুই মেয়ে সিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী ও এমিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী। দুই মেয়ে পড়ে ফার্মগেট হলিক্রশ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে। চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির স্বামী পুলিশ অফিসার, এডিশনাল ডি আই জি, ডিরেক্টর, আর অ্যান্ড ডি সেল, র‌্যাব হেড কোয়াটার্স। দুই মেয়ে ও নিজের স্বপ্নের উদ্যোগ নিয়ে কাটে সেতুর ব্যস্ত সময়।


সময় বয়ে চলে আপন গতিতে। সংসারে সমস্ত কাজ, স্বামী আর দুই মেয়েকে নিয়ে চলতে থাকে সেতুর জীবনের ব্যস্ত দিনগুলো। সরকারি চাকুরে স্বামীর কর্মস্থল পরিবর্তনের সাথে সাথে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার সুযোগ হয় তার। সারাদিন কর্মব্যস্ত সময় পার করলেও নিজের আলাদা একটা পরিচিতির কথা সব সময় তার মনে কষ্ট দিতো। সমাজে সবার কাছে নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরির ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নেন নিজের কষ্টে শেখা রান্নাকেই পুঁজি করে নতুন কিছু করার। প্রাণপ্রিয় দুই মেয়ের নামের অংশ নিয়েই উদ্যোগের নাম দেন ‘সিমিলিয়াস কিচেন’। পরিকল্পনা অনুসারে ফেসবুকে একটা পেজ খুলে সেখানে কিছু রান্নার আইটেম পোস্ট দিতে থাকেন।


বই মেলায় বই হাতে সিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী ও এমিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী।


সিমিলিয়াস কিচেন’উদ্যোগ শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে সেতু বলেন, আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু আরো ৮ বছর আগে থেকে। সেই গল্পটা ছোট করে বলে নেই। তারপরে বলছি ‘সিমিলিয়াস কিচেন’এর কথা। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতের তৈরি জিনিসগুলো (হ্যান্ডি ক্রাফট) তুলে এনে রাজধানীর কয়েকটা পুলিশের শপিংমলে সেগুলো সেল দিতাম। হাতের কাজের আমার অভিজ্ঞতা খুব ভাল ছিল। ধীরে ধীরে চলতে থাকে অনলাইন ব্যবসা। একটা সময় বেশ জমে উঠে ব্যবসাটি। পরে স্বামী এসপি হয়ে সাতক্ষীরায় পোস্টিং হলে সেখানে গিয়ে পুলিশের ওয়াইফদের অর্গানাইজেশন পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) চালানোর দায়িত্ব পাই।


সেখানকার নারীরা হাতের কাজে খুব দক্ষ। স্থানীয় অনেক উদ্যোক্তারা বেকার ও অসহায় নারীদের হাতের কাজের ট্রেনিং দিয়ে, তাদের দিয়ে হাতের কাজ করিয়ে সেগুলো ঢাকায় সেল করতেন। আবার বিভিন্ন বিশেষ দিবস উপলক্ষে ঢাকায় উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করতেন। সেটা দেখে আমিও নারীদের দিয়ে হাতের কাজ করিয়ে সেগুলো ঢাকায় এনে সেল করা শুরু করি। সেইসাথে বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায়ও অংশগ্রহণ করি। দুই বার জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকায় এসে মেলায় স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করি। জাতীয় পর্যায়ে একবার দ্বিতীয় পুরস্কারও পেয়েছি। এরপরে স্বামী এডিশনাল ডি আই জি হলে চলে যাই রংপুরে। সেখানেও শতরঞ্জির অনেক সুন্দর সুন্দর হাতের কাজের জিনিস দেখি। এভাবে স্বামীর চাকরির সুবাদে সারাদেশে যখন যেখানে যাই সেখান থেকে যেসব জিনিস কাস্টমার পছন্দ করবে এমন জিনিস নিয়ে ব্যবসাটা এগিয়ে নিয়েছি। তাই এসব জিনিস নিয়ে আমি অনলাইনে দীর্ঘ ৮ বছর কাজ করেছি। উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার নেশাটা এভাবেই হয়েছে।


মহামারি করোনার কারণে বদলে যায় পরিস্থিতি। অনলাইনে হ্যান্ডি ক্রাফট আইটেমের চাহিদা কমতে থাকে। ব্যবসাটা ভাল চলছিল না। তখন ভাবতে থাকেন কি করা যায়। প্রতিদিন প্রচণ্ড গরমে চুলার তাপে এতো কষ্ট করে ঘেমে অত্যন্ত যত্ন করে শত শত মানুষের জন্য রান্না করে খাওয়ালেও কেউ কোনো দিন তার রান্নার মূল্য দেয়নি, কেউ তাকে একটু প্রশংসাও করেনি। তাহলে এই রান্না শিল্পকে পুঁজি করে অনলাইনে কিছু করলে কেমন হয়। আশা করি এর মূল্য আর মূল্যায়ন পাবো। সেই ভাবনা থেকে নিজে রান্না করে অনলাইনে ঘরের স্বাদের খাবারের ব্যবসা চালু করা।


স্বামীর অফিসে সন্তানসহ নূরজাহান মঞ্জুর (সেতু)।


সেতুর ভাষ্য, একদিন ফুড পান্ডা থেকে একটা মেইল আসে। আপনি কি ফুড পান্ডায় রান্না নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী? কোনো আগপিছ চিন্তা না করে চটপট একটা মেনু তৈরি করে ফুড পান্ডায় পাঠিয়ে দেই। সাথে নিজের পেজে দিয়ে দেই। তখন দেখি প্রথম দিন থেকেই অর্ডার আসা শুরু করছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন অর্ডার আসতে থাকে।


অন্যদিকে ফুড পান্ডায় মেনু পাঠানোর একদিন পরেই সেখান থেকেও কল করে বলা হয় আপনি ফুড পান্ডায় ২০ মিনিটে যে কোন আইটেম রেডি করে দিতে পারবেন? এবারও কোন কিছু চিন্তা না করেই বলে দিয়েছি হ্যাঁ, পারবো। সেই থেকে ‘সিমিলিয়াস কিচেন’ নামে ফুড পান্ডায় শুরু হয়ে গেল আমার কাজ। ফুড পান্ডায় যেসব আইটেম দিতেন সেগুলো আবার নিজের ফেসবুক পেজেও দিতেন। তাই দুই জায়গাতেই সমানভাবে চলছে। এভাবে এক মাসে ৫টা আইটেম মোস্ট পপুলার বলে ফেসবুক পেজে শো করছিল। দুদিক থেকেই প্রতিদিন অর্ডার আসতে থাকে সমতালে। সেই যে শুরু এখনো চলছে। অর্ডার আসা আর থামছেই না। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।


দেশি খাবারের আইটেমগুলোকে ব্র্যান্ডিং ও সেল করার জন্য ফেসবুকে ‘সিমিলিয়াসহাটবাজার’নামে একটা গ্রুপ ও ‘সিমিলিয়াস কিচেন’নামে একটা পেজ রয়েছে। এছাড়াও ফুড পান্ডা প্লাটফর্মে নিয়মিত ‘সিমিলিয়াস কিচেন’ এর খাবার নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। শত শত ক্রেতার কাছে এভাবে প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছে দেশি খাবারের আইটেমগুলো।


মেয়ের জন্মদিনে সেতুর পরিবারের সাথে বিবার্তা২৪.নেটের সম্পাদক।


ঘরের স্বাদের দেশী খাবারের আইটেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু হলো রকমারি ভর্তা। এ যেনো ভর্তার দোকান। এগুলো হলো, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, কুমড়া ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, ডাল ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ডিম ভর্তা, শুকনা মরিচ ও রসুন ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, টাকি মাছ ভর্তা, ডিম+আলু ভর্তা ইত্যাদি। সেই সাথে আছে গরুর মাংস, পোলাও চালের পায়েস, খেজুর গুড়ের পায়েস, সাবু দানার পায়েস, দুধ কদুসহ এক্কেবারে সবগুলো আইটেমই দেশী স্বাদের।


সাধারণত হোটেল বা রেস্তোরাঁয় বাবুর্চিরা যে ধরনের গদবাধা খাবার তৈরি করেন সিমিলিয়াস কিচেনের খাবারটা সেরকম না। এটা সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে অত্যন্ত যত্ন করে রান্না করা হয়। একজন মা যেমন পরিবারের সদস্যদের জন্য হৃদয়ের সমস্ত দরদ দিয়ে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে অত্যন্ত যত্ন করে, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করেন সিমিলিয়াস কিচেনের খাবারটা সেরকমই। খেলেই বোঝা যাবে এর স্বাদটা একদম মায়ের হাতের ছোঁয়ায় রান্না করা হয়েছে। খাবারগুলো খেলেই মনে হবে আমি বাসায় ঘরের মধ্যে বসে খাচ্ছি।


রাজধানীতে অনেক সিনিয়র সিটিজেন আছেন। যেমন বৃদ্ধ বাবা-মা, বা শুধু বাবা, শুধু মা। যাদের ছেলে-মেয়েরা হয় দূরে বা ঢাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরে আছেন, যাদের খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। তারা কাজের লোকনির্ভর। সিনিয়র সিটিজেনরা চাইলে আমার কাছ থেকে লাঞ্চ বা ডিনার বক্স নিতে পারবেন। কেননা আমার নিজের হাতের রান্না করা খাবারগুলো এতোটাই স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্মত যে সিনিয়র সিটিজেনরা খাইলেও কোন অসুবিধে হবে না। তারা চাইলে দিন, সপ্তাহ বা মাসভিত্তিক যেভাবে চান আমার কাছ থেকে সার্ভিসটা নিতে পারবেন।


সেতুর পরিবার।


এছাড়াও সিমিলিয়াস কিচেনের আরেকটা সার্ভিস রয়েছে অফিস লাঞ্চ বক্স। রাজধানীর একটু উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণির কর্মচারীরা যারা অফিস করেন কিন্তু বাসা থেকে লাঞ্চ আনতে পারেন না, তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে থাকেন। তাদের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন, সুস্বাদু ও ঘরের স্বাদের খাবার দেয়া হয়ে থাকে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় সার্ভিসটা দেয়া শুরু হয়েছে।


রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সিমিলিয়াস কিচেন (CMelias Kitchen) মানুষের সেবায় চালু থাকে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। সপ্তাহের ৬দিন সার্ভিস দেয়া হয়।


সপ্তাহের একটা দিন শুক্রবারটা উৎসর্গ করা হয় এলাকার অসহায়, সুবিধা বঞ্চিত মানুষ, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোর জন্য। গত ১০ বছর ধরে এটা সেতুর পরিবারের একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে এসব অসহায় মানুষেরা কম করে ৪০-৫০ জনকে রান্না করে খাওয়ান সেতু। আর প্রতি ঈদে কোনো বিশেষ পার্টি না করে সে টাকা দিয়ে আর কোরবানীর মাংস দিয়ে এসব ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের জন্য আয়োজন রান্না করে খাওয়ানো হয়। তখন সংখ্যাটা ২০০-৩০০ হয়ে যায়।


সিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী ও এমিলিয়া মঞ্জুর চৌধুরী।


সিলিয়া ও এমিলিয়া দুই বোন একটু ভিন্ন স্বভাবের। এখনকার বাচ্চারা সবাই যেমন মোবাইল গেমস, টিভিতে কার্টুন দেখা, ফাস্টফুড খাওয়া এসব নিয়ে বিজি থাকে, তারা এর ভিন্ন স্বভাবের। তারা সব সময় মাকে সংসার ও সিমিলিয়াস কিচেনের সব কাজে সাহায্য করে। অনলাইনে যখন ফুড পান্ডার অর্ডার আসে তখন পিক করা, খাবারের প্যাকেটিং করা, রান্নার প্রয়োজনীয় সব উপকরণ, উপাদান দৌড়ে কাছে এনে দেয়া, অর্ডারের প্যাকেটগুলো প্রস্তুত হলে ডেলিভারি ম্যানের কাছে এগিয়ে দেয়াসহ সব কাজে সাহায্য করে।


উদ্যোক্তা জীবনের অর্জন হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও প্রশংসা। আলাদা পরিচিতি। নিজস্ব পরিচয়। যে রান্না খেয়ে কেউ কোনদিন ভাল বলেনি, এখন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি রান্নার প্রশংসা করছে। যারা কোনদিন পাত্তা দিতো না, তারা আজ খোঁজ-খবর নিচ্ছে, খাবার নিচ্ছে। মানুষের ভালোবাসার থেকে বড় প্রাপ্তি ও পুরস্কার কি হতে পারে? বললেন সেতু।


সিমিলিয়াস কিচেনকে নিয়ে দুই বোনের চোখেমুখে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। তারা বলে, মা আমরা একদিন অনেক বড় একটা রেস্টুরেন্ট করবো। সবাই আমাদের রেস্টুরেন্টে আসবে। এখানে অনেক মানুষ কাজ করবে। বেকার মানুষদের চাকরি হবে। আমরা অনেক বড় রেস্টুরেন্টের মালিক হবো, তাই না?


প্রতি শুক্রবারে সুবিধা বঞ্চিতদের খাওয়ানোর দৃশ্য।


সেতু বলেন, আগে ভাবতাম হাতের কাজের জিনিসগুলো নিয়ে একটা শোরুম চালু করবো। ওটাকে একটা ব্র্যান্ড করার ইচ্ছে ছিল। সময়ের পালাবদলে ভাবনাটা একটু বদলে গেছে। এখন আমার মনে হয়েছে খাবারের আইটেমগুলোকে একটু বেশি জোর দেয়া উচিত। কারণ এখন খাবারের আইটেমগুলোর চাহিদা বেশি। এখন আমার প্রথম টার্গেট হচ্ছে সিমিলিয়াস কিচেনকে ব্র্যান্ড করা।


সিমিলিয়াস কিচেন উদ্যোগকে নিয়ে অনেক দূর যেতে চান সেতু। তার মতে, দেশের মানুষের ফাস্টফুডের দিকে বেশি নজর থাকলেও এখনো তারা ভালমানের বাঙালি খাবারগুলো দাম দিয়ে খেয়ে থাকে। আমি চাই রাজধানীতে বিএফসি, কেএফসি রেস্টুরেন্টগুলোর মতো সিমিলিয়াস কিচেনও একটা ব্র্যান্ড হোক। এটা বাংলাদেশের একমাত্র রেস্টুরেন্ট যেখানে মানুষ এসে স্বস্তিতে ও তৃপ্তিসহকারে দেশি ও ঘরের খাবারগুলো খেতে পারবে। যে খাবারগুলোতে কোন ভেজাল নেই এবং মানে, দামে সব কিছুতে অনন্য। এখন আমি একার সাপোর্টে সব কিছু করছি। তাই রেস্টুরেন্টটা আর কিছু দিন পরে করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি আল্লাহ আমাকে সেই তৌফিক দিবেন। সিমিলিয়াস কিচেন রেস্টুরেন্টটা দেশে চালু করার পর আস্তে আস্তে সারাদেশে ব্রাঞ্চ চালু করা হবে। এক সময় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এর ব্রাঞ্চ ছড়িয়ে যাবে বিদেশে।


বিবার্তা/গমেজ/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com