শিরোনাম
জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠান করল বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪১
জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠান করল বাংলাদেশ
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশগুলোর সামরিক বাহিনীপ্রধানদের সম্মেলনের স্বাগত অনুষ্ঠান করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সদর দফতরে দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান বুধবার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হয়।


শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে সামনের সারির একটি দেশ হিসেবে অবদান রাখা ও সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে মর্যাদাপূর্ণ এ অনুষ্ঠান আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দফতর বাংলাদেশকে মনোনীত করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মিলিয়ে ৬৪ জন সামরিকপ্রধান এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।



এছাড়া সদস্য দেশগুলোর উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৪০০ অতিথি এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কালজয়ী বাংলা গান ও বাঙালি খাবারে অতিথিদের আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিতে আবহমান বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।


অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সম্মানজনক এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ দেয়ার জন্য আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের ব্লু হেলমেটের অধীনে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সুনিপুণভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি এবং তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছি। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি।


রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীদের নিয়োজিত করেছি মানুষের অন্তর ও মনজয় করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। এর সবই সম্ভব হয়েছে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের ফলে। রাষ্ট্রদূত মাসুদ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলোর কথা উল্লেখ করেন এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন।


সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এ স্বাগত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড. মাহফুজুর রহমান।


তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের যে প্রতিজ্ঞা এবং প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা এসেছে আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে; আমরা সর্বদাই এ প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকব। এ সম্মেলন তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত সামর্থ বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।


জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৌরবের সাথে অবদান রেখে চলেছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেরা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিস কিপিং এজেন্ডায় বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকারও ভূয়সী প্রশংসা করেন ল্যাক্রুয়া।


তিনি বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের এ সফলতা আপনাদের সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। সামরিক বাহিনীপ্রধানদের এ সম্মেলন জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন অব পিস কিপিং এজেন্ডাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং শান্তিরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।


জাতিসংঘের অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে এমন চমৎকার আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।


তিনি বলেন, জাতিসংঘের নীল হেলমেটের অধীনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আপনাদের অবদান ও আত্মোৎসর্গের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সদস্যদের পরিবারের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান। এ বিশ্বকে আরও শান্তির্পূণ করতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রজ্ঞা, অংশীদারিত্ব, সমর্থন ও সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন অতুল খারে।


জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শান্তিরক্ষী হিসেবে অভিহিত করেন।



অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদ ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক-এর কনসাল জেনারেল মিস সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদের কন্যা ফাবিহা তাহসিন। সামরিক বাহিনীপ্রধানদের দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হয়।


ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালীকরণবিষয়ক আলোচনা:


জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালীকরণবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা, দায়িত্বশীলতা, পেশাগত দক্ষতা ও অব্যাহত সাফল্যের কারণে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালীকরণ বিষয়ক এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তব্য রাখার জন্য বাংলাদেশকে নির্ধারণ করা হয়।


বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ নিরাপত্তা পরিষদ, সামরিক ও পুলিশ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ এবং জাতিসংঘ সচিবালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।


এর মধ্যে রয়েছে- ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নার্থে ক্রিসমাস ট্রি ম্যানডেটের মতো উভয় সংকট অতিক্রম করা; শান্তিরক্ষাবিষয়ক আলোচনার বিশেষ প্লাটফর্ম সি-৩৪ (ঈ-৩৪), সাধারণ পরিষদের বাজেট সংক্রান্ত কমিটি, নিরাপত্তা পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপ, সামরিক ও পুলিশ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ এবং জাতিসংঘ সচিবালয়সহ এ সংক্রান্ত প্রতিটি প্লাটফর্মের আন্তঃসমন্বয়, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আন্তঃআলোচনা জোরদার করা; এসব ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ বাধা দূর করা; ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও ফলপ্রসূ ও সুগঠিত করতে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক সভার আয়োজন করা এবং নিরাপত্তা পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপকে অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার মতো সুপারিশ। নিরাপত্তা পরিষদের চলতি জুলাই মাসের সভাপতি পেরু এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।


বিবার্তা/শিব্বির/রবি/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com