শিরোনাম
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কী সহসাই খুলছে!
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৯, ১৫:৪৯
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কী সহসাই খুলছে!
মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার পুরোপুরি খুলবে কবে? জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের অগ্রগতি কতদূর? সহসাই কী খুলবে বাংলাদেশের জন্য বড় এই শ্রমবাজারটি? জনশক্তি রপ্তানিকারক, বিদেশ গমনেচ্ছুক কর্মীদের মধ্যে ঘুরে ফিরে উঠে আসছে এসব প্রশ্ন।


প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বন্ধ শ্রমবাজারটি খুলতে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর খুব বেশি সময় পার হয়নি। ওই বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অগ্রগতি আছে। তবে দেশটিতে কর্মী পাঠানো কবে থেকে শুরু করা যাবে, তা জানা যাবে আরো একটি বৈঠকের পর।


সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, ফের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে মালয়েশিয়ার আগ্রহ বেশি। তারাও চায় কম সময়ের মধ্যে কর্মী নেওয়া শুরু করতে। তবে তারা চায় অতীতের মতো কোনো নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের হাতে যেন এই প্রক্রিয়া জিম্মি না হয়, এ জন্য একটি স্বচ্ছ নীতিমালা তৈরি করছে মালয়েশিয়া সরকার।


এ নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে যেসব অভিবাসী বাংলাদেশি মালয়েশিয়াতে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বেআইনিভাবে সেখানে আছেন। অনেকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। তাদের মধ্যে যাদের সাজা হয়েছে তা যৌক্তিক কারণে লাঘব করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে দাবি জানিয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার।


শ্রমবাজার নিয়ে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অভিবাসী কল্যাণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুনিরুছ সালেহীন।


শ্রমবাজারটি পুরোপুরি খোলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজারটি খুলতে বেশ আগ্রহী। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে তেমনটিই জানিয়েছেন। তবে চাইলেই রাতারাতি বাজার খুলে দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এজন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটি শেষ হলে আবারো কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।


দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আরো ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ফজলুল করিম।


তিনি বলেন, কবে বাজার খুলবে নির্দিষ্ট করে তো বলা যাবে না। এটা পুরোপুরি মালয়েশিয়ার ওপর নির্ভর করছে। তারা বলেছে খুব শিগগিরই আরেকটা বৈঠক করবে। আরেকবার আমাদের বসতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে হয়তো বৈঠকের সময় পাওয়া যাবে। ওই বৈঠকের পর হয়তো বলা যাবে, কবে নাগাদ আমরা কর্মী পাঠাতে পারবো।


তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়া বাজার চালু করতে বেশ আগ্রহী। বৈঠকে তাদের যে মনোভাব দেখা গেছে, তাতে তাই প্রতীয়মান হয়।


বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দেশের জনশক্তি রপ্তানি অনেকটাই গতি হারিয়েছে। আমরা চাইবো শিগগির মালয়েশিয়ার বাজারটি আমাদের জন্য খুলে যাক। দুই দেশের মধ্যে যে বৈঠক চলছে, এটি ফলপ্রসূ হোক, এটা আমাদের চাওয়া।


এর আগে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জানানো হয়, নতুন কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করতে দেশটির তৈরি করা খসড়া তাদের মন্ত্রীসভায় অনুমোদন নেয়া হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে কর্মী নেয়া শুরু করতে আরো কমপক্ষে দুই মাস লাগতে পারে। মালয়েশিয়া সরকারের গঠিত কমিটির তৈরি খসড়ায় একটি অনলাইন জব পোর্টাল খোলারো সুপারিশ রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি (এমআরএ) নামে ওই পোর্টালে নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ থাকবে। এ প্রক্রিয়া চালু হলে মধ্যস্বত্বভোগী নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধান হবে।


গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগে বি টু বি প্লাস চুক্তির আওতায় কর্মী পাঠানো হতো। দেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের বাইরে অন্য কোনো এজেন্সি সরাসরি লোক পাঠাতে পারতো না। এই প্রক্রিয়ায় দেশে এবং মালয়েশিয়ায় নানামুখী অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। পরে কর্মী নিয়োগের নতুন কোনো পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি দেশটি।


অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালের নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে জিটুজি চুক্তি সই হয়। এতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিটুজি প্লাস চুক্তি হয়।


দেশের জনশক্তি রপ্তানির ৮০ শতাংশ যায় মধ্যপ্রাচ্যে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় শ্রমবাজার। কিন্তু সৌদিতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আরব আমিরাতে সীমাবদ্ধতা, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অনিয়মসহ নানা কারণে জনশক্তি রপ্তানি কমে এসেছে।


বিবার্তা/আরিফ/তাওহীদ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com