প্রযুক্তিখাতে আউটসোর্সিং’এর মাধ্যমে প্রতিবছর ভারত আয় করছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। তাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশ বছরে আয় করছে এখন ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে এটাকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার চেষ্টা করছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আউটসোর্সিং’র বাৎসিরক বাজার প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার। সারা বিশ্বের বাজার ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিশাল কর্মবাজারে ঢুকতে বাংলাদেশের যে উদ্যোগ সেটাকে কিভাবে বিস্তৃত করা যায় এবং সে লক্ষ্যে করণীয় কি, তার প্রেক্ষাপট নিয়েই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশী মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠান পিপল এন টেকের উদ্যোগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন সহযোগীর ভুমিকা পালন করে। ওয়াশিংটনে প্রযুক্তি বিষয়ক এ ধরনের আয়োজন এটাই প্রথম।
ডিপ্লোমেটিক করেসপডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিকাব) সভাপতি ডেইলি স্টারের কূটনৈতিক প্রতিবেদক রেজাউল করিম লোটাস এবং ডিকাবের সাবেক সভাপতি ও ইত্তেফাকের কূটনৈতিক এডিটর মাইনুল আলম এই আলোচনায় বিশেষ বক্তা হিসেবে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। পিপল এনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর হানিফ এই আয়োজনের মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
‘বাংলাদেশ সরকার আইসিটি বা তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে জনশক্তি বৃদ্ধি করে চতুর্থ শিল্প বিল্পবের একটি ধারণা নিয়ে কাজ করছে’ যেটি সরকারি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মুখ থেকে প্রায়শ শোনা যায়। প্রযুক্তি খাতের এই চতুর্থ বিল্পবের ধারণাটি নতুন, তবে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। সেক্ষেত্রে এই ধারণাটি ও এর স্বপক্ষে গৃহীত পদক্ষেপ আর করনীয়গুলো বিশ্বে প্রচার করতে হবে।
এভাবেই প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশের অর্জনগুলো বিশ্ব পরিমণ্ডলে জানানোর সুযোগ হবে। আর সেই প্রচার থেকেই প্রচুর আউটসোর্সিং’র কাজ আসতে পারে বাংলাদেশে। মুল প্রবন্ধে হানিফ এ কথাগুলো বলেন।
বিশেষ বক্তারা বাংলাদেশে আইসিটি বিল্পব বা চতুর্থ বিপ্লবের স্বপক্ষে প্রবাসীদের করনীয় কি সেটা জানতে চান।
তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পেশা ও আউটসোর্সিং বাড়ানোর পথে সরকারি উদ্যোগের পাশে প্রবাসী উদ্যোক্তারাও সমানভাবে অংশ নিতে পারে। বাংলাদেশের অর্জনগুলোতে প্রযুক্তির সবচেয়ে বড়বাজার যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ প্রচার এবং আমাদের কর্মদক্ষতার বিষয়গুলো আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য দরকার ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা।
হানিফ বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বেসিস, কম্পিউটর কাউন্সিল সর্বোপরি বাংলাদেশের কনস্যুলেট অফিসগুলো বড় সহায়তাকারীর ভুমিকা পালন করতে পারে।
এমনকি বাংলাদেশের প্রযুক্তিবাজার সম্প্রসারণে সরকারের পক্ষ হয়েও কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পিপল এন টেক। সার্বিকভাবে প্রযুক্তিখাত সম্প্রসারণ করে চতুর্থ বিপ্লব ঘটাতে বিশ্বে যে প্রচার প্রয়োজন, যেখানে কতিপয় করনীয় তুলে ধরেন হানিফ তার মুল প্রবন্ধে।
এগুলো হল:
এক. বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে কর্মাশিয়াল উইংয়ের মাধ্যমে আইটি বিষয়ক নিয়মিত র্কাযক্রম ছাড়াও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বেসিসের সহায়তায় স্থায়ীভাবে আইটি বিষয়ক বিশ্ব মার্কেটিং পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের র্কাযক্রম পরিচালনা করা।
দুই. বহিঃর্বিশ্বে আইটি আউটর্সোসিং মার্কেটে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি এবং পরিচিতি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশী আইটি পার্কগুলোতে বিদেশি ক্রেতা বা বড় প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করা। সেই সাথে তাদেরকে সরকারি যে পরিকল্পনা অর্থাৎ ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখ প্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির প্রকল্প ব্যাখ্যা করা জরুরি। সেই আলোচনায় নারীর ক্ষমতায়ন বা এই প্রযুক্তি উদ্যোগে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের বিষয়টি ব্যাপকভাবে উল্লেখ করার জরুরি। নারী কর্মীরা যদি ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি খাতে সক্রিয় হয়, তাহলে একদিকে বহিঃর্বিশ্বে যেমন ইতিবাচক প্রচার পাবে, তেমনি নারীরা কর্মক্ষেত্রেও বেশি অবদান রাখতে পারবে। যৌথ আয়ের মাধ্যমে পারিবারিক সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
তিন. বিদেশে সকল সম্ভাবনাময় মার্কেটে অনিয়মিত সেমিনার বা অংশগ্রহণ ছাড়াও স্থায়ীভাবে নিয়মিত প্রতিনিধির মাধ্যমে মার্কেটিং অব্যাহত রাখা।
চার. যুক্তরাষ্ট্রে আউটসোর্সিং মার্কেটে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করা। কারণ সমগ্র বিশ্বের আউট সোর্সিং খাতের ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে, যার মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই।
বৈঠকে উপস্থিত সকলেই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা জানান।
পিপল এন টেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিফ ছাড়াও এই গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক ফকির সেলিম, রেদোয়ান চৌধুরী, অ্যান্থনি পিউস গমেজ, জাহিদ রহমান, সীমা খান, ড. বদরুল খান, ইকবাল চৌধুরী, আবু সাঈদ মাহফুজ, মুশতাক আহমেদ, নাজির উল্লাহ, তাহমিদ রব, শরীফ মহসিন, প্রিয়লাল কর্মকার, আব্দুল আলী, সরোজ বড়ুয়া ও মোহাম্মদ আলমগীর প্রমুখ।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]