শিরোনাম
ভয় কাটেনি কাতারে বিদেশি শ্রমিকদের
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৩২
ভয় কাটেনি কাতারে বিদেশি শ্রমিকদের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় শ্রম আইন সংস্কারে উৎফুল্ল হওয়ার কথা বাংলাদেশি শ্রমিক শরীফের। কিন্তু তিনি মনে করছেন, নতুন আইনেও চাকরিদাতার তাঁকে হয়রানির সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।


পুরো নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ বছরের এই যুবক রয়টার্সকে বলেন, ‘‘মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাটা ঠিক হবে না। কারণ, তাহলে কেম্পানি আমাকে চাকরিচ্যুত করে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারে। যদি আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, তাহলে আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কেউ টাকা দেবে না।’’
কাতার ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকে সে দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়টি অনেকবারই খবরের শিরোনামে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে অব্যাহত চাপের মধ্যে গত বছর শ্রমিকদের সুরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এসব উদ্যোগের মধ্যে সাময়িকভাবে মাসিক ন্যূনতম বেতন ৭৫০ রিয়াল (২০০ ডলার) এবং অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে একটি কমিটি করা উল্লেখযোগ্য।


গত সপ্তাহেও গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদেশি শ্রমিকদের দেশত্যাগের জন্য চাকরিদাতার অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নয়া হয়, যে দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলো।


দোহায় নতুন চালু হওয়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অফিসের প্রধান হুতান হোমায়ুনপুর বলেন, ‘‘এটা (দেশ ছাড়ার অনুমতি বাতিল) শ্রমিকদের অসহায়ত্ব লাঘবে বিরাট ভূমিকা রাখবে। তাঁরা এখন মুক্ত, তাঁরা এখন যে কোনো জায়গায় যেতে পারবে।’’


তিনি একথা বললেও অনেকের অভিমত, চাকরি বদলের জন্য এখনো নিয়োগকর্তার অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকায় এই পদক্ষেপে খুব একটা সুফল মিলবে না। দেশটির প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিকের অনেকেই মনে করেন না যে, হয়রানি থেকে তাদের রক্ষায় এসব পরিবর্তনই যথেষ্ট।


শরীফ জানান, সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তার বেতন হলেও প্রায়ই তাঁকে অতিরিক্ত সময় খাটানো হয়, যা সরকারের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আর তাঁর পাঠানো টাকা দিয়েই বাংলাদেশে পরিবারের চলতে হওয়ায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলতে চান না।


তাঁকে ন্যূনতম বেতনই দেয়া হয়, যার পরিমাণ মাসে ৯০০ রিয়ালের কম। অথচ বাংলাদেশে যাদের মাধ্যমে তিনি কাতারে এসেছিলেন, তারা মাসিক বেতন ৯০০ রিয়াল হবে বলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর ওই কাজের জন্য তাঁর কাছ থেকে ৭০০ ডলার হাতিয়ে নিয়েছিল তারা।


কাতারে কাজে নিয়োগের জন্য রিক্রুটমেন্ট ফি নেয়া অবৈধ। বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত দেশটির সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগাসি বলেছে, এভাবে অর্থ দিয়ে আসা স্টেডিয়াম শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।


এ বিষয়ে কাদরি বলেন, ‘‘অবৈধভাবে ফি দেয়া-নেয়াটা ধরা এবং তা বন্ধ করা খুব কঠিন। যেসব দেশ থেকে শ্রমিক আসছে, শুধু সেখানেই নয়, এখানেও শ্রমিকদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তা বন্ধ করাও সহজ নয়।’’


‘যাত্রা শুরু’


গত ১১ বছর ধরে কাতারে নির্মাণ খাতে কর্মরত দীনেশ বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি হয়েছে এবং আগে যেখানে চার মাস অন্তর বেতন পেতেন এখন প্রতি মাসেই তা পাচ্ছেন। আমি যখন প্রথম এখানে আসি, তখন নির্মাণ সাইটে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এখন আছে।


তবে অনেকে বলছেন, যেসব এলাকায় কর্তৃপক্ষের নজরদারি কঠিন, সে সব এলাকায় এখনো শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।


ঘানা থেকে আসা ২২ বছরের তরুণ সুলেমান বলেন, ‘‘বাড়তি সময় কাজ না করলে তারা আপনাকে এমন একটি জায়গায় দেবে, যেখানে ভয়াবহ গরম থাকবে।’’


তিনি জানান, তাঁকে কাজ দেয়া নির্মাতা কোম্পানি তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে গেছে, যদিও কাতারে তা বেআইনি। সূত্র : রয়টার্স


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com