শিরোনাম
নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে কানাডায় বিক্ষোভ
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৪৭
নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে কানাডায় বিক্ষোভ
কানাডা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে কানাডার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেছেন।

 

প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নারী, পুরষ ও শিশু বিভিন্ন রকমের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। বিশেষ করে  কানাডা বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি বিশাল মিছিল মূলধারার মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

 

মন্ট্রিলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উত্তর আমেরিকার মানবাধিকার নেতা উইলিয়াম স্লোন, অ্যাডভোকেট ফনিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার প্রবীর ধর, দিলীপ কর্মকার, শ্যামল দত্ত, অ্যাডভোকেট অমলেন্দু ধর, বিদ্যুৎ ভৌমিক, জয়দত্ত বড়ুয়া ও রনজিৎ মজুমদার।

 

বক্তারা বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের রামুসহ কয়েকটি এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে আক্রমণ চালিয়ে কয়েকশ’ স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। সরকার সেসব বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারের কিছু নির্মাণ করে দিলেও আক্রমণকারী কাউকে শাস্তি দিতে পারেনি।

 

তারা আরো বলেন, এসবের সঠিক বিচার না হওয়ায় এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা এ ঘটনায় প্রশাসনের উদাসীনতা এবং স্থানীয় এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।  

 

তারা বলেন, মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন; যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘুরা শহীদ হয়েছে, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আদিবাসী  সবাই মিলে একসঙ্গে বসবাস করেই এদেশের ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু কিছু ধর্মান্ধ মৌলবাদি মিথ্যা অভিযোগ করে বারবার সংখ্যালঘুদেরকে নির্যাতন করছে।

 

 

বিক্ষোভকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়কে আঘাত করে বক্তব্য দানকারী পশুসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুর রহমানের মন্ত্রীত্ব বাতিল এবং হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এছাড়া অনতিবিলম্বে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। ৭২’র সংবিধান পুনরায় চালু করে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার আহ্বান জানান তারা।

 

এদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কানাডা শাখার পূর্ব নির্ধারিত দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন ও সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে সংগঠনটির অধিবেশন বাতিল করে প্রতিবাদ সভায় রূপান্তরিত হয়।

 

প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি সুনীল গমেজ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতা প্রদীপ সরকার দোলন, জয়দত্ত বড়ুয়া। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সরোজ কুমার দাস। প্রতিবাদ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ধর্মালংকার ভিক্ষু, আনন্দপ্রিয় ভিক্ষু, কৃষ্ণপদ সেন, বরুণ বনিক, বিবেকানন্দ বিশ্বাস, অলক চক্রবর্তী, দিলীপ চৌধুরী, রিংকন বড়ুয়া, সুশান্ত বড়ুয়া, সুকান্ত বড়ুয়া প্রমুখ।    

 

এছাড়া রবিবার বিকেলে টরেন্টোর ড্যানফোর্থে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত হয়ে বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। কানাডার অন্যান্য শহরও বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

বিবার্তা/সদেরা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com