শিরোনাম
কানাডা​য় প্রথমবার গণহত্যা দিবস পালিত
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০১৭, ১২:২৩
কানাডা​য় প্রথমবার গণহত্যা দিবস পালিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

​২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের নির্মম, বর্বরোচিত ও জঘন্যতম গণহত্যার ভয়াল কালরাত স্মরণে কানাডায় এবারই প্রথম গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।

 

রাজধানী অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান। এসময় সকল কূটনীতিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, কানাডীয় শিক্ষাবিদবৃন্দ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ২৫ মার্চের নারকীয় গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর মাকসুদ খান ও প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভূঁইয়া।

 

এরপর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর ​কর্তৃক​ ​নির্মিত​ ‘Genocide in 1971 and The Killing Fields’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে​​ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ভয়বহতা​র​​ চিত্র​ দেখানো হয়। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার দৃশ্য দেখে এসময় অনেকেই অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।

 

প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর গণহত্যা দিবসের বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এলগনকুইন কলেজের অধ্যাপক ও অটোয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর সেলিম শের বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে আমি স্বচক্ষে দেখেছি কী নৃসংশভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের ধরে নিয়ে মাঠে দাঁড় করিয়ে একসাথে মেরে ফেলা হয়েছে, গণকবর দেয়া হয়েছে। দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্তের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

 

একাত্তরে সংঘটিত ভয়ঙ্কর গণহত্যার বিষয়ে কানাডার শিশু কিশোরদের মধ্যে ​সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি আরিব সাইফুদ্দিন।

 

আওয়ামী লীগ নেত্রী সোমা সাইফুদ্দিন বলেন, আমাদের একথা ভাবতেই কষ্ট হয় যে বাংলাদেশেরই কতিপয় অকৃতজ্ঞ মানুষ আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।

 

আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সী বশীর বলেন, সকল বাংলাদেশির উচিত পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দালালদের মুখোশ উন্মোচিত করা। এই ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

 

বিশেষ আমন্ত্রণে ​অনুষ্ঠানে ​যোগ দেন ও​ বক্তব্য দেন অটোয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপক নিপা ব্যানার্জি। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তবে তিনি গর্ববোধ করেন​, তিনি একজন বাঙালি এবং একাত্তরে একজন বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে অটোয়ায়​ থাকাকালে তিনি বাংলাদেশে​ ​পাকবাহিনীর গণহত্যার বিরূদ্ধে ​পার্লামেন্ট হিলে​ ​জনমত​ সংগঠিত করেন এবং ​প্রতিবাদ​ সমাবেশে​ অংশ নেন।

 

তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিতা) সেসময় বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। ​

 

তিনি বলেন, ​আজ বাংলাদেশ নিজের যোগ্যতায় অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অর্থনীতি,​ ব্যবসা-বাণিজ্য,​ সমা​জিক উন্নয়ন​​ ও নারী​ অধিকারের ক্ষেত্রে​ এগিয়ে চলেছে; যা দেখে তিনি বাংলাদেশের একজন ​বন্ধু হিসেবে গর্ববোধ করেন। একাত্তরে বাঙালিদের নিধনযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ ​অভিহিত করে এই কানাডীয় অধ্যাপক বলেন, গণহত্যার জন্য পাকিস্তান​কে​ অবশ্যই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চা​ইতে হবে​।

 

​এরপর ’৭১ এর গণহত্যা ও বর্বরতার জন্য দায়ী পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের তীব্র ঘৃণা জানিয়ে রচিত ​কবি শামসুর রাহমানের কালজয়ী কবিতা ‘অভিশাপ দিচ্ছি’ আবৃত্তি করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব দেওয়ান মাহমুদ।

 

পাকিস্তানি বাহিনীর এই গণহত্যা যে একটি পরিকল্পিত গণহত্যাকাণ্ড ছিল এবং বাঙালিদের পৃথিবী থেকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র ছিল- সেই দিকটি তথ্য-পরিসংখান ও ঘটনাপুঞ্জীর সূত্রসহ উপস্থাপন করেন প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুইয়াঁ।

 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল। সমন্বয়ে ছিলেন প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভূঁইয়া। আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম সচিব সাখাওয়াত হোসেন।

 

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ​জাতির জনক ​বঙ্গবন্ধু​​​ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুরো জাতি যখন স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ হয়েছিল, ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা পৃথিবীর ইতিহাসের নৃসংশতম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়।

 

তিনি বলেন, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই নয়, পরবর্তী ৯ মাস জুড়েই বাংলাদেশকে এক বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে, অনেকেরই বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। আরো বেশ কিছু রায় ও বিচারকার্য প্রক্রিয়াধীন।

 

হাইকমিশনার আরো বলেন, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide’ এ প্রদত্ত সংজ্ঞায় বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো সুস্পষ্টভাবে গণহত্যার আওতায় পড়ে, কেননা এর উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা। তাই জাতীয় পর্যায়ে এ দিবস পালনের সাথে সাথে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের স্বীকৃতি।

 

২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক​ মাতৃভাষা দিবসের মতো ২৫ মার্চকে​ও আন্তর্জাতিকভাবে​ ​‘গণহ​ত্যা​ দিবস​’​ হিসেবে পালনের জন্য স্ব-স্ব অবস্থানে​ থেকে​​​​ ​জোর দাবি তুলতে কানাডা প্রবাসীদেরকে তিনি ​আহ্বান জানান।

 

সবশেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যার শিকার শহীদদের এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের​ সকল​ শহীদ ও ’৭৫ এর কালরাতে শাহাদা​ত বরণকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান​ ও​ তার পরিবারবর্গের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা​য় এবং​ দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করে​ ফাতিহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।

 

বিবার্তা/দেওয়ান/নিশি 

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com