শিরোনাম
জেদ্দায় জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী পালিত
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৭, ১৩:৫১
জেদ্দায় জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী পালিত
সৌদি আরব প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘কখনো কখনো একটা মানুষ কোটি মানুষের ছায়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর তেমনই এক মায়া। দিয়েই গেলে শুধু নিলে নাতো কিছুই সারাটি জীবনভর কি দিয়ে শুধাই এ ঋণ বলে যাও মুজিবর।’


সোমবার বিকেল ৪টায় জেদ্দা কনস্যুলেটে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে বাংলা নামক সুজলা-সুফলা দেশটির মহান স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস।


কাউন্সিলর আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন থেকে তেলাওয়াতের পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান কাউন্সিলর শ্রম আমিনুল ইসলাম, কাউন্সিলর আজিজুর রহমান, প্রথম সচিব মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কনসাল হজ্জ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেদ্দা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল এফএম বোরহান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কনস্যুলেটের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেদ্দা-মক্কার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলা ও ইংলিশ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।


প্রধান অতিথির বক্তৃতার মধ্যে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী তুলে ধরা হয়। জাহারা হক, সামিয়া আবদুল মালেকের যৌথ পরিচালনায় বাংলা ও ইংলিশ স্কুলের ছাত্রছাত্রী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী তুলে বক্তব্য দেয়, তেমনি বাংলা স্কুলের ছাত্রী আবিদা দেলোয়ার ও ছাত্র আবদুল্লাহ রাশেদ বলেন, আজ সেই ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের অজপাড়াগাঁ টুঙ্গীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মত সায়রা বেগমের সংসারে জন্ম নেন খোকা নামের শিশুটি, যার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে মুজিব ছিলেন তৃতীয়।


কালক্রমে মুজিব পরিণত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে তিনি পরিচিত হন ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের শোষিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির প্রতিভূ। বঙ্গবন্ধুর তার নেতৃত্বে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয় বাঙালি। এ জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের দীর্ঘ পরিক্রমায় বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে এই নেতাকে। ১৯৬৯ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্রজনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট পায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নির্বাচনে বাঙালির এ বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির আন্দোলন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নেয়। ১৯৭১ এর মার্চে শুরু হয় অসহযোগ। ওই বছর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।


১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। একাত্তরে নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজ বাসভবনে ঘাতকদের হাতে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিশ্ব বিবেক স্তব্ধ হয়ে যায়। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড।


বক্তারা বলেন, দেশ মাতৃকার অদম্য সাহসী সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫বছর জীবন পেয়েছেলেন। বাংলা নামের এই দেশটির জন্ম দিতে গিয়ে তিনি দিনাতিপাত করেছেন কারাগারের অন্ধ্বকারে। কি এমন অন্যায় ছিল যার কারণে তার অবুঝ ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে ও নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাত হতে বাঁচতে দিল না।


তারা বলেন, আজকের এই শিশু দিবসে সব শিশুদের পক্ষ হতে সবিনয় মিনতি করছি, আসুন রাজনীতির ক্ষুদ্র চাদরে আমরা না ঢাকি মুজিব পরিচয়ের বিশালতা। এই মহান নেতা আমাদের মন থেকে কোন দিনই মুছে যাবেন না। আমাদের অন্তরে মুজিব বেঁচে থাকবেন চিরদিন। বাঙ্গালির বর্ণমালায় চিরন্তন-চিরদিন শিশুরা পড়ে যাবে, ব-তে, বাংলাদেশ, ব-তে, বাঙালি, ব-তে, বঙ্গবন্ধ্বু, ম-তে, মাতৃভূমি, ম-তে, মুজিব, ম-তে, মুক্তিযোদ্ধা। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো যেই শব্দ দুটির মোহনীয় জাদুতে অর্জিত হয়েছিলো লাল-সবুজের পতাকা।


এদিকে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বাংলা ও ইংলিশ স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন ও কাউন্সিলর হজ্জ মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।


রচনা প্রতিযোগিতায় যারা পুরস্কার পেয়েছে


১- জাহারা আবেদিন, ২- সাদিয়া তানাজ ৩-মাহমুদা এমদাদ ৪-শাফিয়া কবির তিথী ৫-ইবরাহিম ইসলাম ৬-মারিয়া আজাদ ৭-তানবির হোসেন আবির ৮-সামিয়া আদবুল মালেক।


চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় যারা পুরষ্কার পেয়েছে


১- মিরা বিন্তে রাজীব ২-রনক আল আমিন ৩-নৌশীন জামান ৪-ইশরাক হোসেন ৫-প্রভা হোসেন ৬-সাইমা সাদিয়া।


অপরদিকে এই প্রথম বারের মতো জেদ্দা কনস্যুলেটে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস উপলক্ষে বিষেশজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চালু করেছে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প। এরপর একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেন প্রবাসী স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সারতাজুল আলম দিপু, ফজলুল কবির ভিকু, মিজানুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, রেজায়ুল করীম প্রমুখ।


এ দিকে শুক্রবার সকালে জেদ্দায় বাংলাদেশী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দুটি স্কুলে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী, ও জাতীয় শিশুদিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বাংলা মাধ্যম) অনুষ্ঠানমালায় ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা, আলোচনা সভা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা পরিষদ চেয়ারম্যন মারশেল কবির পান্নু। প্রধান অতিথি ছিলেন কনসাল শিক্ষা ও শ্রম, কে এম সালাউদ্দিন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকশিক্ষিকা, স্কুল পরিচালনা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য সদস্য এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।


বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম) অনুষ্ঠানমালায় ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কেককাটা, আলোচনা সভা এবং ছাএছাত্রীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা পরিশদ চেয়ারম্যন কাজী নেয়ামুল বশির।


প্রধান অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর আলতাফ হোসেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুল পরিচালনা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদসহ অন্যান্য সদস্য এবং অভিভাবক উপস্তিত ছিলেন।উভয় স্কুলের আলোচকগণ জাতির পিতার জীবনীর উপর আলকপাত করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধ্বু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। তিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়াছেন। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বাধীনতা রক্ষা এবং দেশের উন্নতিতে অংশগ্রহণের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রতি জোর দেন।


বিবার্তা/সাগর/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com