শিরোনাম
দিনাজপুরে ইটভাটার ধেয়ায় ৫’শ একর জমির ফসল নষ্ট
প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৯, ১৬:২৯
দিনাজপুরে ইটভাটার ধেয়ায় ৫’শ একর জমির ফসল নষ্ট
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরে খানসামা ও বীরগঞ্জে চারটি ইটভাটার ধোঁয়ায় ৫’শ একর জমির উঠতি বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু ধান নয়, আম, লিচু, কলা, বিভিন্ন গাছ বিনষ্ট হয়েছে। সেই সাথে মারা গেছে প্রায় খামারের ৩ শতাধিক মুরগি। এতে কষ্টার্জিত ধান আর ফল গাছ এবং মুরগি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে, এলাকার মানুষ। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে এলাকার পরিবেশ।


ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন,ঋণ মহাজন করে ধান লাগিয়েছিলেন তারা। উঠতি ধান নষ্ট হওয়ায় তারা মহা বিপাকে পড়েছেন। সামনে ঈদ ও রোজায় কিভাবে চলবে, কিভাবে মহাজনের টাকা পরিশোধ করবে এ নিয়ে চিন্তায় অন্ত নেই তাদের। ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলেও কৃষকেরা আদৌও ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এদিকে দু’উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দিয়েছেন।


দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৫নং ভাবকি ইউনিয়নের কুমড়িয়া গ্রামে এসএইচএস বিক্স ও টু স্টার বিক্স নামে দু’টি ইটভাটার ধোয়ায় প্রায় ৩’শ একর জমির উঠতি ধান নষ্ট হয়েছে। শুধু ধান নয়, এলাকায় আম, লিচু, কলা, ভুট্রাগাছ, বাঁশ ঝাড়, লিচু গাছ এমনকি একটি মুরগির খামারের ৩’শ মুরগিও মারা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইটভাটা দু’টিতে, খড়ি, কয়লার বর্জ আর টায়ার পুড়ানোর কারণে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।


এলাকার তসলিম উদ্দিন জানান, ধোয়ায় পুই শাক কলা গাছসহ বাঁশ মরে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আনোয়ার জানান, এনজিও’র কাছ থেকে অধিক লাভে টাকা নিয়ে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ধান নষ্ট হওয়ায় এখন সামনের দিন কিভাবে যাবে, কিভাবে সংসার চলবে, এনিয়ে তার চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না।


কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, হাঁস-মুরগির ফলস ও গাছ বিনষ্টের পাশাপাশি শ্বাস কষ্ট, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।


ভাবকি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় কৃষকদের সাথে থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ উঠিয়ে দিতে ইউএনওর সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতির অর্থ না পেলে আদালতের আশ্রয় নিবেন।


এদিকে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিবেশ অধিদফতর গ্রামের মধ্যে কিভাবে ইটভাটার ছাড়পত্র দিল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। প্রায় শতাধিক কৃষকের ৩শ একর জমি ফসল নষ্ট হওয়ায় ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়ায় পরিবেশ অধিদফতরের প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ পাবে এমনটাই প্রত্যাশা উপজেলা প্রশাসনসহ সকলের। কৃষকেরা যাতে উঠে দাঁড়াতে পারে বা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পায়।


তিনি বলেন, ৩শ একর ধানের ফলন অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকার মত। এই পরিমাণ ক্ষতি দিবে কি না এনিয়েও সন্দেহ রয়েছে।


অন্যদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দুটি ইট ভাটার ধোয়ায় প্রায় দুই’শ একর জমির ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কপাল পুড়েছে দুই ইউনিয়নের শতাধিক কৃষকের। প্রতিবাদ করায় ভাট মালিক মিথ্যে মামলা করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।


বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্রুত সময়ে কৃষি এলাকা হতে ইটভাটা সরিয়ে নেয়ার দাবিও জানান তারা।


উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপাড়া গ্রামে আবাদি জমির উপর স্থাপিত আরডিএফ ইট ভাটা এবং নিজপাড়া ইউনিয়নের নখাপাড়া গ্রামে এসবিএম ইটভাটার ধোয়ায় শতাধিক কৃষকের জমির ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। এ দিকে কৃষি সম্প্রসারণের অফিসের পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া ফসলে সাদাপানি ও ছত্রাক নাশক ওষুধ স্প্রে করার পাশাপাশি ইটভাটার গ্যাস যাতে অন্যান্য ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছে।


স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ইটভাটার ধোয়ায় আনুমানিক দুই’শ একর জমির বোরো ধান ও ভুট্টা ক্ষেত পুড়ে গেছে। ধোয়ার প্রভাব পড়েছে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বেশকিছু গাছে। এই ধোয়ায় ক্ষতি থেকে বাকি ফসল বাঁচাতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এতে পুঁজি শেষ হলেও লাভ হচ্ছে না কৃষকের। এখন যদি ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হয় তাহলে পথে বসতে হবে তাদের।


ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পাল্টাপুর ইউনিয়নের সাদুল্লপাড়া গ্রামের মো. মজনু জানান, আবাদি জমির উপর স্থাপিত আরডিএফ ইট ভাটার চিমনি সেকেলের। এ কারণে প্রতিবছর ইটভাটার ধোয়ায় ফসলের ক্ষেত পুড়ে যাচ্ছে। ইটভাটা বন্ধের দাবি করেও কোনো কাজ হয়নি। ববং গত বছরের ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে গিয়ে চার জন কৃষকের বিরুদ্ধে ভাটা মালিকের পক্ষে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে।


একই গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল্লাহ হেল তানিম বলেন, এই এলাকার কৃষকদের ফসল রক্ষার লক্ষ্যে দ্রুত এই ইটভাটা সরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি কৃষদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে কৃষকদের পথে বসতে হবে। বিশেষ করে যারা বর্গাচাষী তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ইটভাটা বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ওবাইদুল হক জানায়, কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণে বাঁধা দেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বলে সেখানে ইটভাটা স্থাপিত হয়েছে। সে সময় বাঁধা দেয়ার কারণে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।


আরডিএফ ইটভাটার ম্যানেজার মো. আব্দুল মান্নান জানান, গত বছর ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু ভাটা মালিক প্রত্যেক কৃষকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছেন। তবে এবার কি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


বিবার্তা/শাহী/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com