মুড়ি ছাড়া যেন ইফতার জমেই না। আর তা যদি হয় হাতে ভাজা, তাহলে তো কথাই নেই। তাই তো রমজান মাসে এই হাতে ভাজা ভেজাল মুক্ত মুড়ি তৈরিতে সরগরম নাটোরের মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর। সারা বছরই মুড়ি ভাজা হলেও রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় তাদের ব্যস্ততারও যেন শেষ নেই।
কয়েক যুগ ধরে এ গ্রামের মানুষদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন মুড়ি তৈরি ও বিপণন। এই গ্রামের মুড়ির ভেজাল মুক্ত হওয়ার কারণে চাহিদাও রয়েছে দেশ জুড়ে। তাই ভোর রাত থেকে শুরু করে ব্যস্ততা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে ধানের দাম বেশি ও মেশিনে তৈরি মুড়ির দাম কম হওয়ায় পেশা হারানোর আশংকা করছেন মুড়ি কারিগররা।
নাটোর সদর উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ছোট গ্রাম গোয়ালদীঘি কৃষ্ণপুর। ভেজাল মুক্ত মুড়ি হওয়ার কারণে এই মুড়ির ব্যাপক সুনামের পাশপাশি চাহিদা রয়েছে অনেক। তাই গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর সকলের কাছে ‘মুড়ির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এই গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মুড়ির আড়ত।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাতাসে ঝনঝন শনশন করে শোনা যাচ্ছে মুড়ি ভাজার শব্দ। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি। প্রতি বাড়িতে রয়েছে মুড়ি ভাজার জন্য আলাদা ঘর। এ কাজে নিয়োজিত বাড়ির মেয়েদের কেউবা উঠানে ধান শুকাচ্ছে, মাটির চুলায় চাল গরম করছে আর সেই চাল পাট সোলা দিয়ে নাড়া-চারা করছেন।
কেউবা সেই গরম চাল মাটির পাতিলে রাখা বালিতে পাট সোলা দিয়ে নাড়া-চারা করছেন। সাথে সাথে সেই চাল থেকে ফুটে যাচ্ছে মুড়ি। গ্রামে মুড়ি তৈরিতে নারীদের পাশাপাশি মুড়ি ভাজা থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখান কার পুরুষরা।
এছাড়া এসব মুড়ি বিক্রয়ের জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি আড়ত। সকাল হলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাতে ভাজা ওই মুড়ি। মুড়ির মান দেখে হয় দরদাম আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি। এখানে প্রতি মণ মুড়ি বিক্রয় করা হচ্ছে ২৫শ থেকে তিন হাজার টাকা দরে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এ আড়তে বিক্রি হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকার মুড়ি।
গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রামের মুড়ি কারিগর মিলন হোসেন জানান, শুধু মুড়ি কিনতেই রমজান মাসে এই গ্রামে আসেন অনেক মানুষ। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন নানা স্থানে মেশিনে প্যাকেট করা মুড়ি তাদের এই হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম নষ্ট করছে।
ঢাকোপাড়া গ্রামের অপর এক কারিগর আবুল হোসেন বলেন, রোজার মাসে বেশি চললেও বারো মাসই মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত তারা। হাতে তৈরি মুড়ি একটু কম ফুললেও স্বাদে গন্ধে বাজারের অন্যান্য মুড়ির চেয়ে আলাদা। খালি লবণ পানি ছাড়া তাতে আর কিছুই দেয়া হয় না। তাই সারা বছর ধরে আমাদের মুড়ির চাহিদা বেশিই থাকে।
মুড়ি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভেজাল মুক্ত মুড়ি হওয়ায় ইতোমধ্যে এখান থেকে মুড়ি কিনে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছেন পাইকাররা। স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হলেও রমজানকে ঘিরে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি হয়।
এদিকে, মুড়ি কারিগরদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এক দিকে ক্ষুদ্র এই শিল্পের যেমন দ্রুত বিকাশ ঘটবে, পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত কয়েকটি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নও হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিবার্তা/জুবায়ের/আকবর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]