শিরোনাম
রুয়েটের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন অযোগ্য বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা!
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:৫৪
রুয়েটের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন অযোগ্য বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা!
রিমন রহমান, রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(রুয়েট) শীর্ষ পাঁচ প্রশাসনিক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হতে যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, শীর্ষ এই পাঁচ পদের মধ্যে চারটিতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত রুয়েটের কর্মকর্তারা।


এ নিয়ে রুয়েটের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, প্রকৌশল শিক্ষায় উত্তরাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে শীর্ষ চার প্রশাসনিক পদে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা এলে এখানে আবারও অস্থিরতা দেখা দেবে। নিয়োগ বোর্ডের এই নীল নকশা নস্যাৎ করতে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।


রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, কম্পট্রোলার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও গ্রন্থাগারিক পদে কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনের শেষ দিন ছিল গত ২৮ জুন। এর মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, কম্পট্রোলার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে বিএনপি-জামায়াতের কট্টর অনুসারী ও নেতা হিসেবে পরিচিতরা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এদের কারও কারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না হলেও তাদের নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে বলে জানিয়েছেন রুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে উপাচার্যের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।


সূত্র জানায়, প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন রুয়েটের সাবেক শিবির নেতা শাহাদত হোসেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের যোগ্যতায় অভিজ্ঞতা ১৫ বছরের বলা হলেও শাহাদতের তা নেই। তিনি রুয়েটে চাকরি করছেন ২০০৮ সাল থেকে। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে ১০ বছর চাকরি করলেও তার ওই চাকরি শুধু পেনশনযোগ্য চাকরিকাল গণনায় প্রযোজ্য। তাই তার অভিজ্ঞতা রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের আবেদনের যোগ্যতার শর্ত পূরণ করে না। এ পদে শাহাদতের চেয়ে যোগ্যরা আবেদন করলেও তাদের নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ডা. মকসেদ আলী। তিনি বিএনপি-জামায়াতপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতা বলে পরিচিত। মকসেদ আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল করতেন। তারপরেও তাকে এ পদে নিয়োগের জন্য তোড়জোড় চলছে।


পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে আলোচনার শীর্ষে থাকা ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তৌহিদ আরিফ খান চৌধুরী বিএনপির কট্টর সমর্থক। তার ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের শিক্ষক প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করেছেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।


অন্যদিকে কম্পট্রোলার পদে নিয়োগে আলোচনার শীর্ষে থাকা পারিবারিকভাবে বিএনপির অনুসারী বলে জানা গেছে। এই চার পদে নিয়োগ পেতে যাওয়া সবাই কোনো না কোনোভাবে নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য। তবে গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ বোর্ডের পছন্দের প্রার্থী ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক ড. আজিজুল ইসলাম মানিক যোগ্য বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগ বলেন, যে পাঁচ জনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তারা সবাই ওই পদগুলোতে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ জন্য তারা সবাই নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য। কেউ কেউ ২০-২৫ বছর ধরে রুয়েটে চাকরি করছেন। তাই নিয়োগ দিতে হলে তাদেরকেই দিতে হবে।


তবে রুয়েটের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই চার পদে যারা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। কেননা উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগসহ তার পুরো পরিবার বিএনপির কট্টর সমর্থক। তাই তিনি শীর্ষ চার পদে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদেরই নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা করছেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগ ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইসস্টিটিউশন, রাজশাহী কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য পদে বিএনপি অনুসারী প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়শন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) প্যানেল থেকে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেন। তারপরেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও ২০১৩ সালে তিনি রুয়েটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।


এরপর থেকেই তিনি রুয়েটের নিয়োগ বোর্ডে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের এনে কমিটি নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন। উপাচার্য রুয়েটের কর্মচারি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রাজ্জাক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল মফিজকে।


ড. রাজ্জাক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত বছরই তিনি আইইবির নির্বাচনে রাজশাহী থেকে বিএনপি-জামায়াতের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে ড. মফিজ একই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করেন। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত রুয়েটের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ড. মফিজ সভাপতি ও ড. রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি-জামায়াতের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেন।


এ বিষয়ে রুয়েট শাখা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম বলেন, রুয়েটের নিয়োগ বোর্ডে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতপন্থী। বর্তমান উপাচার্য তাদের কমিটিতে এনেছেন। এই কমিটি এখন যে শীর্ষ পাঁচ পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগও নিজে থেকেই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হননি।


এসব বিষয় জানতে চাইলে রুয়েট উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগ দাবি করেন, তিনি কখনই কোনো রাজনৈতিক দলের প্যানেল থেকে আইইবির নির্বাচন করেননি।


বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের নিয়োগ কমিটিতে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাদেরকে কমিটিতে নেয়া হয়েছে। তবে তারা অন্য কোনো দলের সমর্থন করতে পারেন, সে দলের প্যানেল থেকে নির্বাচনও করতে পারেন। কারণ, নির্বাচনে দুটি পক্ষ অবশ্যই থাকতে হয়। তা না হলে নির্বাচন হয় না।


বিবার্তা/রিমন/মনোজ/রয়েল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com