রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বিভাগে ভাংচুর ও নার্সদের মারধর করায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে নার্সরা। এতে বিপাকে পড়েছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ।
মঙ্গলবার সকালে সরোজমিনে দেখা গেছে, রোগী ও রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেছেন। তারা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। নার্সদের কর্মবিরতির কারণে চিন্তিত এসব রোগী ও রোগীর স্বজনরা।
গাজীপুর থেকে আসা ইব্রাহিমের স্ত্রী বিবার্তাকে বলেন, আমার স্বামী তিনদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছে। আজ সকালে তাকে নিয়ে এখানে আসি। কিন্তু ইমার্জেন্সিতে কোনো নার্স বা অন্য কেউ নেই। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। তাছাড়া তাদের আন্দোলন কখন শেষ হবে তাও বুঝতে পারছি না।
ছলিমুল্লাহ ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বির্বাতাকে বলেন, আমি গত শুক্রবার থেকে এখানে মেয়েকে নিয়ে আছি। আমার মেয়ের ব্লাড ক্যন্সার হয়েছে। তাকে রক্ত দিতে হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় রক্ত দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নার্সদের কর্মবিরতিতে যাওয়ার কারণে সম্ভব হয়নি। আজ সকালেও দেয়া হয়নি। কখন দিতে পারবো তাও জানি না।
রায়হান নামে এক রোগীর স্বজন বির্বাতাকে বলেন, আমার ভাইকে নিয়ে তিনদিন ধরে এই হাসপাতালে আছি। হাঠাৎ করে নার্সদের কর্মবিরতির কারণে আমরাসহ এখানে যারা আছেন তারা বিপদে পড়েছেন। ডাক্তার এসে শুধু দেখে যায়, ওষুধ লিখে দেন। বাকি কাজ তো নার্সরাই করেন। কখন কোন ঔষুধ খাবে, কখন ইনজেকশন দিতে হবে রোগীর সঙ্গে আসা অনেকেই এই বিষয়গুলো ভালো বোঝেন না। এ সব কাজ সাধারণত নার্সরা করে থাকেন। রোগীর সব খোঁজখবর সাধারণতো নার্সরা নেন। কিন্তু তাদের কর্মবিরতির কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) উত্তারা শাখার সহসভাপতি আবদুল কাহার বির্বাতাকে বলেন, আমাদের এ দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায় না হওয় পর্যন্ত আমরা এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।
রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইমার্জেন্সি বিভাগে সেবা বন্ধ করিনি। ইমার্জেন্সি রোগী এলে তাদের সেবা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নার্স তাদের ডিউটি পালন করছেন। তবে সেটা সীমিত আকারে, শুধু সিরিয়াস রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। বাকিদের দেয়া হচ্ছে না।
সোমবার বিকালে ইমার্জেন্সির এক রোগীর জন্য ঘুমের ইনজেকশন সেডিল (sedil) লিখে দেন ডাক্তার। রোগীর সঙ্গে আসা এক আত্মীয় কাকরাইল ফার্মা থেকে ইনজেকশন আনতে গেলে দায়িত্বরত ব্যক্তি সেডিল না দিয়ে দেন এসিয়াম (easium)। যেটির গাঁয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো তারিখ লেখা ছিল না।
এ কারণে নার্স মনিরুল ইনজেকশন পুশ না করে সেটি পাল্টিয়ে আনতে বলেন। ইনজেকশনটি পাল্টিয়ে আনতে গেলে কাকরাইল ফার্মা থেকে কয়েকজন ব্যক্তি এসে মনিরুলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন এবং কেন ইনজেকশন ফেরত পাঠানো হলো তা জানতে চান। এক পর্যায়ে কাকরাইল ফার্মার লোকজন ইমার্জেন্সি বিভাগ ভাংচুর করেন এবং মনিরুলসহ কয়েকজনকে মারধর করেন। বর্তমানে মনিরুল চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফয়সাল বিবার্তাকে বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমরা দুই দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে আছি। এগুলো হলো- কাকরাইল ফার্মা বন্ধ করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঠিক তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ড. জাকির বিবার্তাকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ ফেরত পাঠালে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের ফার্মেসি কাকরাইল ফার্মার ছেলে-পেলে এসে ইমার্জেন্সি বিভাগ ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি নার্সদের মারধর করেন। এর প্রতিবাদে নার্স ও কর্মচারীরা সাময়িক কর্মবিরতি ডেকেছেন।
বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]