শিরোনাম
ঈদের দর্শনার্থীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি লালবাগ কেল্লায়!
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০১৯, ২২:২১
ঈদের দর্শনার্থীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি লালবাগ কেল্লায়!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের টানে এখনো লালবাগ কেল্লায় ছুটে যান পর্যটকরা। ঢাকা শহরের ৪০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলের প্রাচীন এ স্থাপত্য। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এ দুর্গে নেমেছে পর্যটকদের ঢল। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে আসছেন পুরনো এ স্থাপনায়।


ঈদের পরে থেকে শুরু করে আজ রবিবার পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ছিল লালবাগ কেল্লা।


যান্ত্রিক নগরে সবুজায়ন আর কোমল বাতাস ছাড়াই জীবন পার করছে শহরবাসী। এখানে ইচ্ছে হলেই প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখা যায় না। ইট, পাথর আর কংক্রিটের ঢাকা শহরে কোলাহল মুক্ত পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে কোথাও একটুখানি সবুজের সমারোহ পেলেই সেখানে ছুটে যায় এ শহরের মানুষ। এছাড়া প্রাচীন স্থাপনার টান তো আছেই।



লালবাগ কেল্লা এ দেশের ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহাসিক এ নিদর্শন। সবুজ ঘাস আর ফুলে ফুলে সাজানো এ স্থাপনা এখানে ঘুরতে আসা মানুষকে বিমোহিত করে। মুঘল আমলের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য লালবাগ কেল্লার মসজিদ, দরবার হল (দেওয়ান-ই-আম) ও পরি বিবির মাজার (শায়েস্তা খার মেয়ে) বাঙালি সভ্যতারই বাহন।


ঈদের ছুটিতে লালবাগ কেল্লার সবুজ ঘাস, ফুল আর দুর্গের অপরূপ দৃশ্য দেখতে আসছেন হাজারো পর্যটক। শুধু এ শহরের বাসিন্দাই নয়, প্রাচীন সভ্যতার এ স্থাপনা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে আসছেন অনেকে।


রবিবার বিকেল ৩টায় পলাশী পাড়ি দিয়ে লালবাগে ঢুকতেই সেই চিরছেনা যানজট। পুরান ঢাকার সরু রাস্তা ধরে লালবাগ কেল্লায় পৌঁছাতেই যেনো ক্লান্ত পর্যটকরা। টিকিট কেটে কেল্লায় প্রবেশ করতে দীর্ঘ লাইন। সারি সারি লাইন ধরেই সুশৃঙ্খল ভাবে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। তবে কেল্লার ভেতরে ঢুকে প্রাচীন স্থাপনা আর রঙ বেরঙের ফুল দেখে সেই ক্লান্তি যেনো মুহূর্তেই বিলীন। সবুজ ঘাসে কেউ কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে হারিয়ে গেছেন সবুজের মধ্যে। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত কালের সাক্ষী স্থাপনার ছবি আর সেলফি তুলতে।



স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শন দেখতে কার না ভালো লাগে। এ স্থাপনা আমাদের গর্ব। এতো বছর আগেও আমাদের আর্কিটেক্ট কতো আধুনিক ছিলো, এ দুর্গ সেটাই প্রমাণ করে। নিজের সন্তানকে প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই ঈদের ছুটিতে এখানে এসেছি।


ঢাকার ধামরাই থেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে লালবাগ কেল্লায় এসেছেন নুজহাত। তিনি বলেন, এখানকার স্থাপনা ও সুন্দর দৃশ্য দেখে আমি অভিভূত। এটি আমাদের গৌরবের স্থাপনা। আমি এখানে বারবার ফিরে আসবো।


ঢাকা হোম ইকোনমিক্স কলেজের ছাত্রী তাবাসসুম নদী বলেন, এ স্থাপনার কারুকাজ খুব নিখুঁত ও সুন্দর। আর এখানকার ফুলে ভরা সবুজ দৃশ্য মনকে রাঙিয়ে তোলে।



প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় ছেলে মুহাম্মদ আজম ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি পাঠায়। ফলে দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৬৮০ সালে বাংলার সুবেদার নবাব শায়েস্তা খাঁ ঢাকায় এসে আবার এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার মেয়ে পরী বিবির মৃত্যু হওয়ায় দুর্গটিকে অপয়া মনে করে ১৬৮৪ সালে তিনিও দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।


১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। তিনি ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে এ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। পরবর্তীতে ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এসময়েই দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর সংস্কার করে লালবাগ দুর্গকে আগের রূপে ফিরিয়ে এনে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।


বিবার্তা/আদনান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com