রাজধানীর পুরান ঢাকায় বেপরোয়াভাবে ছুটে চলছে রুট পারমিটহীন, নামহীন শতাধিক যাত্রীবাহী লেগুনা। এসব লেগুনা বাংলাবাজার থেকে জুরাইনে যাত্রী পরিবহন করে।
কিন্তু চলাচলের সময় গাড়িগুলো কখনই নির্দিষ্ট কোনো রুট দিয়ে চলছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। উপরন্তু পুরান ঢাকার কোনো রুটেই এসব গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই বলে সূত্র জানায়।
মালিক বা চালক কেউই এ রুটের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি ঠিকমত বলতে পারেনি এসব গাড়ির পরিবহন কোম্পানির নাম। তবে ড্রাইভারদের কেউ কেউ একে দোয়েল পরিবহন জানিয়েছেন। এ ধরনের অস্পষ্ট পরিচয়বিহীন গাড়িগুলোর ইচ্ছেমতো চলাচলে প্রতিদিনই ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ওইসব রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পুরান ঢাকার সদরঘাটের বাংলাবাজার ফুটওভার ব্রিজের নিচে গড়ে উঠা এসব বেনামি গাড়ির স্ট্যান্ড থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কিছু গাড়ি লাইনে বেলাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব গাড়িতে একজন করে লাইনম্যান রয়েছে। তবে উপস্থিত কোনো গাড়িতেই ছিল না কোনো পরিবহনের নাম। গাড়িগুলো পুরোটাই সাদা রংয়ের।
গাড়িগুলোর লাইনম্যান হিসেবে দায়িত্বরত মোহাম্মদ আলী বলেন, এসব গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে। এগুলো সব দোয়েল পরিবহন। এ পারমিট মালিকের কাছে আছে।
গাড়িগুলো যে দিক দিয়ে যাওয়ার কথা কখনো কখনো সেদিক দিয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মাঝে মাঝে লক্ষ্মীবাজার হয়ে যায়। ওই রুটগুলোতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি থাকে। ফলে যাওয়া আসার পথে উঠানো নামানো করতে গেলে অন্য যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হয়। এজন্য সাধারণের সুবিধার্থেই চালকেরা এমনটি করে থাকেন।
সূত্র জানায়, গাড়িগুলো দোয়েল পরিবহন নামে রুট পারমিট চেয়ে আবেদন জানালেও তারা এ পারমিট পায়নি। অনেকটা অবৈধভাবে চলছে গাড়িগুলো। এসব গাড়ি শ্যামবাজার হয়ে যেতে রুট পারমিট চেয়ে আবেদন করেছিল, যা এখনো পায়নি।
রুট পারমিটের বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন পরিবহন মালিকের সাথে কথা বললে তারাও রুট পারমিট না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
হারুন নামের দোয়েল পরিবহনের এক মালিক বলেন, দোয়েল নামে আমরা রুট পারমিট চেয়ে আবেদন করেছি। আমরা এখনো আবেদনকৃত রুটের অনুমতি পাইনি। তবু বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে গাড়িগুলো।
এ সময় পরিবহনের মালিকের ফোন নম্বর পেতে অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রতিবেদককে। কারণ গাড়ি মালিকের ফোন নম্বর চাইলে কেউ বলে, মালিকের ফোন নম্বর রাখিনি, কেউ বলে কারণ না জেনে নম্বর দেয়া যাবে না। আবার কেউ মুখের উপর বলে দেয়, মালিকের নিষেধ আছে, দেয়া যাবে না।
এদিকে এমন বেপরোয়া আর লাগামহীনভাবে চলাচলরত এসব গাড়ির বিষয়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী এলাকা লক্ষ্মীবাজার হয়ে যখন গাড়িগুলো চলে, তখন ট্রাফিক জ্যামের কবলে পড়ে পুরো এলাকা।
লক্ষ্মীবাজারের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সুত্রাপুরের লক্ষ্মীবাজার এলাকাটি অত্যন্ত একটি জনবহুল এলাকা। এটি সবসময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচলে জমজমাট থাকে। এই রাস্তা দিয়ে রিকশা নিয়ে চলাচল করা তো দূরের কথা, মাঝে মাঝে পায়ে হেঁটে চলতেও জ্যামে পড়তে হয়। সেখানে সাদা রংয়ের এ গাড়িগুলো কি যে বেপরোয়াভাবে চলে বলে বুঝানোর নয়। এদের নিয়ে সন্দেহ হয়, আসলেই এরা ড্রাইভার কি না।
তিনি বলেন, এই দোয়েল পরিবহন বেশ কয়েকজন পথচারীকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। বেশ কয়েকবার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এসব গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এরা দিব্যি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সমস্যাটি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ঠদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান পুরান ঢাকায় বসবাসকারী একাধিক ভুক্তভোগী।
বিবার্তা/আদনান/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]