শিরোনাম
এফআর টাওয়ারে আগুন: অর্ধশতাধিক উদ্ধার, নিহত ৪
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০১৯, ১৭:১৫
এফআর টাওয়ারে আগুন: অর্ধশতাধিক উদ্ধার, নিহত ৪
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটকা পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আটকে পড়াদের উদ্ধারে দুটি স্কাই লিফট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভবনটি থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।


নিহতদের মধ্যে একজন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ও তিন জন ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত হেলিকপ্টার দিয়ে ভবনে ছাদ থেকে ৩ জনসহ ওই ভবন থেকে ২৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে যারা আটকা পড়েছেন তাদেরকে ভবনের ছাদে যেতে বলা হচ্ছে।


বৃহস্পতিবার পৌনে বেলা ১টার দিকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই ভবনে আগুন লাগার পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন বলেন, তাদের ২১টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। দুটি হেলিকপ্টার দিয়েও আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে।


মো. গিয়াস উদ্দিন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই ভবনের পঞ্চম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর তা উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওই ভবন থেকে অন্তত সাত জন লাফিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের গাড়িতে তুলে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনের উপরের দিকের বিভিন্ন ফ্লোরের জানালা ভেঙে সাহায্যের আশায় হাত নাড়তে দেখা যায় অনেককে। উপরে থেকে শার্ট, প্যান্ট দিয়ে ইশারা করছেন অনেকে। এছাড়া উদ্ধারের জন্য চিরকুট লিখে নিচে ফেলছেন তারা। আটকে পড়াদের মধ্যে অনেকে ভবনের কাঁচ ভেঙে দেয়াল বেয়ে নামার চেষ্টা করছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। আটকা পড়াদের উপর থেকে লাফ দিতেও নানাভাবে নিষেধ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে অনেকে রশি দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন।


যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে সিরি ইন্দ্রিকা (৪৬) নামে এক শ্রীলংকান নাগরিকও রয়েছেন। তিনি হাতে আঘাত পেয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানিয়েছেন।


ভবনের সামনে উৎকণ্ঠিত ভিড়ের মধ্যে মহিউদ্দিন নামের একজন জানান, তার ভাই মোতাহার এফ আর টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি বায়িং হাউজে কাজ করেন। বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে তিনি ভেতরে আটকা পড়ে আছেন। ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। বেলা ৩টার পর ফায়ার সার্ভিসের মই দিয়ে ১২ তলার ওপর কাচ ভেঙে কয়েকজনকে বের করে আনা হয়। তখনও অষ্টম তলায় দেখা যাচ্ছিল আগুনের শিখা।


ভবনের সামনে জড়ো হওয়া জনতার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেরির কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বেশি।


গার্মেন্টসের বায়িং হাউজ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস, বিক্রয় কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ও একটি কনভেনশন সেন্টার রয়েছে ওই ভবনে। সেসব প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি কত মানুষ কাজ করেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।


এফআর টাওয়ারের তৃতীয় তলায় রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা। পাশের ভবন আওয়াল সেন্টারে রয়েছে বেসরকারি কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস। পাশের ভবনগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে মানুষ।


ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা বললেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার কারণেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


এদিকে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য রাজধানীর সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।


১২ তলায় আটকে পড়া ভয়ার্ত একজন তার এক স্বজনকে মোবাইল ফোনে এমনভাবে তার জীবনহানির আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ‘ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। উপরে উঠতে পারছি না। আমরা ১৫ জন আটকা পড়েছি। বাঁচব কিনা জানি না, দোয়া করো।’


আবদুস সালাম নামের ওই ব্যক্তির স্বজন বিকেল পৌনে ৩টায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘একটু আগে পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কথা বলছিলাম। কিন্তু এখন আর নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। জানি না ওরা বাঁচবে কিনা।’


এমনিভাবে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন ভবনে আটকে পড়া বহুসংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু। কেউ কেউ ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার আগে বাঁচার জন্য বহুতল ভবন থেকে লাফ দেন। ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারী জানিয়েছেন, ভেতরে ধোঁয়ায় অনেকের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে।


আগুন লাগার পরপরই ফাহাদ ইবনে কবীর নামে এক যুবক ফোন দেন মা ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে। ফোন করে মাকে জানান, ভেতরে আগুনের ধোঁয়ায় তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তিনি দম নিতে পারছেন না।


ছেলের সঙ্গে কথা বলার পরপরই মা ফরিদা ইয়াসমিন ছেলের সন্ধানে চলে আসেন এফ আর টাওয়ারের নিচে। সেখানে ছেলের সন্ধানে তিনি আর্তনাদ শুরু করেন। ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে এক ঘণ্টা আগে আমার কথা হয়েছে। এখন মোবাইল নম্বর বন্ধ পাচ্ছি।’


তার ছেলে ১২ তলায় ডাট গ্রুপে কাজ করেন। তিনি সেখানকার আইটি ইঞ্জিনিয়ার। ফাহাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ভবানীপুরে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ফাহাদ ছোট।


বিবার্তা/শান্ত/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com