শিরোনাম
‘নাইট কুইন ফোটার মুহূর্তটা বেশ আবেগের’
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০১৭, ১২:৩৪
‘নাইট কুইন ফোটার মুহূর্তটা বেশ আবেগের’
নাজিম উদ্দিন খান লিয়ন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর জুরাইনের মুরাদপুর এলাকার জিরো পয়েন্ট। ওখানেই পূর্বপুরুষদের বাস ব্যবসায়ী আহসানুজ্জামান দেলোয়ারের। খুব শখ করে নাইট কুইনের চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। তবে নাইট কুইন ফোটার অভিনন্দিত দৃশ্য দেখতে তাকে পাক্কা তিনটি বছর অপেক্ষা করতে হলো। বুধবার রাতেই ধরা দিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রাণভরে নাইটকুইন ফুটে ওঠার দৃশ্যটা দেখলেন। ক্যামেরাবন্দীও করলেন সেই বিরল মুহূর্ত।


মোবাইলে বিবার্তাকে তার অমলিন অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমি গাছটার পরিচর্যা করছি। এর আগেও একবার ফুটে ছিল কিন্তু সেবার ঢাকার বাইরে থাকায় আমি দেখতে পারিনি। পরিবারের সদস্যদের কাছে শুনেছি। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমি আমাদের বাড়ির ছাদে উঠি। দেখি নাইট কুইনের কলি ফুটছে। বুঝতে পারলাম কিছুক্ষণের মধ্যে ফুলটা ফুটবে। বন্ধুদের খবর দিলাম। ঠিকই রাত ১১টার দিকে ফুলটা ফুটলো। সত্যি এ অনুভূতি অন্যরকম। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’



উল্লেখ্য, নাইট কুইন ফুল নিয়ে পৃথিবীজুড়ে বহু কাহিনী ছড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনীর অবতারণা ঘটেছিল দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরীতে। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এক অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি ‘বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার’ নামে পরিচিত।


ব্যবসায়ী দেলোয়ার বলেন, ‘এ ফুলের মজার বৈশিষ্ট্য হলো এর কলি বের হয় পাতা থেকে। প্রথমে পাতার যে কোনো এক পাশে ছোট গুটির মতো একটি বস্তু সৃষ্টি হয়। এরপর গুটিটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠতে থাকে। দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ছোট্ট গুটিটি পরিপূর্ণ কলিতে রূপান্তরিত হয়। যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় রাতের রানী আসছে।


তিনি বলেন, পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেলে আস্তে আস্তে মেলতে শুরু করে নাইট কুইনের কলি। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি দুটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সেই সঙ্গে মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ গন্ধে তীব্রতা না থাকলেও আছে এক ধরনের অদ্ভুত মাদকতা, যা যে কোনো মানুষকে মোহিত করার জন্য যথেষ্ট।


উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেন, পরিপূর্ণ অন্ধকার যখন রাতকে আন্দলিত করে নাইট কুইন ঠিক সেই সময়টাকেই বেছে নেয়। মূলত রাতের গভীরতার সাথে এর সৌন্দর্যের একটা মিল রয়েছে। বলা হয় রাত বাড়ার সাথে সাথে ফুলটি তার সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরে। আর সেই সৌন্দর্য ও সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে নিশাচর পতঙ্গরা উন্মাদের মতো ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাতের রানীর বুকে।


রাতের রানী দিনের আলো সহ্য করতে পারে না। আর তাই চারিদিক আলোকিত হওয়ার আগেই পাপড়িগুলো ম্লান হয়ে নুয়ে পড়ে, নিজেকে গুটিয়ে ফেলে পরিণত করে চুপসে যাওয়া মৃত ফুলে।


এ ফুল বছরে মাত্র একবারই ফোটে আর তাইতো প্রচলিত ভাষায় নাইট কুইনকে সৌভাগের প্রতীকও বলা হয়।


বিবার্তা/লিয়ন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com