শিরোনাম
দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১১:৩৯
দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা, নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান হত্যার বিচার ও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়াসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার টানা চার দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। শুধু তাই নয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।


জানা গেছে, গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহনের গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়। সেদিন থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম নিহত হন। সেদিন থেকে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছিল। টানা ৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সাড়ে তিন বছর আগে করা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।



একাধিক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সড়ক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ হবে। এই সময়ে আগের দাবিগুলোর অধিকাংশই পূরণ হয়নি। এই কারণেই সড়কে আবার এক ভাইয়ের রক্ত ঝরল। তাই তো তারা স্লোগান তোলেন, ‘আশ্বাস আর না, বাস্তবায়ন কর না’।


এদিকে, রবিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আজ সোমবার দুপুরে সায়েন্সল্যাব বা রাপা প্লাজার সামনে আবারও বিক্ষোভ শুরুর ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছেড়ে দেয় তারা।


শিক্ষার্থীরা গত তিন দিনের মতো গতকালও সড়ক অবরোধ করে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে। কোনো চালকের লাইসেন্স না থাকলে, যানবাহনের কাগজের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছে চালকদের নিয়ে আসছিল। পুলিশ সদস্যরা কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে মামলা ও জরিমানা করছিলেন।


গতকাল রাপা প্লাজার সামনে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা। দেখা যায় চালকের লাইসেন্স নেই। পরে বাসের চাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে যায়। চালকের দাবি, তার সহকারীর কাছে লাইসেন্স, যানজটে আটকে থাকায় আগেই নেমে গেছেন তিনি। এদিকে শিক্ষার্থীরা বাসের চাবি নিয়ে গেলে চালক তাদের কাছে অনুরোধ করছিলেন সেটি ফেরত দেয়ার। শিক্ষার্থীরাও নাছোড়বান্দা। উপস্থিত এক পুলিশ সদস্যকে দেখে তারা বলছিল, দেখেন, চালকের লাইসেন্স নাই। মামলা দেন। এ সময় শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া কাগজপত্র দেখে উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্টকে মামলা দিতে বলেন।


শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ছিলেন ওসি উৎপল বড়ুয়া। শিক্ষার্থীরা কোনো গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা শেষ করলে দ্রুত সেটি ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছিলেন তিনি।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাপা প্লাজার সামনে গতকাল দুই ঘণ্টায় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।


শিক্ষার্থীরা জানান, বাসের ধাক্কা কিংবা চাপা পড়ে শিক্ষার্থীরা যতবার আন্দোলনে গিয়েছে, ততবারই আশ্বাসের বাণী শুনতে হয়েছে। কিছুদিন ভালো যায়। আবারও সড়কে রক্ত ঝরে, শিক্ষার্থীরা মারা যায়। ফেরে না সড়কে শৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা কাটে না গণপরিবহনে। তাই কোনো আশ্বাস নয় আর কোনো বিশ্বাসও নয়।


এদিকে, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় অবস্থানের কারণে মিরপুর-নিউমার্কেটগামী সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। মানিক মিয়া এভিনিউ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের গাড়ি ডাইভারসন করতে দেখা যায়।


ধানমন্ডি-২৭ এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর বিচার, নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা-দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই, আমার ভাই রাস্তায় মরে, প্রশাসন কী করে, জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই, 'বার বার আশ্বাস, আর নয় বিশ্বাস' প্রভৃতি স্লোগান বিক্ষোভ করে।


লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সুইটি নামের এক ছাত্রী বিবার্তাকে বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাশের বাস্তবায়ন চাই। বাসে ছাত্রীদের হয়রানি বন্ধ চাই। শিক্ষার্থীদের ড্রেস দেখে বাসে উঠতে না দেয়া, হাফ পাসের ভাড়া নিয়ে হয়রানি থেকে রেহাই চাই। আর কোনো ছাত্র-ছাত্রীর যেন অকাল মৃত্যু না হয় সেজন্য সড়কে গণপরিবহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চাই।



রহিমা নামে আরেক ছাত্রী বিবার্তাকে বলেন, আমরাও ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে সড়কে থাকতে চাই না। কিন্তু যখন লাইসেন্স নেই এমন কারো হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং থাকে, সেই গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী মারা যায়, তখন কোনো আশ্বাসেই আমরা আশ্বস্ত হতে পারি না। তাই সড়কে আসা। এবার আশ্বাস নয়, নিরাপদ সড়কের দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।


আন্দোলনে সকাল থেকে সক্রিয় মোহাম্মদপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সিফাত বলে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আজকের মতো ফিরে যাচ্ছি। তবে কাল আবার আসবো। আশা করছি খুব দ্রুতই গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের ঘোষণা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের বিষয়ে সরকারি ঘোষণা শুনবো।


ধানমন্ডি-২৭ এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট সামসুর রহমান বিবার্তাকে জানান, বেলা আড়াইটার পরপরই শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়তে শুরু করে। পৌনে ৩টার মধ্যে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকাল থেকেই যানচলাচল সীমিত ছিল ধানমন্ডি-নিউমার্কেট সড়কে।


এদিকে, একই দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সিটি কলেজের সামনের সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। এছাড়া রাজধানীর শন্তিনগর, কাকরাইল এলাকায়ও আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।


বিবার্তা/খলিল/কেআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com