শিরোনাম
ফাঁকা ঢাকায় সুনসান নীরবতা
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২০, ১৮:৩৪
ফাঁকা ঢাকায় সুনসান নীরবতা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

হঠাৎ করে রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। আর যারা ঢাকা শহরে রয়েছেন তারাও বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। তাই চিরচেনা ব্যস্ত শহররে শুধুই সুনসান নীরবতা। শুক্রবার (২০ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।



জানা গেছে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। বর্তমানে ওই রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০ হাজার ৪৮ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ হাজার ৪৩৭ জন।


ওই ভাইরাস বাংলাদেশেও আঘাত এনেছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ওই ভাইরাস শনাক্তা করা হয়। এরপর থেকে রাজধানীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ওই ভাইরাস মোবাকেলায় সরকারি ও বেসরাকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধের পাশাপাশি অনেক অফিসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ঢাকা শহর ছেড়ে রাজধানীবাসী গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে রাজধানীর বাসিন্দারা গ্রামে যাওয়া শুরু করেন। গতকাল পর্যন্ত অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গ্রামে অবস্থান করেন। ফলে রাজধানীর একটি বড় অংশ পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এ কারণে ঈদের সময় রাজধানী যে রকম ফাঁকা হয়ে যায়, সেই চিত্রই এখন ঢাকা শহরে।



রাজধানীর পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, ফার্মগেট, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের আনাগোনা একদম কম। এছাড়াও পাড়া-মহল্লার দোকান-পাটগুলো রয়েছে বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, করোনার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে বাড়ি চলে গেছেন অনেকেই।


শুক্রবার দুপুর ১২টায় তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা তুহিনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বিবার্তাকে জানান, করোনার জন্য তাদের এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে দুই একটি দোকান খোলা আছে। বন্ধ দোকানের মালিক ও বাকি কর্মচারীরা গ্রামে চলে গেছেন।


এরপর কথা হয় কারওয়ান বাজার এলাকায় পরিতোষ নামের একজনের সাথে। তিনি পেশায় মুচি। তিনি জানান, সকাল থেকে তিনি দোকান খুলে বসে আছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত মাত্র ৩০ টাকা ইনকাম হয়েছে। কেন এমন অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার জন্য এলাকার অনেকেই গ্রামে চলে গেছে। আর যারা ঢাকায় রয়েছে তারা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।



তেজতুরি বাজার এলাকার একটি ফ্লাট বাড়ির ম্যানেজার মনির মিয়া। তিনি জানান, তাদের বাড়িতে থেকে বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া গ্রামে চলে গেছেন। আর যারা রয়েছে তারা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। করোনা রোগে তাদের বাসার মালিকের পক্ষ থেকে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছে। বাসায় প্রবেশের আগে হাত পরিস্কার করে নিতে হচ্ছে।


রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি এলাকা হলো ফার্মগেট। ছুটির দিন ছাড়া ওই এলাকায় লোকজনের আনাগোনা বসচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু সেই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আগের মত আর কোনো ব্যস্ততা নেই সেখানে। হাতে গোনা কয়েকজন বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এছাড়াও বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।


এদিকে, করোনাভাইরাস রোধে সারা দেশের অনেক এলাকায় ভারি যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ না করা পর্যন্ত এসব পরিবহন ব্যবহারে যাত্রীরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।



সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, এই মুহূর্তে গণপরিবহন ব্যবহার সংক্রান্ত বিশেষ সতর্কতা প্রচারের পাশাপাশি গণপরিবহনকে জীবানুমুক্ত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই। বাস টার্মিনাল ও বাস স্টপেজ, রেল স্টেশন, লঞ্চ-টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাটের পাশাপাশি আকাশপথের সকল যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার বসিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি ভিত্তিতে করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।


বিবার্তা/খলিল/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com