শিরোনাম
সাকরাইনে রঙ্গিন পুরান ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:২২
সাকরাইনে রঙ্গিন পুরান ঢাকা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে পৌষ সংক্রান্তি। নানান রঙের ঘুড়ি উড়িয়ে পুরান ঢাকায় চলছে সাকরাইন উৎসব। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে করা হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা।


মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই চলছে পৌষ সংক্রান্তির এ উদযাপন। সবমিলিয়ে সাকরাইন উৎসব ঘিরে রঙিন হয়ে আছে পুরান ঢাকার আকাশ।


৪০০ বছরের প্রাচীন এই ঢাকায় এক সময় বিচিত্র সব বিনোদন আর উৎসবের প্রচলন ছিলো। আর এর বেশিরভাগই ছিল পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। সেই সময়কার নবাব, নায়েব-নাজিম বা প্রভাবশালী জমিদারদের হাত ধরে উৎসব উদযাপন করতো পুরান ঢাকার মানুষ। এ রকমই একটি উৎসবের নাম পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন।



পুরনো সেই ঐতিহ্য যত্নের সঙ্গে মিল রেখে এখনও পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উদযাপন করে পুরান ঢাকার মানুষ। প্রতি বছর ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি পুরান ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তি উৎসব পালিত হয়। তবে কালের স্রোতে এখন এই উৎসবে যোগ হয়েছে আধুনিকতা। চলতি বছরও এ উৎসব পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে।


পৌষ সংক্রান্তির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল আয়োজন ধরা হয় ঘুড়ি উড়ানোকে। সাধারণত সংক্রান্তির দিনে পুরান ঢাকার প্রায় সব বাড়ির ছাদেই ছেলে-বুড়োদের নাটাইয়ের সাহায্যে ঘুড়ি উড়াতে দেখা যায়। ঘুড়ির কাটাকাটি খেলার জন্য আরেকটা জিনিস ব্যবহার করা হয়। সেটি হচ্ছে সুতোয় ‘মাঞ্জা’ বা ধার দেয়া।


পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, শিংটোলা, কাগজীটোলা, গেন্ডারিয়া, ধূপখোলা, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে ছিলো নানা আয়োজন। এছাড়া বংশাল, শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, পাতলা খান লেন, প্যারী দাস রোড, শ্রীশ দাস লেন, গোপাল সাহা লেন, হেমেন্দ্র দাস রোড, পিসি ব্যানার্জী লেন, শিংটোলা, বানিয়া নগর, ফরাশগঞ্জ, বাংলাবাজার, গেন্ডারিয়া, ফরিদাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় সব বাড়ির ছাদে পালিত হচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি। যারা এই উৎসব পালন করছেন তাদের দলগুলোর আবার রয়েছে আলাদা আলাদা নাম।


কাইটারজ, বাকাট্টা, মাঞ্জা, রঙ-সুতা, কাইট কিং এমন বিভিন্ন নামে ছোট ছোট দলগুলো ভোর হতে না হতেই ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতিযোগিতা।আর এর ফাঁকে ফাঁকেই চলছে সাউন্ড সিস্টেমের গানের তালে তালে নাচানাচি-মাতামাতি, আনন্দ উল্লাস। সারাদিই ছিলো ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযাগিতা। কারো ঘুড়ি কাটা গেলেই বিরোধী পক্ষ ‘ভোকাট্টা ভোকাট্টা’ বলে উল্লাস করে।


বিকালে শুরু হয় সংক্রান্তির সবচেয়ে মূল আকর্ষণ। আয়োজকদের কেউ তখন ব্যস্ত হবে মুখে কেরোসিন হাতে মশাল নিয়ে আলোক প্রদর্শনীতে। কেউবা ব্যস্ত হবে আতশবাজি ফোটানোর কাজে। এসময়ে পুরান ঢাকার আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আলোর ফোয়ারা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে জাকজমকপূর্ণ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব।



পুরান ঢাকার সাকরাইনের গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গ্রুপ কাইটারজ। এই দলটি বিগত ১২ বছর ধরে পৌষ সংক্রান্তি উদযাপন করছে। আয়োজকদের একজন সদস্য আলিম খান বলেন, আমরা ১২ বছর ধরে সাকরাইন করছি। আমাদের সাকরাইনের মূল আকর্ষণ ফায়ার ওয়ার্কস। আমরা প্রতিবারই হাতে ৮ থেকে ৬ ফুট বড় বড় ঘুড়ি বানাই ডেকোরেশনের জন্য। এতে আমরা নিজেরাই হাতে ডিজাইন আঁকি ও রং করি।


গ্রুপের সদস্য সায়েম বলেন, হাতে বানানো ঘুড়ি ছাড়াও আমরা ১২ থেকে ৭ ফুট একটি লোহার ফ্রেম বানাই। তাতে আমাদের গ্রুপের নাম (কাইটারজ) লেখা হয় তার দিয়ে। সাকরাইনের দিন সন্ধ্যায় ট্যাংকির ছাদে মুখে কেরোসিন নিয়ে মশালে ফু দিয়ে আমরা লোহার এই ডামিতে আগুন জ্বালাই। দূর দূরান্তের ছাদ থেকে মানুষ এই ফায়ার ওয়ার্কস দেখে, যাতে আগুনে লেখা কাইটারজ স্পষ্ট বোঝা যায়।


এদিকে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ঘুড়ি, নাটাই, সুতো, সাজসজ্জার সরঞ্জাম, আতশবাজীসহ প্রায় সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে এখানে।


মাতৃভাণ্ডারের মালিক সুরেন সুর বলেন, গত মাস থেকেই সাকরাইনের সরঞ্জাম বিক্রি করছি, চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ঘুড়ি, নাটাই, সুতো, রঙ, মাঞ্জার সরঞ্জাম সবই বিক্রি করছি আমরা। প্রতিটি ঘুড়ি বিক্রি করছি ৫ থেকে ১০ টাকা আর নাটাই বিক্রি করছি ১৫০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।


বিবার্তা/আদনান/এসএ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com