শিরোনাম
কোয়েল পাখির খামারের আয়ে চলছে দুই ভাইয়ের পড়াশুনা
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:১২
কোয়েল পাখির খামারের আয়ে চলছে দুই ভাইয়ের পড়াশুনা
রংপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পড়াশুনার পাশাপাশি শখের বশে কোয়েল পাখি পালন করতেন রংপুরের তারাগঞ্জের কাঁচনা হাজিপাড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান ও তার ছোট ভাই মাহাবুল ইসলাম। মিজানুর রংপুর কারমাইকেল কলেজে মাস্টার্স এবং তার ছোট ভাই রবিউল রংপুর সরকারি কলেজ থেকে অনার্স করছেন। বর্তমানে এই খামারের আয়ে চলছে দুই ভাইয়ের পড়াশুনা।


রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দুরে মহাসড়কের কোল ঘেঁষে তারাগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। উপজেলা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দুরেই ইকরচালি ইউনিয়নের কাঁচনা হাজিপাড়া গ্রামে দুই ভাইয়ের কোয়েল পাখির খামারটি।


খামারি মাহাবুল ইসলাম জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার নিজের বাড়িতে ১০ফিট একটি ঘরে দশ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন কোয়েল পাখির খামার। এই খামার করে মাত্র ছয় মাসেই লাভবান হয়েছেন তিনি। ঘরের ভিতর কাঠ, বাঁশ ও নেট দিয়ে তিনটি ছোট খাঁচা তৈরি করেন। খাঁচা তৈরির কাজে তার খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। গাইবান্ধার থেকে তিন টাকা দরে ৩০০ বাচ্চা ফুটানোর ডিম কিনে আনেন। আর মেশিন আনেন ঢাকা থেকে। এরপর ফুটানো হয় কোয়েল পাখির বাচ্চা। ৩০০ ডিম থেকে ২০০ বাচ্চা বের হয়। এরমধ্যে ১০০টি পুরুষ বাচ্চা আর ১০০টি মেয়ে বাচ্চা। মিজানুর কয়েকটি বাচ্চা রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেন। আর মেয়ে বাচ্চাগুলো দিয়ে শুরু করেন কোয়েলের খামার। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।


তিনি জানান, এখন তার খামারে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোয়েল পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম দেয় প্রায় সাড়ে ৩০০ কোয়েল পাখি। প্রতিটি ডিম বিক্রি করা হয় ২ টাকা দরে। প্রতিদিন তার খামারে কোয়েল পাখির খাবার বাবদ খরচ হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। সঞ্চয় হয় প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।


মিজানুর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে জীব বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স ভর্তি হয়েছেন। শখের বসে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন। পড়া-শুনার পাশা-পাশি খামার থেকে আয় করে সহযোগিতা করছেন তার পরিবারকে। কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস সুস্বাদু খাবার। যা মানব দেহের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। এতে যে পরিমাণ খাদ্য পুষ্টি আছে তা অন্য কোনো মাংস ও ডিমে নেই।



মিজানুর রহমান জানান, কোয়েল পাখির খামার করে যে এভাবে এতো দ্রুত লাভবান হওয়া যাবে তা কখনো ভাবতে পারিনি। শখের বসে শুরু করে এই খামার থেকে আয় করে এখন আমি নিজেই পড়াশুনার খরচ চালিয়ে সংসারে সহযোগিতা করছি। আমার দেখে আরো কয়েকজন কোয়েল পাখির খামার করছে। তারা আমার কাছে মাঝে মাঝে এসে পরামর্শও নিয়ে যায়।


তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক বলেন, কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস সুস্বাদু খাবার। যা মানব দেহের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। এতে যে পরিমাণ খাদ্য পুষ্টি আছে তা অন্য কোনো মাংস ও ডিমে নেই। কোয়েলের মাংস ও ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম।


সিরাজুল হক বলেন, কোয়েলের ডিম হার্ট ডিজিজ, কিডনি সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, পাকস্থলী ও ফুসফুসের নানা রোগ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া, উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে সহযোগিতা করে। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম মানুষের শরীরে কিডনি, লিভার ও হৃদপিণ্ডের কার্য ক্ষমতা উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


তিনি বলেন, কোয়েল পাখির খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। এ খামার করতে তেমন খরচ হয় না। অল্প পুঁজিতে এই খামার করে অল্প দিনের মধ্যেই লাভবান হওয়া যায়।


বিবার্তা/সোহেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com