শিরোনাম
মিন্নি-নয়ন বন্ডের মেসেজ ঘিরে তোলপাড়
‘তুমি যদি রিফাতকে মারতে পার...’
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫৯
‘তুমি যদি রিফাতকে মারতে পার...’
বরগুনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মূল আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির কথোপকথনসহ মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর এ প্রযুক্তির কারণেই রিফাত হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছেন মিন্নি।


বরগুনা জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফোন নম্বরটি গোপনে ব্যবহার করতেন মিন্নি। নয়ন বন্ডই সিমটি মিন্নিকে দিয়েছিল। রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ নানা কারণে সিমটি মিন্নি গোপনে ব্যবহার করতেন। এছাড়া আরও কয়েকটি নম্বর দিয়েও নয়নের সঙ্গে কথা বলতেন মিন্নি।


হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৯টা আট মিনিটের সময় এ নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডকে কল দিয়ে ছয় সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর আবার সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটের সময়ও নয়ন বন্ডের দেয়া ওই নম্বরটি দিয়েই আবারও নয়ন বন্ডকে কল দেন মিন্নি।


এ সময় নয়ন বন্ডের সঙ্গে ৩৫ সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর ৯টা ৫৮ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে থাকা ওই নম্বরটিতে কল দেন। এ সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন হয় ৪০ সেকেন্ড। এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে কলেজের সামনেই রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে বন্ড বাহিনী।


হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটের সময় মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠায় নয়ন বন্ড। এরপর আবার বিকেল ৩টার সময় মিন্নিকে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে এক মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলে নয়ন বন্ড। তদন্তের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ব্যবহৃত নম্বরের কললিস্ট ও এসএমএস কন্টেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ।


এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে একটি এসএমএস পাঠায়। বিকেল ৪টার কিছু সময় আগে পাঠানো ওই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, ‘আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।’


মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়া সেই পুলিশ সদস্য বলেন, নয়ন বন্ডের এমন এসএমএস পাঠানোর রহস্য উদঘাটনে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আমরা মিন্নির সঙ্গে কথা বলেছি। তখন মিন্নি এ বিষয়ে আমাদের বলেছেন, রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনার সময় মিন্নি নয়ন বন্ডকে বলেছিলেন, তুমি যদি রিফাত শরীফকে মারতে পার, তাহলে বুঝব তোমারে তোমার বাপেই জন্ম দিছে।


মূলত মিন্নির এমন কথার উত্তর দিতেই রিফাতের মৃত্যুর পর নয়ন বন্ড মিন্নিকে ওই এসএমএসটি পাঠান। এ বিষয়টি আদালতে মিন্নি বলবেন বলে পুলিশকে জানালেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার সময় এ কথা লুকিয়ে যান মিন্নি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের এক সাক্ষী বলেন, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বরটি একসময় নয়ন বন্ড নিজেও ব্যবহার করত। পরে ওই নম্বরটি পরিবর্তন করে নয়ন বন্ড। মিন্নি মাদকাসক্ত ছিল। এ কারণেই সে নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখত। আর এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাত নয়ন বন্ড।


রিফাত শরীফের মাধ্যমেই মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের পরিচয়। নয়ন বন্ড ও মিন্নি উভয়ই মাদকসেবী হওয়ায় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হতে সময় লাগেনি।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, অভিযোগপত্র জমা দেয়ার জন্য বুধবার (১৪ আগস্ট) দিন ধার্য ছিল। প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় তিনি আদালতে তা দাখিল করতে পারেননি। তবে পরবর্তী তারিখ ২২ আগস্ট দাখিল করতে পারবেন বলে জানান।


মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল বুধবার। রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করলে ও বিচারক তা গ্রহণ করলে সেটিই চার্জশিট হিসেবে গণ্য হবে।


গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com