শিরোনাম
টাঙ্গাইলে বন্যা দুর্গত কৃষকদের দুর্বিষহ জীবন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৯, ১১:৩৮
টাঙ্গাইলে বন্যা দুর্গত কৃষকদের দুর্বিষহ জীবন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, কালিহাতি, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার উপজেলায় এবার বন্যায় অসংখ্য মানুষের বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।


বন্যার পানি বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা চলমান থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।


বন্যা কবলিত এলাকার আফাজ উদ্দিন শেখ (৫৫) বলেন, গরের মইদ্দে গলা পানি আছিল, বউ পোলাপাইন নিয়া যামু কুনু তাই সড়কের পাড়ে পলিথিন দিয়া গর বানাইয়া আছি এক মাস ধইরা। দিনে বেলায় মেলা গরম আর রাইতে বৃষ্টি অইলে মনয় পলিথিন উড়াইয়া নিয়া গেল। আমাগো কেউ দেখবার আহে না। একবার তিন দরা (১৫ কেজি) চাইল পাইছিলাম। এভাবেই নিজের দুঃখের বর্ণনা দেন।


তিনি বন্যার কারণে পরিবারবর্গ নিয়া টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে কালিহাতির সরাতৈল নামকস্থানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।


একইস্থানে ভাসমান অবস্থায় থাকা বর্গাচাষী আব্দুর রশিদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, এবার তিলের হাতে আমন বুনছিলাম। বন্যার পানিতে সব খাইয়া গেছে। এহন আমাগো চার ম্যায়া পোলা নিয়া চলাই কষ্ট। লাভতো অইলনা আবার মেলা লোকসান। এভাবেই বন্যায় অনেক পরিবার তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


যমুনা তীরবর্তী গড়িলাবাড়ী এলাকার লাইলী বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। আমরা গরিব মানুষ। বন্যায় কোনো মতে বেঁচে আছি। বাচ্চাদের নানা রকম রোগ ব্যাধি হইতাছে।


৭০ বছর বয়সী আলী বলেন, এহন পর্যন্ত আট বার বাড়ি পালটাইছি। নদীর তীরে দেখা হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী চরপৌলী গ্রামের মোশারফ হোসেনের (৬০) সাথে। তিনি বলেন, আমাদের শত বিঘা জমি ছিল। আমরা ছিলাম এলাকার বড় গিরস্থ। কিন্তু যমুনা নদীই আমাদের সর্বনাশ করে দিছে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় টাঙ্গাইলের সখিপুর ছাড়া ১১ টি উপজেলার ১৫ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফসলের মধ্যে রোপা আমন, বোনা আমন, আউশ, রোপা আমন বীজতলা, সবজি ও কলা উল্লেখযোগ্য। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৫৭ হাজার ৮১১ টি। ক্ষতির পরিমাণ ১৪১ কেটি ২৫ লক্ষ টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ভূঞাপুর উপজেলায়। ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান ৬৮৬ টি পুকুরের চাষির প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে এবারের বন্যায়।


একদিকে বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতি, অন্য দিকে তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত ভাঙন। গ্রামীণ রাস্তা ঘাট, অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হয়েছে ভীষণ ক্ষতি। বন্যার পরবর্তী সময় দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত রোগ। এবারের বন্যায় টাঙ্গাইলে কৃষকের স্বপ্ন ভেসে গেছে বন্যা জলে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেছেন। সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও করেন কৃষকরা।


এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিউল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলে স্থায়ীভাবে ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য ২১৯৩ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্পের প্রপোজাল তৈরি করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com