শিরোনাম
ছাত্রীর মায়ের জামিনদার হয়ে বিপাকে শিক্ষক!
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০১৯, ২১:২৫
ছাত্রীর মায়ের জামিনদার হয়ে বিপাকে শিক্ষক!
পারভীন আক্তার
পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নরসিংদীর পলাশে অসহায় এক পরিবারকে উপকার করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ৬ লাখ টাকার মিথ্যা মামলায় দিশেহারা নূরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক।


উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার গড়পাড়া গ্রামের রহমত উল্লাহর স্ত্রী পারভীন আক্তার নামে ঋণগ্রস্ত অসহায় মহিলার পক্ষে জামিনদার হয়ে প্রতারণার শিকার ওই শিক্ষক।


জানা যায়, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বালুচর পাড়া নামক গ্রামের মৃত সোলেমান মিয়ার ছেলে নূরুল ইসলাম দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। এই সুবাদে দুই বছর ধরে পারভীন আক্তারের স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে তাদের বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ায়। সেই সুবাদে পারভীন আক্তারের পরিবারের সদস্যদের সাথে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু পারভীন আক্তার শিক্ষক নূরুল ইসলামের সরলতার সুযোগ নিয়ে ঋণের বোঝা কমাতে নূরুল ইসলামকে অনুরোধ করে জামিনদার বানায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ। এসময় তিনি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি নামক একটি এনজিউর পলাশ শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তোলেন। সেই ঋণের টাকার জামিনদার বানিয়ে শিক্ষক নূরুল ইসলামের কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের একটি খালি চেক জামানত হিসেবে এনজিউতে জমা দেন।


হয়রানির শিকার শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, পারভীন আক্তারের স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে প্রায় দুই বছর তাদের বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়েছি। এসময় তার পরিবারের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। পারভীনের স্বামী রহমত উল্লাহ বিদেশ যাওয়ার সময় অনেক টাকা ঋণ করেন তিনি। কিন্তু স্বামী বিদেশ গিয়ে নিয়মিত টাকা না পাঠানোর কারণে মানুষের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সুদে টাকা নিয়ে আরো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তখন পরিবারটি মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে গিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। ওই সময় আমার প্রায় সাত মাসের প্রাইভেটের টাকাও বাকি পড়ে তাদের কাছে।


তিনি আরো বলেন, ঋণগ্রস্ত অসহায় পারভীন একদিন আমাকে অনুরোধ করে বলেন যে, স্যার আমি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তোলার একটি আবেদন করেছি। সেখানে আপনি জামিনদার হয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টের একটি খালি চেক জমা দিলে আমি ওই টাকাটা ঋণ তুলতে পারবো। তখন মানবিক দিক চিন্তা করে আমি জামিনদার হয়ে আমার জনতা ব্যাংকের একটি খালি চেক পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির নামে দিয়ে ওই অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতা করি।


পরে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে আমার জামিন নামায় তিনি ২ লাখ টাকা ঋণ তোলেন। ওই ঋণের টাকা তিনি সঠিকভাবে পরিশোধও করে। ওই সময়ের ভিতর খুলনার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে আমার চাকরি হয়। তখন থেকে আমি প্রাইভেট পড়ানো বাদ দিয়ে চাকরিতে চলে যাই। কিন্তু চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আমাকে না জানিয়ে পারভীন পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি থেকে আমার দেয়া জনতা ব্যাংকের খালি চেকটি তুলে এনে ওই চেকে ৬ লাখ টাকা লিখে চেকটি ডিজঅনার করায়। এসময় আমাকে কোনো লিগ্যাল নোটিশ না দিয়ে পারভীন চলতি বছরের ১১ জুলাই আমার নামে নরসিংদী আদালতে একটি মামলা করে।


ওই মামলাতে তিনি আরো উল্লেখ করে যে, আমি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি এনজিউ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছি না। পারভীন আক্তার পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির একজন সদস্য হওয়ায় তিনি পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক নূরুজ্জামানের অনুমতি পত্রের ক্ষমতাবলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু আমি তো ওই এনজিউ থেকে কখনো ঋণ-ই তুলিনি।


এ বিষয়ে পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক নূরুজ্জামান জানান, ২০১৮ সালে নূরুল ইসলামের জামিন নামায় ও জনতা ব্যাংকের একটি খালি চেক পেয়ে পারভীন আক্তারকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। ওই ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পারভীন আক্তার ওই চেকটি নিয়ে যায়। যেহেতু পারভীন আক্তারের ঋণের টাকা পরিশোধ হয়েছে। তাই তিনি চেকটি চাওয়া মাত্র আমরা দিয়ে দেই। কিন্তু ওই চেক নিয়ে তিনি যে নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমাদের এনজিউর নাম ভাঙ্গিয়ে মামলা করবে তা আমরা জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এ ব্যাপারে পারভীন আক্তারের মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন রান্নার কাজে ব্যস্ত আছি। এসব বিষয়ে পরে সরাসরি কথা বলবো, ফোনে বলা সম্ভব নয় বলে মোবাইল রেখে দেন।


বিবার্তা/জাহিদ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com